• ঢাকা
  • শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১

টিকাদানে বিশ্বে ১২তম অবস্থানে বাংলাদেশ


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ৩১, ২০২১, ১২:০৪ পিএম
টিকাদানে বিশ্বে ১২তম অবস্থানে বাংলাদেশ

ঢাকা : করোনা টিকার ডোজ কিংবা জনসংখ্যা বিবেচনার দিক থেকে টিকাদানকারী দেশগুলোর মধ্যে বিশ্বে এখন বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম (২৪.৭৮ মিলিয়ন ডোজ)। শীর্ষে রয়েছে চীন। দেশটি এ পর্যন্ত ২.০৩ বিলিয়ন ডোজ টিকা প্রদান করেছে।

বিভিন্ন দেশের ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমের ওপর ‘আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা’ প্রকাশিত সর্বশেষ (২৮ আগস্ট পর্যন্ত) তথ্যে এমন চিত্র উঠে এসেছে। তবে মোট জনসংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ২১তম (১১ শতাংশ)।

এদিক থেকে বিশ্বে টিকাদান কার্যক্রমে সবার ওপরে অবস্থান করছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটিতে এ পর্যন্ত মোট জনগোষ্ঠীর ৮৫ শতাংশকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন জোট ‘গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন-গ্যাভি’র সদস্য এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নিজামউদ্দিন আহমেদ ‘আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা’, গ্যাভি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।

সেখানে দেখা গেছে, ডোজ সংখ্যা বিবেচনায় চীনের পর সবচেয়ে বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে ভারতে ৬২৫.৮৬ মিলিয়ন ডোজ। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে- ৩৬৭.৯১ মিলিয়ন, ব্রাজিলে-১৮৭.৬৪ মিলিয়ন, জাপানে- ১২৪.৫৩ মিলিয়ন, জার্মানিতে-১০১.১৭ মিলিয়ন, ইন্দোনেশিয়ায়-৯৫.৯৩ মিলিয়ন, যুক্তরাজ্যে-৯০.৪৭ মিলিয়ন, পাকিস্তানে-৫০.৯৯ মিলিয়ন, মালয়েশিয়া-৩৩.৭২ মিলিয়ন, থাইল্যান্ড-২৮.৮৪ মিলিয়ন এবং বাংলাদেশে-২৪.৭৮ মিলিয়ন ডোজ।

বাংলাদেশের নিচে থাকা দেশগুলোর মধ্যে ইরানে-২৩.১৪ মিলিয়ন, ভিয়েতনামে-১৯.১৫ মিলিয়ন, কম্বোডিয়ায়-১৮.৩৪ মিলিয়ন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে-১৭.৯৭ মিলিয়ন, ইসরাইলে- ১৩.৩৮ মিলিয়ন, নেপালে-৯.১২ মিলিয়ন, আফগানিস্তানে-১.১৮ মিলিয়ন, মালদ্বীপে-৬ লাখ ৮২ হাজার, আইসল্যান্ডে ৫ লাখ ২৬ হাজার  ডোজ টিকা প্রদান করা হয়েছে।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অনেক দেশ মোট জনগোষ্ঠীর সিংহভাগকেই টিকার আওতায় নিয়ে আসার পরও ডোজের হিসাবে তাদের অবস্থান বিশ্বে অনেক নিচে।

বিষয়টি বিশ্লেষণ করে অধ্যাপক ডা. নিজামউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আরব আমিরাত তার মোট জনগোষ্ঠীর ৮৫ শতাংশকে টিকা প্রদান সম্পন্ন করেছে। কিন্তু দেশটিতে জনসংখ্যা অনেক কম হওয়ায় তাদের এই উন্নতি। কিন্তু বাংলাদেশে জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় মোট জনগোষ্ঠীর বিবেচনায় সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে পিছিয়ে পড়েছে। কিন্তু ডোজ সংখ্যা হিসাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের তুলনায় বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে।

অর্থাৎ ডোজসংখ্যা হিসাবে বাংলাদেশের ১২তম অবস্থানের বিপরীতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অবস্থান ১৬তম।

মোট জনগোষ্ঠীর টিকাদান অগ্রগতি সূচকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পর ইউরোপের ক্ষুদ্র দেশ আইসল্যান্ডের অবস্থান। দেশটি ৮১ শতাংশ নাগরিককে টিকাদান সম্পন্ন করেছে। এরপরের দেশগুলো হলো যথাক্রমে, কানাডা-৭৩%, ভুটান-৭২%, যুক্তরাজ্য-৭০%, মালদিপ-৭০%, ইসরাইল-৬৮%, ব্রাজিল-৬২%, যুক্তরাষ্ট্র-৬১%, মালয়েশিয়া-৫৯%, শ্রীলঙ্কা-৫৭%, জাপান-৫৫%, অস্ট্রেলিয়া-৪৬%, ভারত-৩৫%, থাইল্যান্ড-৩১%, রাশিয়া-৩০%, ইন্দোনেশিয়া-২২%, পাকিস্তান-১৮%, ভিয়েতনাম-১৭%, নেপাল-১৭%, বাংলাদেশ-১১%, মিয়ানমার-৮.১%, কঙ্গো-৩.৩%, নাইজেরিয়া-১.২% এবং হাইতি-০.২৩%।

ডা. নিজামউদ্দিন আহমেদের মতে, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশেরও আগে  বাংলাদেশে করোনা টিকার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। কিন্তু মাঝে ভারত থেকে টিকা দেওয়া বন্ধ করা না হলে বাংলাদেশের অবস্থান আরো অনেক ওপরে থাকত।

তবে কোভ্যাক্স থেকে টিকা না পেলে বাংলাদেশের টিকাদান কার্যক্রম হুমকিরমুখে পড়ত বলে জানান ডা. নিজামউদ্দিন আহমেদ। তিনি টিকাদান কার্যক্রমকে আরো জোরদারের লক্ষ্যে তালিকা তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন,  ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৮ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৮ কোটি মানুষকে টিকা দিতে হলে টিকার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।

এ ছাড়া প্রতিদিন টিকা দেওয়ার সংখ্যাও বাড়াতে হবে। বর্তমান হারে টিকা দেওয়া চলতে থাকলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ৮ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পারবেন না বলে অনেকেই মনে করছেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে এ পর্যন্ত প্রায় ২ কোটি ৫৩ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। আরও ১৩ কোটি ৪৭ লাখ ডোজের বেশি টিকা মানুষকে দিতে হবে। এ সময়ে স্বাস্থ্য বিভাগ সর্বোচ্চ ১৫৭ দিন টিকা দিতে পারবে। অর্থাৎ দৈনিক সাড়ে ৮ লাখের বেশি ডোজ টিকা দেওয়া দরকার হবে।

অন্যদিকে গত সাত মাসে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪ দশমিক ৩ শতাংশ জনসংখ্যাকে টিকা দিতে পেরেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এই হারে টিকা দিলে বাকি ৭৬ শতাংশ টিকা দিতে ১৩৩ মাস বা ১১ বছর সময় লেগে যাবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!