ঢাকা : ঠেকানো যাচ্ছে না দ্বৈত ভোটার হওয়ার প্রবণতা। এটি রুখতে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সর্বশেষ কোনো ছাড় না দিয়ে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাটি। ফলে দ্বৈত ভোটার হওয়ার প্রবণতা কমবে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে দ্বৈত ভোটার রয়েছেন ১ হাজার ৫৭ জন। ইতোমধ্যে মামলা দেওয়া হয়েছে ৫৫৬ জনের বিরুদ্ধে। আরো ২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। গত ১০ বছরে প্রায় ১০ লাখ নাগরিক দ্বৈত ভোটার হওয়ার চেষ্টা করেছেন।
সূত্রগুলো বলছে, করোনা কেলেঙ্কারিতে জড়িত ডা. সাবরিনা ও শাহেদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতির পর নড়েচড়ে বসে ইসি। সে সময় নির্বাচন কমিশনকে বেশ বিব্রতকর অবস্থাতেও পড়তে হয়।
তাই ভবিষ্যতে কেউ যেন কোনোভাবেই এনআইডি জালিয়াতি বা মিথ্যা দিয়ে একাধিকবার ভোটার হয়ে একাধিক এনআইডি নিতে না পারে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায় ইসি। তাই দ্বৈত ভোটার হওয়া যে ফৌজদারি অপরাধ, সে বিষয়টিও ব্যাপক প্রচারে আনতে চায় সংস্থাটি।
ইসির মাসিক সমন্বয় সভায় কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, দ্বৈত ভোটার হওয়া রোধে প্রচারণা নিয়ে পরিচালক (জনসংযোগে) এসএম আসাদুজ্জমানান বলেছেন, দ্বৈত ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে দণ্ডসমূহ ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারের বিষয়ে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এ বিষয়টি সারা বছরব্যাপী চলবে নাকি বিশেষ সময়ে শুধু ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় চলবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে সভায় এনআইডি মহাপরিচালক বলেন, এই প্রচার শুধু টিভি চ্যানেলে নয়, এর পাশাপাশি বিভিন্ন উপায়ে দণ্ড উল্লেখ করে লিফলেট, ব্যানারের মাধ্যমে প্রচারণা করতে হবে এবং জেলা ও উপজেলা পরিষদের মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভার আলোচ্য বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে ডিওলেটার দেওয়া যেতে পারে।
ইসির তৎকালীন সচিব মো. আলমগীরের গত ৩১ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত কার্যবিবরণীতে এ নিয়ে সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে জেলা ও উপজেলা পরিষদের মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভায় দ্বৈত ভোটার হওয়ার শাস্তির বিষয়টি আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগকে পত্রের মাধ্যমে নির্দেশনা পাঠানোর জন্য এনআইডি অনুবিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া প্রচারের বিষয়ে জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় এবং স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সম্পৃক্ত করে সারা বছর প্রচার কার্যক্রম চালানোর জন্য জনসংযোগ শাখাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নির্বাচন অফিসসমূহ থেকে লিফলেট বিতরণ ও স্থায়ীভাবে ব্যানার স্থাপনের সিদ্ধান্তও হয়েছে।
ভোটার আইন-২০০৯-এর ১৮ ধারা অনুযায়ী-তথ্য গোপন ও তথ্য গোপন করে দুবার ভোটার হওয়া ফৌজদারি অপরাধ। আইনে এ অপরাধের জন্য ছয়মাসের কারাদণ্ড বা দুই হাজার টাকার জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, অনেকেই না বুঝে দুবার ভোটার হন। সরল বিশ্বাসে যারা এই অপরাধটি করেন, তাদের এতদিন ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যতে এ সুযোগ হয়তো থাকবে না।
আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ইউনুচ আলী বলেন, ‘অনেকে অসৎ উদ্দেশ্যে দ্বৈত ভোটার হন। আবার কেউ কেউ বিষয়টিকে না জেনে-বুঝে বা একাধিক এলাকায় ভোটার হওয়ার প্রত্যাশায় হয়ে থাকেন। জনগণকে সচেতন করতে পারলে এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে শাস্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন করা গেলে এটা থাকবে বলে মনে হয় না।’
নির্বাচন কমিশনের এনআইডি উইংয়ের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা দুই লাখ সাত হাজার দ্বৈত ভোটার চিহ্নিত করেছি। এগুলো পর্যবেক্ষণ করছি। এসএমএস বা অন্য সম্ভাব্য পদ্ধতিতে নোটিফাই করা হয়েছে। দেখছি উদ্দেশ্য কী ছিল? যারা উদ্দেশ্যমূলক করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উদ্দেশ্য অসৎ না হলে মানবিক বিবেচনায় প্রথমটি রেখে দ্বিতীয়টি স্থায়ীভাবে ব্লকড করে দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ও দ্বৈত ভোটার ঠেকানোসহ জালিয়াতি বন্ধে তারা প্রযুক্তি উন্নতি করে নিরাপত্তাব্যবস্থা করার পাশাপাশি নজরদারি বাড়িয়েছেন উল্লেখ করে এনআইডির ডিজি বলেন, ‘আমরা এনআইডির সার্ভার শক্তিশালী ও এর নিরাপত্তা বাড়িয়েছি। আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুরো কাজ মনিটরিং করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোনো আইডি থেকে কতক্ষণ কী কাজ করা হচ্ছে- তা সংক্ষণের ব্যবস্থা থাকছে। এ ছাড়া কমিটি গঠন করে মাঠ প্রশাসনে ঝটিকা অভিযান শুরু করেছি।’
নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, দ্বৈত ভোটারের ক্ষেত্রে যেখানে অপরাধটি হচ্ছে বা যেখানে দ্বিতীয়বার ভোটার হচ্ছে সেখানেই মামলা হবে। এ নিয়ে কোনো জটিলতা নেই।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :