• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১
ঠাঁই নেই হাসপাতালে

পারিবারিক ভাবে বাড়ছে সংক্রমণের ঝুঁকি


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ২৯, ২০২১, ১২:২০ পিএম
পারিবারিক ভাবে বাড়ছে সংক্রমণের ঝুঁকি

ফাইল ছবি

ঢাকা : রাজধানীসহ সারা দেশে যে হারে করোনা রোগী বাড়ছে তার তুলনায় হাসপাতালে বেডের সংখ্যা খুবই কম। এজন্য অধিকাংশ করোনা রোগীকে বাসায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এতে বাড়ছে করোনা ছড়ানোর ঝুঁকি। ঘরেই একজন থেকে আরেকজনে করোনায় সংক্রমিত হচ্ছে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা ডেডিকেটেড হিসেবে তালিকাভুক্ত এবং তালিকাভুক্ত নয় এমন একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বেডের অভাবে প্রতিদিন রোগীদের ফেরত দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। আর সেসব রোগীর কারণে হুহু করে বাড়ছে পারিবারিক সংক্রমণ। বেড খালি না থাকায় বেসরকারি তিনটি ও সরকারি দুটি হাসপাতালে ভর্তি হতে চেয়েও পারেননি মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের বাসিন্দা সালমা সুলতানা। 

অগত্যা বাসাতেই করোনার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলো। কিন্তু মাকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে ছেলে তানভীর হায়দার এবং ছেলের বউ আফরোজা নাজনীনও হলেন সংক্রমিত। 

তানভীর বলেন, বেড পেলে মায়ের সঙ্গে আমিই হাসপাতালে থাকতাম। তাতে আমি হয়তো আক্রান্ত হতাম। কিন্তু আমরা স্ত্রী আফরোজা হতো না। এখন সে আক্রান্ত হওয়ায় আমাদের তিন ছেলে-মেয়েও ঝুঁকিতে পড়ল।

করোনা আক্রান্ত ৬৫ বছরের হারেস আলী। ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপও আছে। অবস্থা খারাপ হতে শুরু করলে পরিবার হাসপাতালে ভর্তি করাতে নিয়ে যায়। কিন্তু গত ২৫ মার্চ রাত ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত ৯টি হাসপাতাল খুঁজেও পায়নি একটি বেড। 

এই পরিবারের এক আত্মীয় জানান, স্কয়ার, ইমপালস, জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, ইবনে সিনা, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী, কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ঘুরেছি রাতভর। ভর্তি করাতে পারিনি আমাদের রোগী।

পেশায় ফিজিও থেরাপিস্ট এই ব্যক্তি বলেন, শুনছিলাম পরিস্থিতি খারাপ, কিন্তু এতটা খারাপ তা নিজের বেলায় না ঘটলে বুঝতাম না। পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। বলেন, স্বাস্থ্য খাতের সঙ্গেই যুক্ত রয়েছি। ভেবেছিলাম একটা বেড অন্তত ম্যানেজ করতে পারব; কিন্তু পারলাম না। অন্যদের কী ভোগান্তি হচ্ছে সেটা ভাবতেও পারছি না।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেজিস্ট্রার (সার্জারি) ডা. রাজীব দে সরকার বলেন, সরকারি-বেসরকারি কোভিড হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছে না। চাইলেও রোগী ভর্তি করানো যাচ্ছে না। আমি করোনাতে আক্রান্ত হলেও ভর্তি হতে পারব না। আমাদের হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে একটা বেডও খালি নেই।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, হাসপাতালে রোগীরা ভর্তি হতে না পেরে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এসব রোগীর পরিপূর্ণ আইসোলেশন বাসায় করা সম্ভব নয়। তাতে তাদের কারণে সংক্রমণ চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে। সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতিতে প্রতিরোধের দিকে সেভাবে নজরই দেওয়া হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিন পর পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। 

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটির সদস্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, একজন রোগীকে যখন আমরা হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছি, তখন নিশ্চিত বলা যায় তার মাধ্যমে আরো অনেকে সংক্রমিত হচ্ছেন। কারণ প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টাইন পদ্ধতির দুর্বলতাই এর বড় কারণ। এর জ্বলন্ত প্রমাণ সিলেটের হোটেল থেকে কোয়ারেন্টাইনে যারা ছিলেন তাদের উধাও হয়ে যাওয়া। তাদের সুপারভাইজ করা হচ্ছে না, যা খুব কঠোরভাবে হওয়ার কথা ছিল।

তিনি আরো বলেন, পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে যাবার আগে লাগাম টানার ব্যবস্থা করা দরকার, নয়তো সর্বনাশ হয়ে যাবে। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সবাইকে এখন যেভাবে হোক বাধ্য করা দরকার। আমাদের দেশে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করার প্রবণতা প্রচণ্ড। বইমেলাতে সবাই প্রবেশপথে মাস্ক পরে ভেতরে ঢুকছে। কিন্তু ভেতরে ঢোকার পর মাস্ক খুলে ফেলছে। সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই। মানুষ শুধু গেট পার হওয়ার জন্যই মাস্ক নিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে হাসপাতাল থেকে রোগীরা যে ফেরত যাচ্ছে এটাও রাষ্ট্রের বড় একটা দায়িত্ব। ঢাকায় এমনিতেই অনেক মানুষের আইসোলেশনে থাকার জন্য আলাদা রুমসহ অন্য সুবিধা নেই। বলা যায় সরকারি সুবিধার অভাবই তাকে বাধ্য করল ভাইরাস ট্রান্সমিশন করার জন্য। রোগী কিন্তু এসেছিল আমাদের সাহায্যের জন্য। আমরাই তার জন্য কিছু করতে পারিনি।

মহামারী বিশেষজ্ঞ ও রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, একজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির যদি সঠিক আইসোলেশন ব্যবস্থা না হয়, তবে তার পুরো পরিবার আক্রান্ত হতে পারেন। এজন্যই প্রতিদিন আক্রান্তের হার বাড়ছে। আর এসব রোগী যদি পরে গণপরিবহনে একবারো যাতায়াত করে তবে অবস্থা কোন পর্যায়ে যাবে তা আর বলা অপেক্ষা রাখে না। প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলশন বাড়াতে হবে। প্রতিটি স্কুল-কলেজ-কমিউনিটি সেন্টারে, যেখানে কমিউনিটি আইলোশন সেন্টার হতে পারে এবং হাই-ফ্লো অক্সিজেন দেওয়া যেতে পারে সেখানেই এমন ব্যবস্থা করতে হবে।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!