• ঢাকা
  • বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪, ২৭ কার্তিক ১৪৩১

কঠোর লকডাউন: দুর্ভোগ নিয়ে রাজধানী ছাড়লেন লাখো মানুষ


নিজস্ব প্রতিনিধি জুলাই ১, ২০২১, ১১:০৯ এএম
কঠোর লকডাউন: দুর্ভোগ নিয়ে রাজধানী ছাড়লেন লাখো মানুষ

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা : কঠোর লকডাউন খবরে প্রতিদিনই লাখ লাখ মানুষ রাজধানী ছাড়া শুরু করেন। আর কঠোর লকডাউনের আগের দিন গাবতলী, সায়েদাবাদ, শনিরআখড়া ও বিভিন্ন ফেরিঘাটে নামে মানুষের স্রোত। ঢাকা ছেড়ে যাওয়া এসব মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রধানত তিনটি কারণে ঢাকা ছাড়ছেন তারা। এগুলো হলো-কাজ না থাকা, লকডাউনের সময়সীমা বৃদ্ধির শঙ্কা ও আসন্ন ঈদুল আজহা।

এদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বেশ কয়েকগুণ টাকা খরচ করে ভোগান্তির শিকার হয়ে ফেরিঘাট পর্যন্ত পৌঁছাতে হয়েছে মানুষকে। তবে ফেরিতে নির্বিঘ্নেই নদী পার হতে পেরেছেন তারা।  অন্যদিকে যারা রাজধানীতেই থাকছেন তারা ব্যস্ত সময় কাটান শেষ মুহূর্তে নিত্যপণ্য কেনাকাটায়। এতে রাজধানীর বাজারগুলোতে গতকাল ছিল উপচে পড়া ভিড়। এই সুযোগে বিক্রেতারাও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন পণ্যের দাম।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে সারা দেশে শুরু হচ্ছে এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউন, যদিও গত সোমবার থেকেই চলছে সীমিত লকডাউন। এ কারণে গণপরিবহন-শপিংমল বন্ধ রয়েছে। তবে সাধারণ মানুষ মনে করছে লকডাউনের সময়সীমা আরো বাড়তে পারে। এ কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১ জেলার বিপুলসংখ্যক মানুষ লকডাউন শুরু আগের দিন বাড়ি যেতে শুরু করে। তাদের ধারণা, আগামী ২১-২৩ তারিখের মধ্যে ঈদুল আজহা। যে হারে সংক্রমণের বাড়ছে তাতে লকডাউন কমপক্ষে এক সপ্তাহ বাড়ানো হতে পারে। এর পরই তৃতীয় সপ্তাহ থেকে যেহেতু ঈদুল আজহার বন্ধ শুরু হবে, তাই অনেকেই এই ভাবনাগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে পরিবার-পরিজনসহ গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। অনেকে আবার ঈদের আগে গ্রামের বাড়ি যাওযায় ঝক্কি কমাতে পরিবারের সব সদস্যকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে নিজে রয়ে গেছেন রাজধানীতে। গ্রামমুখী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে কথা বল্লে এমনটাই জানিয়েছেন তারা।

পাটুরিয়া ঘাটে কথা হয় বনানীর একটি শপিংমলের কর্মচারী ইউসুফের সাথে। তিনি জানান,লকডাউনের কারনে মার্কেট বন্ধ। যে হাওে সংক্রমণ বাড়ছে এতে লকডাউন আরো দীর্ঘায়িত হতে পারে। মার্কেট কবে খুলবে তারও ঠিক নেই। আবার ঈদের আগে আগে বাড়ি পৌঁছাতে পারবেন কি না আছে সেই শঙ্কাও। তাই দুর্ভোগ মাথায় নিয়েই পরিবার নিয়ে রওনা করেছেন। এতে একটু কষ্ট হলেও আগেভাগে গ্রামে ফিরে যাওয়াই ভালো। তিনি আরো বলেন,পরিবারের সবাই মিলে কষ্ট-আনন্দ যেটাই হোক, লকডাউনে একসঙ্গে থাকতে পারবেন এটাই তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে বহুদিন বাড়িতে বেশি দিন থাকাও হয় না। এই সুযোগে পরিবারের সবাইকে সময়ও দিতে পারবেন, পাশাপাশি গ্রামের নির্মল বাতাসে কয়েকটা দিন কাটানোও যাবে বলে জানান তিনি।

এদিকে শুধু গতকালই নয় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া, মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া  নৌপথে গত কয়েক দিন ধরেই ঢাকা ছেড়ে আসা মানুষের আনাগোনা বাড়ে। তবে ঘাট এলাকায় গতকাল দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি মানুষ। সকালে দৌলতদিয়া ঘাটে সরেজমিনে দেখা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মানুষেরা প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মাহেন্দ্রের মতো ছোট ছোট যানবাহনে করে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে নামছেন। আবার অনেকে মোটরসাইকেলে করেও আসছেন। তবে ঘাটে আসতে এসব মানুষকে পার হতে হয়েছে পুলিশের চেক পোষ্ট। তাই এক চেকপোস্ট থেকে অন্য চেকপোস্ট পর্যন্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ভেঙে ভেঙে আসতে হয়েছে মানুষকে। ঢাকা থেকে সিএনজি না আসলেও ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পোস্তগোলা সেতু থেকে সিএনজি চলছে। ঘরমুখো যাত্রীরা পোস্তগোলা সেতু পর্যন্ত হেঁটে অথবা রিকশায় চড়ে এসে তারপর ভেঙে ভেঙে সিএনজি ও অন্যান্য ছোট যানবাহনে শিমুলিয়া ঘাটে আসেন। এতে চরম ভোগান্তিসহ অধিক ভাড়া গুনতে হয় তাদের।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের তরা এলাকায় কথা হয় ফরিপুরগামী যাত্রী আইয়ুব আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় একটি শপিংমলে চাকরি করি। কঠোর লকডাউনে বন্ধ থাকবে শপিংমল, কাজকর্মও নেই। ঢাকায় থেকে কী করব? এই কঠোর লকডাউন ঈদের আগে শেষ নাও হতে পারে। এ জন্য স্ত্রী সন্তান নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। তবে সড়ক পথে বাস না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে বলে জানান তিনি।  

তবে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক থাকায় পদ্মা পাড়ি দিতে বেশি সময় ঘাটে অপেক্ষা করতে হয়নি কাউকে। ঢাকামুখী যাত্রীরাও গতকাল বাংলাবাজার থেকে শিমুলিয়ায় ফেরিতে পার হয়েছেন নির্বিঘ্নে। তবে ঘাট এলাকা ও ফেরিতে মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব। অনেকের মুখে মাস্কও দেখা যায়নি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের  সুপারিনটেনডেন্ট বশির আহমেদ জানান, এই নৌরুটে এখন ১৫টি ফেরি চলছে। কঠোর বিধিনিষেধের ঘোষণায় ঘাটে মানুষের চাপ থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী চাপ কমে যায়।

বিআইডব্লিউটিসি’র আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ১৬টি ফেরির মধ্যে ১২টি চলাচল করছে। এসব ফেরিতে যাত্রী, পণ্যবাহী গাড়ি, ব্যক্তিগত ছোটগাড়ি ও জররি সেবায় নিয়োজিত গাড়ি পারাপার করা হয়। যানবাহনের পাশাপাশি যাত্রীরাও ফেরিতে ওঠে পড়ছেন। তবে সড়ক পথে কিছুটা ভোগান্তি হলেও ঘরমুখী এসব মানুষ নৌপথে স্বস্তিতেই পারাপার হতে পেরেছেন। 

বাজারে ভিড় : সপ্তাহব্যাপী লকডাউনের পূর্বদিন রাজধানীর বাজারগুলোতে ছিল ক্রেতাদের বেশ ভিড়। শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা করতে অনেকেই এদিন ভিড় করেন কাঁচাবাজরগুলোতে, যদিও গত ২/৩ দিন ধরেই বাজারে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ক্রেতাদেও উপস্থিতি বেশী ছিল বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। গত কয়েকদিন চাল, ডাল, তেলসহ মসলাসহ শুকনো পণ্যের বেশি বেচাকেনা হলেও গতকাল মাছ-মাংস, ফল, শুকনো খাবারের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় ছিল বেশি।

মিরপুর-১ নম্বরের মাছ ব্যবসায়ী ফজলু মণ্ডল বলেন, আজ (গতকাল) বাজারে গত ২/৩ দিনের তুলনায় ক্রেতা অনেক বেশি। মাছের দামও গত কয়েকদিন ধরে বেশি বলে জানান তিনি। চাষের রুই মান বেদে ২০ তেকে ৬০ টাকা, সিং ও মাগুর ১০০টাকা পর্যন্ত, পাঙাশ ২০ থেকে ৪০ টাকা, চিংড়ি আকারভেদে ২০ থেকে ৫০ টাকা দাম বেড়েছে। মুরগি ব্যবসায়ীরাও জানিয়েছেন চাহিদা বাড়ায় সব ধরনের মুরগির দাম ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বাজাওে কথা হয় মাসুম হোসেন নামে এক ক্রেতার সাথে। জানালেন, লকডাউনের কারেন যেহেতু এক সপ্তাহ বাসার বাইরে বের হওয়া যাবে না তাই মাছ-মাংসসহ কিছু কেনাকাটা সেরে নিতে বাজারে এসেছেন। এর আগে চাল-ডালসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী কিনে ফেলেছেন বলে জানান তিনি।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!