• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

বয়স মানছে না আফ্রিকান ধরন


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২১, ২০২১, ০১:১০ এএম
বয়স মানছে না আফ্রিকান ধরন

ঢাকা : দেশে করোনা সংক্রমণে মৃত্যু প্রতিদিনই বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া মানে মৃত্যুও বেড়ে যাওয়া।

দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় সক্রমণ রোধে সারা দেশে গত ৫ এপ্রিল থেকে চলছে লকডাউন। এতে সংক্রমণের মাত্রা কিছুটা হলেও কমেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা কমলেও এ থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই-এমনটাই বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

গত বছর সারা বিশ্বের করোনার প্রকোপ দেখা দিলে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বয়স্কদের আক্রমণের ঝুঁকি বেশি। কিন্তু বর্তমানে করোনার যে ভ্যারিয়েন্ট চলছে তা কোনো বয়স মানছে না।
ন্যাশনাল টেলিহেলথ সেন্টারের প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে আক্রান্তদের বেশির ভাগই তরুণ এবং মধ্য বয়সি। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটও (আইইডিসিআর) একই তথ্য জানায়। করোনায় মৃতদের বেশির ভাগই ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি হলেও তার সঙ্গে বর্তমান যুক্ত হয়েছেন ৪০ বছরের বেশি বয়সিরা।

তাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ৪০ বছরের বয়সিদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

এদিকে টানা চার দিন পর দেশে মৃত্যুর সংখ্যা এক শর নিচে নেমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে ৯১ জনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ১০ হাজার ৫৮৮ জনের। নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৫৫৯ জন। সবমিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২৭ হাজার ৭৮০ জনে।

মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও মহামারী বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া মানে মৃত্যু বেড়ে যাওয়া। সংক্রমণের যে গতি-প্রকৃতি তাতে রোগতাত্ত্বিক ব্যবস্থা নেওয়া হলে তার ইফেক্ট পাওয়া যায় দুই সপ্তাহ পর। আর মৃত্যু হারের প্রভাব বোঝা যাবে তিন সপ্তাহ পরে।

সে হিসাবে এখন যে সংখ্যক সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে, তাতে গড়ে তারা দুই সপ্তাহ আগে আক্রান্ত হয়েছেন। আর এখন যাদের মৃত্যু হচ্ছে, তারা তিন সপ্তাহ আগে আক্রান্ত হয়েছেন। সরকার যে কঠোর বিধিনিষেধের ব্যবস্থা নিয়েছে, তাতে করে মৃত্যুর হার খুবই ধীরে ধীরে নামবে। আরো তিন সপ্তাহ পরে এর একটা স্পষ্ট হিসাব আসবে। তবে যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানা হয়, সেটা ফের লাফ দিয়ে বাড়বে। মৃত্যুর নিম্নগামিতা আমরা দেখতে পাব ১৪ এপ্রিলের তিন সপ্তাহের মাথায়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে দায়িত্বরত একজন চিকিৎসক নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে দৈনিক মৃত্যু হার ২০০ পার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যখন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্যাপাসিটি রোগী ম্যানেজমেন্ট করতে না পারে, তখন মৃত্যু বাড়বেই।

একজন রোগী হাসপাতালে আসার পর যদি ভালো কেয়ার পান, অনেক বেশি খারাপ না, আবার বেশি ভালো নয়-এ ধরনের রোগীদের যদি দ্রুত ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করা যায়, আইসোলেট করে ফেলা যায়, তাহলে কমিউনিটি সংক্রমিত হবে না এবং রোগীও চিকিৎসা পাবেন।

কিন্তু যখন সব হাসপাতাল ওভারলোডেড হয়ে যায়, ক্যাপাসিটি ওভারফ্লো হয়ে যায়, তখন মানুষ ঘুরতে থাকে বেড না পেয়ে। হেলথ সিস্টেমের এই ক্যাপাসিটি ইতোমধ্যেই ওভারফ্লো হয়ে গেছে। এ জন্য মৃত্যুও বাড়ছে। সেই সঙ্গে নতুন ভ্যারিয়েন্ট এসেছে। এটি খুব দ্রুত সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। আর এসব ভ্যারিয়েন্ট কেবল দ্রুত সংক্রমণই ছড়ায় না, জটিলতাও বাড়ায়।

পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল বলেন, হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে অনেকের মৃত্যু হচ্ছে। তাই এখন একটা সমন্বিত পরিকল্পনা করতে হবে। একই সঙ্গে বাসায় যারা মারা যাচ্ছেন অথবা পরীক্ষা না করিয়ে মারা যাচ্ছেন, তাদের রিপোর্টিং হচ্ছে না। অনেকে উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছেন সেটাও রিপোর্টিং হচ্ছে না।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ২১ শতাংশ মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হন শুধুমাত্র জ্বর এবং কাশি নিয়ে। এই মানুষগুলো যদি না ভর্তি হতেন, তাহলে ২১ শতাংশ বেড যেগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে, সেগুলো খালি রাখা যেত ক্রিটিক্যাল রোগীদের ভর্তি করার জন্য। তাতে করে করোনা রোগীরা চিকিৎসা পেতেন। চিকিৎসা পেলে মৃত্যু কমত।

অন্যদিকে ন্যাশনাল টেলিহেলথ সেন্টারের গত ১৬ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ বলছে, বর্তমানে আক্রান্তের দিক থেকে প্রথম সারিতে আছেন ২৫-৩৪ বছর বয়সের তরুণ-তরুণীরা। এরপর আছে ৩৫-৪৪ বছর বয়সি এবং ৪৫-৫৪ বছর বয়সিরা।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এক দিনে শনাক্তের প্রায় ৬৯ শতাংশ পাওয়া গেছে ১৯ থেকে ৪৮ বছর বয়সিদের মধ্যে। ২৭ শতাংশ পাওয়া গেছে ৪৯ বছরের ওপরে এবং ৪ দশমিক ২ শতাংশ শূন্য থেকে ১৮ বছর বয়সিদের মধ্যে। অর্থাৎ তরুণ এবং মধ্য বয়সিরা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি।

গত বছরের জুলাই মাসে যখন মৃত্যু হার সর্বোচ্চ ছিল তখন নারী পুরুষের মৃত্যু হারের অনুপাত ছিল ১:৩.৫ (২২৬/৯৮২)। চলতি বছরের এপ্রিলে সেটি দাঁড়িয়েছে ১:২.২৩ (২৬৩/৬১৪)। অর্থাৎ গত বছর তুলনায় এবার নারী অধিক হারে মারা যাচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যুর ৫৬ দশমিক ৪৩ শতাংশই ষাটোর্ধ্ব। এ ছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে আছে ২৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১১ দশমিক ১২ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ দশমিক ৮৬ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে শূন্য দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ। গত ৬ দিনে গড়ে মারা গেছেন ১০১ জন। আক্রান্তদের ৩৬ শতাংশ ডায়াবেটিস, ৩৬ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগ আছে। এ ছাড়া শ্বাসকষ্ট ছিল ১২ শতাংশের, কিডনি রোগ ছিল ৩ শতাংশের এবং অন্যান্য রোগ ছিল ৯ শতাংশ।

সরকারের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য ও জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল বলেন, সাউথ আফ্রিক্যান ভ্যারিয়েন্ট তরুণদের বেশি সংক্রমিত করে। কিন্তু করোনাতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর তালিকায় ষাটোর্ধ্বদের বেশি থাকার কারণ হচ্ছে তারা আগে থেকেই অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত। অন্যান্য অসুখে ভোগার কারণে তাদের টিকে থাকাটা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!