• ঢাকা
  • বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১

এখনো রক্তের রঙ ভোরের আকাশে


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ২, ২০২১, ০৯:৫০ এএম
এখনো রক্তের রঙ ভোরের আকাশে

ঢাকা : ঘাতকদের মেশিনগানের মুখেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অকুতোভয়। প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তোরা কী চাস? কোথায় নিয়ে যাবি আমাকে? কিন্তু ১৫ আগস্ট ভোরের সূর্য ওঠার আগেই হায়েনারা নিভিয়ে দেয় তার জীবন প্রদীপ। তবে তারা যে উদ্দেশ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল তা আদতে সফল হয়নি। আজও বাঙালির মননে দীপ্ত শিখা হয়ে জ্বলছেন তিনি। শেখ মুজিবুর রহমান এখন শুধু একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস, একটি দেশ।

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক তার ‘পনেরো আগস্ট’ কবিতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু সম্পর্কে লিখেছেন-‘এখনো রক্তের রঙ ভোরের আকাশে। পৃথিবীও বিশাল পাখায় গাঢ় রক্ত মেখে, কবে থেকে ভাসছে বাতাসে। অপেক্ষায়-শব্দের শব্দেই হবে সে মুখর-আরও একবার, জয় বাংলা ধ্বনি লয়ে, যখন সূর্যের আলো তার পাখায় পড়বে এসে, ইতিহাস থেকে আরও কিছুক্ষণ পরে। মানুষ তো ভয় পায় বাকহীন মৃত্যুকেই, তাই ওঠে নড়ে, থেকে থেকে গাছের সবুজ ডাল পাতার ভেতরে।’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও বাঙালির হৃদয় থেকে সরাতে পারেনি। তাই তো আজও আগস্ট এলেই বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে তার পিতাকে। সেই শোকাবহ আগস্টের দ্বিতীয় দিন আজ। ১৯৭৫ সালের ২ আগস্ট ছিল শনিবার। তখনো স্বাধীন বাংলাকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার কাজে ব্যস্ত বঙ্গবন্ধু।

শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ছিল সংগ্রামমুখর। ছাত্র অবস্থায় জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। সংগ্রামের মধ্যেই তিনি বড় হয়েছিলেন। পাকিস্তানের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলে ষাটের দশক থেকেই তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের অগ্রনায়কে পরিণত হন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে লাখো মানুষের উত্তাল সমুদ্রে বঙ্গবন্ধু বজ দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এই ঘোষণায় উদ্দীপ্ত, উজ্জীবিত জাতি স্বাধীনতার মূলমন্ত্র পাঠ করে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছিনিয়ে আনে দেশের স্বাধীনতা।

নিজের স্বাধীন করা দেশে কোনো বাঙালিই তার নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়-এমন দৃঢ়বিশ্বাস ছিল বঙ্গবন্ধুর। সেজন্যই সরকারি বাসভবনের পরিবর্তে তিনি থাকতেন নিজের বাসভবনেই। বাঙালির স্বাধিকার-স্বাধীনতা আন্দোলনের সূতিকাগার ঐতিহাসিক ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে। বাড়িটি অসম্ভব প্রিয় ছিল বঙ্গবন্ধুর। এখান থেকেই বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু জঘন্য ঘাতকের দল তাকে সেই কাজ শেষ করে যেতে দেয়নি।

কর্মসূচি : শোকের মাসের প্রথম প্রহরে (১২টা ১ মিনিটে) ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, মোমবাতি প্রজ্বালন ও আলোর মিছিল করেছে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। রোববার সকালে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে ‘স্বেচ্ছায় রক্ত ও প্লাজমা দান’ কর্মসূচির আয়োজন করে কৃষক লীগ।

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দীর শিখা চিরন্তনে ‘শোকাবহ আগস্টের প্রথম দিবসে বঙ্গবন্ধু স্মরণে প্রদীপ প্রজ্বালন’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট। তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।

বিকালে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও শহিদ মিনারে মাসব্যাপী কুরআন খতম এবং ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউসহ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অসহায়-দুস্থদের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করে যুবলীগ। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীর মুক্তাঙ্গনের মাসব্যাপী খাদ্য বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেছে আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!