ঢাকা : বাঙালির অধিকার আদায় ছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে প্রধানমন্ত্রিত্ব বা ক্ষমতার কোনো আকর্ষণ ছিল না। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগের পর ব্রিটিশ শাসনের অবসান হলেও স্বাধীন সত্তা নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি বাঙালি জাতি। বাঙালির ওপর চেপে বসে পাকিস্তান রাষ্ট্রযন্ত্রের শাসন, শোষণ, অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়ন। সেই নির্যাতিত বাঙালিকে সংগঠিত করে স্বাধীনতা সংগ্রামের পথে ধাবিত করেন শেখ মুজিব। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এনে দেন স্বাধীনতা। কিন্তু নিয়তির কী নিষ্ঠুর পরিহাস, সেই স্বাধীন দেশে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে জীবন দিতে হয় ইতিহাসের মহানায়ককে। সেই শোকাবহ আগস্টের অষ্টম দিন আজ।
ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তার প্রিয় বাঙালির কাছ থেকে আলাদা করতে পারেননি। এখনো এই বাংলা ও বাঙালির সবটুকুজুড়ে আছেন শেখ মুজিবুর রহমান। কবির ভাষায়, “অনেক নিচে মর্ত্যরে এক চারকোনা ঘরে লেখার টেবিলে বসে আছি/আমার চোখ ভিজে গেল/আমি পাশ-টেবিলে রাখা বাংলাদেশের পতাকাটা বুকে জড়িয়ে ধরে বললাম,/কে বলেছে আপনি নাই, এই তো আপনি আছেন-এইখানে,/সবখানে, সমস্ত বাংলায়-/এইখানে বাংলার লাল ও সবুজে/ আমাদের অশ্রু আর ভালোবাসায়,/আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার/আর এগিয়ে যাওয়ার অমোঘ মন্ত্রে-/‘মানুষকে দাবায়া রাখতে পারবা না...’।”
১৯৭৫ সালের ৮ আগস্ট ছিল শুক্রবার। এদিন ছিল বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিবের জন্মদিন। বঙ্গমাতা শুধু বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী নন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জাতির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের বাঁকে বাঁকে তিনি নীরবে-নিভৃতে অবদান রেখেছেন। জাতিকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সন্ধিক্ষণে পৌঁছে স্বাধীনতা অর্জনে তার ভূমিকা কোনোদিন জনসম্মুখে প্রকাশ করেননি। বঙ্গমাতার মতো একজন অসমসাহসী, ধৈর্যশীল, সৎ পরামর্শদাতা স্ত্রী পাশে থাকার কারণেই বঙ্গবন্ধুর পক্ষে জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে, বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জাতির জন্য লড়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকার সময়গুলোতে বঙ্গমাতাই পরম যত্ন ও বিচক্ষণতায় সংসার ও দল উভয়ই আগলে রেখেছেন। আওয়ামী লীগের দলীয় কাজকর্ম, আন্দোলন-সংগ্রামে নিজের সম্পদ দিয়ে সাহায্য করতেন বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেছা। পরিবারকে কখনো বঙ্গবন্ধুর অভাব বুঝতে দেননি। কৌশলে সেসব অভাব মেটাতেন আর সদস্যদের ভিন্নভাবে বোঝাতেন। নবীন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ আলোচনায় বঙ্গমাতার জীবনী অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে উদ্ভাসিত। খোকা থেকে মুজিব, মুজিব থেকে মুজিব ভাই, মুজিব ভাই থেকে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা হয়ে ওঠার পেছনে যার অবদান অনস্বীকার্য, তিনি হচ্ছেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :