• ঢাকা
  • শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১

করোনার বছরে আত্মহত্যা সাড়ে ১৪ হাজার


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১৪, ২০২১, ১২:০২ পিএম
করোনার বছরে আত্মহত্যা সাড়ে ১৪ হাজার

ঢাকা : দেশে করোনা আক্রান্তের উপস্থিতি পাওয়ার পর থেকে গত এক বছরের মধ্যে আত্মহত্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।

গত বছরের ৮ মার্চ থেকে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে করা এক জরিপে দেখা যায়, এ সময়ে আত্মহত্যা করেছে ১৪ হাজার ৪৩৬ জন মানুষ। করোনা শুরুর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ১০ হাজারের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে বলে জানিয়েছিল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

দৈনিক সংবাদপত্র, হাসপাতাল ও পুলিশের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে জরিপটি করে আঁচল ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। তারা ৩২২টি আত্মহত্যার কেস স্টাডি বিশ্লেষণ করে আত্মহত্যাকারীদের বয়স, জেন্ডার ও আত্মহত্যার কারণ তুলে ধরে।

শনিবার (১৩ মার্চ) ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে আঁচল তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। জরিপে গত বছরের মার্চ থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত সময়কে এক বছর ধরা হয়েছে। সে হিসাবে ২০১৯ সালের তুলনায় এক বছরে আত্মহত্যা বেড়েছে ৪ হাজার ৪৩৬ জন। আত্মহত্যা বাড়ার এ হার ৪০ শতাংশ।

আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ পুরুষ ও ৪৩ শতাংশ নারী। ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সিরা সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে-আর্থিক অনটন, পড়াশোনা, পারিবারিক সম্পর্কজনিত জটিলতা, হতাশা ও বিষণ্নতা।

চিকিৎসকদের মতে, করোনাকালে জেন্ডার, সামাজিক শ্রেণির ভিন্নতায় পৃথক পৃথক ধরনের মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। কারো চাকরি নেই, কেউ স্বামী-সন্তান নিয়ে চিন্তিত, কেউ ব্যবসায়িক কারণে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। কেউ আবার নিজের শরীর, স্বাস্থ্য নিয়ে এতটাই চিন্তিত হয়ে পড়ছেন যে, তাদের মধ্যে মানসিক অবসাদ দেখা দিচ্ছে। আর সে অবসাদই ঠেলে দিচ্ছে আত্মহত্যার দিকে।

এ বিষয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনার কারণে অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। অনেকের আয় কমেছে। অনেকে ব্যবসা হারিয়েছেন। এ কারণে বিষণ্নতা ও মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। ফলে মানসিক রোগী বাড়ছে। তবে রোগী বাড়লেও চিকিৎসার বাইরে থাকছেন অনেকে।

মানসিক সমস্যা দেখা দিলে বিষয়টি রোগী প্রথমে বন্ধু বা পরিবারের লোকের সঙ্গে শেয়ার করে। অনেকেই সচেতন না হওয়ার কারণে তার অস্বাভাবিক আচরণকে গুরুত্ব না দিয়ে তার সঙ্গেই দুর্ব্যবহার করেন। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে ওঠে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক মোহিত কামাল বলেন, আত্মহত্যা ও আত্মহত্যার প্রবণতা একটি অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিষণ্নতার কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে। দৈনন্দিন জীবনের জটিলতা ও প্রযুক্তির প্রতি মানুষের আসক্তি বেড়েছে। ফলে প্রায় দুই দশকে আত্মহত্যার চিত্রের খুব একটা পরিবর্তন হয়নি (কমেনি)। অনেক সময় সামাজিক কারণে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন, যা মোটেই উচিত নয়। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

আত্মহত্যা রোধে আঁচল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-মানসিক রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো, আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিকে সাবধানে রাখা, হাতের কাছে ছুরি, কাঁচি, ওষুধ না রাখা, আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিকে একা না রাখা, আত্মহত্যার সতর্ক সংকেত সম্পর্কে জানা, গণমাধ্যমে দায়িত্বশীল প্রতিবেদন লেখা ও প্রকাশ করা, যথাসম্ভব আত্মহত্যার বিস্তারিত বিবরণ ও ধরন বর্ণনা থেকে বিরত থাকা, ক্রাইসিস সেন্টার ও টেলিফোন হটলাইন সারা দেশে চালু করা, আত্মহত্যা রোধে সমাজের সব স্তরের মানুষের এগিয়ে আসা, আত্মহত্যায় ব্যবহূত জিনিস সহজলভ্য না করা, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর নিয়োগ নিশ্চিত করা ও সরকারি উদ্যোগে আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিদের সহযোগিতার ব্যবস্থা করা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!