ঢাকা : ঈদুল আজহা এলেই চাহিদা বেড়ে যায় কসাই বা মাংসশ্রমিকদের। এ সময় পেশাদার কসাইয়ের কদর ও পারিশ্রমিক বেড়ে যায় বহুগুণ।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, এবার ঈদুল আজহায় কোরবানির যোগ্য ১ কোটি ১৯ লাখ পশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার গরু-মহিষ, ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার ছাগল ও ভেড়া এবং চার হাজার ৭৬৫টি উট-দুম্বা বিক্রির উপযুক্ত।
গত ঈদে দেশে ৯৫ লাখের মতো পশু কোরবানি হয়েছিল, এ বছর যদিও দেশে কোরবানির পশুর চাহিদা ১ কোটি ১০ লাখ। ৯ লাখ পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে।
কোরবানির পশুর তুলনায় কসাইয়ের সংখ্যা অনেক কম। এতে অনেক চামড়া নষ্ট হয়। রাজধানীতে প্রায় ৫ লাখ গরু কোরবানি হয়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, এবার যথাযথভাবে গবাদি পশু জবাই দিতে ১২ হাজার ৩৪০ জন নিয়মিত কসাইকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মৌসুমি কসাইদের মধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার ১৪০ জনকে।
ঈদের দিন কাজের চাপ থাকায় সবার মন রক্ষা করাও কঠিন হয়ে পড়ে কসাইদের। তাই বেশিরভাগ মানুষ ঈদের আগেই যার যার পছন্দ অনুযায়ী কসাই ঠিক করে ফেলেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সবাই চান ঈদের নামাজের পরপরই কোরবানি সেরে ফেলার। তাই কসাইয়ের চাহিদা সকালের সময়টায় বেশিই থাকে।
কসাইয়ের দর বা পারিশ্রমিক নির্ভর করে কখন পশু জবাই হবে তার ওপর। পশুর দামের পাঁচ ভাগের এক ভাগ দিতে হয় কসাইয়ের মজুরি। এ দাম সকাল থেকে দুপুরের আগ পর্যন্ত। এর পর বেলা যত বাড়বে ততই কমবে তাদের মজুরি।
পেশায় মাংস বিক্রেতা যিনি কোরবানির সময় কসাইয়ের কাজ করেন এমন একজন জানান, সাধারণত ঈদের দিন খুব সকাল থেকেই তাদের ব্যস্ততা শুরু হয়। সকালে কেউ গরু জবাই ও কাটাকুটি করতে চাইলে তাদের মোট পশুর দামের ওপর প্রতি হাজারে ২০০ টাকা দিতে হবে। এ টাকায় একজন কসাই গরু জবাই থেকে শুরু করে চামড়া ছাড়ানো, হাড় থেকে মাংস ছাড়িয়ে গোস্ত ছোট করে কাটা, হাড়গুলো ছোট ছোট করে কেটে দেয়া, নাড়িভুঁড়ি পরিষ্কারসহ একেবারে সব কাজ করে দেবে।
তিন থেকে চার মণ মাংস হবে, এমন একটা গরুর জবাইয়ের কাজ দুই জন কসাই এক ঘণ্টায় শেষ করতে পারেন।
মহাখালি কাঁচা বাজারের মাংস বিক্রেতা মফিজুল ইসলাম, যিনি কসাই হিসেবে কাজ করে থাকেন, বলেন, ‘হাজারে ২০০ টাকা দিবেন, আর বইসা থাকবেন, কোনো কাম করতে হইব না। গরু মাঝারি অইলে এক ঘণ্টা সময় দিবেন, আর বড় অইলে দুই ঘণ্টা।’
তিনি জানান, দুপুর ১টা থেকে দেড়টার দিকে কাজ করালে তিনি হাজারে ১২০ টাকা নেন। আর বিকালে পশু জবাই হাজারে ১০০ টাকা।
ঈদের দিনের বেশিরভাগ সময়টাই ইতোমধ্যে বায়না হয়ে গেছে অধিকাংশ কসাইয়ের। কেউ কেউ বিকেলের দিকে সময় দিতে পারবেন বলে জানান।
পশু জবাইয়ে সাধারণত দুজনের একটি দলে কাজ করেন কসাইরা। খুব বড় গরু হলে তিন-চার জন লাগে। বেশি আয়ের আশায় অভিজ্ঞ কসাইরা ছোট গরুর কাজ নিতে চান না। এসব ক্ষেত্রে নতুন কসাইদের দিয়েই কাজ সারতে হয়। তাতে সময় বেশি লাগে।
মফিজুল বলেন, ‘ছোড গরু বানাইয়া পোষায় না। একদিনের তো কাম। কয়টা আর করা যায়। ৫০ হাজার টাকার তিনটা না বানাইয়া, ৫ লাখ টাকার একটা বানাইলেই লাভ।’
একই বাজারের মাংস বিক্রেতা জিয়া বলেন, ‘বড় গরু হলে নিমু। ছোট গরু হলে কাম নেয়ার সময় নাই। তয়, পোলাপাইন আছে, তাগোরে দিয়া করাইলে ঘণ্টা দুই-তিন লাগতে পারে।’
ঢাকায় সব এলাকা কসাইয়ের দাম প্রায় একই। তেজগাঁওয়ে মাংস বিক্রেতা বোরহান বলেন, ‘পুরা ঢাকা শহরে একই দাম, হাজারে দুইশ টাকা, একদিনই তো দিবেন। টাকা কামাই করার লাইগাইতো বউ-পোলাপান ছাইড়া ঢাকায় থাকুম। দেশে (গ্রামের বাড়িতে) নিজের কোরবানির গরু অন্য জনে কাটব। আমি কাটমু মাইনষেরটা। ঈদের এক দিন পর বাড়ি যামু।’
যারা মাংস বিক্রি করেন তাদের কসাই বলতে নারাজ বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম। তিনি বলেন, ‘কসাই শব্দটি নির্দয় অর্থে বোঝায়। তাই আমি তাদের মাংস বিক্রেতা বা মাংসশ্রমিক বলব। কসাই বললে তাদেরকে অপমান করা হয়। ঈদ মানে আনন্দ। তাই এ আনন্দের অংশীদার করতে কোরবানিদাতা মাংস শ্রমিকদের খুশি হয়ে পরিশ্রমিক দেবেন। কিন্তু এটা এখন ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গরুর দামের শতকরা হারে টাকা নেওয়া কোনোভাবে সমর্থনযোগ্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘ধরেন, কোরবানির জন্য কেউ একটা গরু ১ লাখ টাকা দিয়ে কিনল। অন্য সময়ের চেয়ে তার দাম এমনিতেই বেশি। তার ওপর হাজারে ২০০ থেকে আড়াইশ টাকা যদি দিতে হয়, তাহলে তো বাড়তি ২০ হাজার টাকা লাগে। এটা ঠিক না। তবে যারা এমন হার ঠিক করে নেয়, তাদের কসাই বলাই যায়।’
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :