• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শঙ্কায় খামারি ও ব্যবসায়ীরা


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ২, ২০২১, ১২:২৩ পিএম
শঙ্কায় খামারি ও ব্যবসায়ীরা

ঢাকা : দেশজুড়ে চলছে কঠোর লকডাউন। অথচ কোরবানি ঈদের বাকি মাত্র ২০ দিন। স্বাভাবিক সময়ে দেশজুড়ে শুরু হয়ে যেত ঈদের আমেজ। কিন্তু বিগত দুবছর করোনা মহামারিতে সব হিসেবনিকেশ পাল্টে গেছে। করোনার দীর্ঘ আঘাতে আয় কমেছে দেশের অধিকাংশ মানুষের। এরই মধ্যে সবচেয়ে বড় আর্থিক লেনদেনের উৎসব ঈদুল আজহার বিশাল বাণিজ্য নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা।

এই ঈদকে ঘিরে কোরবানির জন্য বিক্রির অপেক্ষায় থাকা ১ কোটি ২০ লাখ পশুর খামারি ও কৃষকের দিন কাটছে হতাশায়। আর পশু ছাড়া চামড়া শিল্প, ট্যানারি, ফ্রিজ-রেফ্রিজারেটর, ফ্যাশন, মসলাসহ ঈদকে ঘিরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। তাই ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কা করছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি রোধে লকডাউন জরুরি। তবে বিশাল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বড় ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না। এ জন্য সরকারকে সরবরাহ ব্যবস্থা শক্তিশালী করার পাশাপাশি মানুষের হাতে নগদ টাকা সরবরাহের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, জীবন বাঁচানোর প্রশ্নে এই ক্ষতিটা মেনে নিতে হবে। কৃষক, খামারিদের যেন বড় ক্ষতি না হয় সেজন্য সাপ্লাই চেইন মসৃণ করতে হবে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এবারে কোরবানির জন্য ১ কোটি ১৯ লাখ ১৭ হাজার পশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে ৪৬ লাখ গরু ও ৭৩ লাখ ছাগল-ভেড়া। সারা বছর বিনিয়োগ ও কায়িক শ্রমে কোরবানির জন্য এসব পশু বড় করেছেন খামারি ও কৃষকরা। কিন্তু দীর্ঘ মহামারির কারণে অনেকের আয় কমে গেছে।

মধ্যবিত্ত অনেকেই যারা পশু কোরবানি দেন, এবার তারা নাও দিতে পারেন। এতে পশু বিক্রি কম হলে পশুর দামও কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে খামারিদের মধ্যে।

একই সঙ্গে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের ঘোষণায় এ অনিশ্চয়তা আরো বেড়েছে তাদের মধ্যে। সাধারণত ঈদের প্রায় এক মাস আগে থেকেই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাটগুলোতে নিয়মিত বেপারি-ফড়িয়াদের আনাগোনা শুরু হয়। ঈদের ১৫ দিন আগে এটি পুরোপুরি জমে ওঠে। মানুষ সশরীরে হাটে গিয়ে পছন্দ করে পশু কিনে থাকে। শুধু পশুকেন্দ্রিকই ৩৫-৪০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে কোরবানির হার অনেক কমে যাবে, একই সঙ্গে কমবে এটিকে কেন্দ্র করে অর্থনীতির অন্যান্য খাতের স্বাভাবিকতাও। পশু কোরবানির সঙ্গে অর্থনীতিতে চামড়ার ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে।

ব্যবসায়ীদের মতে, প্রতি বছর দেশে দেড় কোটিরও বেশি পশুর চামড়া পাওয়া যায়। এর প্রায় ৮০ শতাংশই আসে কোরবানির পশু থেকে।  

চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ খাতের মূল বাজার ৪-৫ হাজার কোটি টাকার। কিন্তু এর সঙ্গে জড়িত অন্যান্য বাজারসহ এ খাতে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে বিশাল এ অর্থনীতির বড় ক্ষতির পাশাপাশি এর সঙ্গে যুক্ত কয়েক লাখ মানুষের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে তাদের দাবি।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ বলেন, করোনার কারণে চাহিদা না থাকায় ট্যানারিগুলোতে এখনই ৫০০-৬০০ কোটি টাকার চামড়া জমে রয়েছে। এমতাবস্থায় করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে নতুন করে চামড়া কেনা কঠিন হবে ট্যানারি মালিকদের।

চামড়ার মতো কোরবানীর আরেক বড় বাজার পেঁয়াজ-রসুনসহ গরম মশলার বাজার। প্রতিবছর দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। রসুনের চাহিদা ৫ লাখ টন, আদা ৩ লাখ টন। এর উল্লেখযোগ্য অংশই কোরবানিতে ব্যবহার হয়। অন্যদিকে গরম মসলা, বিশেষ করে এলাচি, দারচিনি, লবঙ্গ, জিরা, তেজপাতার বড় অংশ ঈদের রান্নায় ব্যবহূত হয়।

কোরবানি ঈদেই এসব পণ্যে অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয় বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের চাঁদপুর স্টোরের স্বত্বাধিকারী সোহানুর রহমান বলেন, কোরবানির ঈদেই মশলা জাতীয় পণ্যের বড় অংশ বিক্রি হয়। করোনার কারণে গত বছরও বিক্রি অনেক কম হয়েছিল। কঠোর লকডাউনের কারণে এবার তা আরো কমে যেতে পারে।

শঙ্কা বাড়ছে ফ্যাশন ও রেফ্রিজারেটর বাজারেও। কয়েক বছর ধরেই দেশে বাড়ছে রেফ্রিজারেটরের বাজার। বর্তমানে প্রায় ৬ হাজার কোটি ছাড়িয়েছে ফ্রিজের বাজার। ঈদুল আজহার সময় রেফ্রিজারেটর ও ডিপ ফ্রিজ বা ফ্রিজারের বাজার থাকে চাঙা। কারণ, কোরবানির মাংস সংরক্ষণে ফ্রিজ বেশ কাজে লাগে। তবে লকডাউন শঙ্কায় ফেলেছে ফ্রিজ উৎপাদকদের।

দেশে রেফ্রিজারেটরের বাজারে ৭০ শতাংশ বাজার অংশীদারিত্বের ওয়ালটন রেফ্রিজারেটরের ফ্রিজ ডিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনিস মল্লিক বলেন, মোট বিক্রির প্রায় ৪০ শতাংশই ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে হয়। নানা অফারও দেয়া হয় এই সময়টাতে।

পোশাক ও ফ্যাশনকেন্দ্রিক কেনাকাটা মূলত ঈদুল ফিতর নির্ভর। তবে উৎসবের কারণে ফ্যাশন সামগ্রীর অন্তত ১০ শতাংশ লেনদেন হয়ে থাকে কোরবানীর ঈদে। আগের বছর ব্যবসা হারিয়ে এবার একটু বেশি আশা করলেও ‍তাতে গুঁড়েবালি ব্যবসায়ীদের।

বাংলাদেশ ফ্যাশন ডিজাইনার অ্যসোসিয়েশনের সভাপতি ও অঞ্জনসের স্বত্বাধিকারী শাহীন আহমেদ বলেন, আগের সব উৎসব মিস করে কয়েক হাজার কোটি ক্ষতি হয়েছে লোকাল ফ্যাশন হাউসগুলোর। ঈদে বড় প্রস্তুতি না থাকলেও আশা ছিল সবারই। ফ্যাক্টরি, শোরুম, মাল সাপ্লাইয়ার, তাঁত শ্রমিক, সেলাইকর্মীসহ ৫ লাখের বেশি লোক জড়িত। এদের ৮০ শতাংশ নারী। করোনা সবার জীবন থমকে দিল।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!