ঢাকা : দেশের ১১ জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। যমুনা নদীর ৯ পয়েন্টে পানি এখন বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। বাড়তে পারে ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গা নদীর পানিও। এতে করে আরো কিছু এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে যেতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, পদ্মা নদীর ভাগ্যকূল ও মাওয়া পয়েন্টের পানি আগামী ২৪ ঘণ্টায় বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। তবে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি কমছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র আরো জানায়, যমুনা মথুরা পয়েন্টের পানি ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
একই নদীর আরিচা পয়েন্টের পানি ১৬, বাহাদুরাবাদ পয়েন্টের পানি ৪৪, সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ৫২, কাজীপুর পয়েন্টে ৫২, ফুলছড়ি পয়েন্টে ৩৯, সিরাজগঞ্জ পয়েন্টের পানি ৫১, পোড়াবাড়ী পয়েন্টে ১৫, সাঘাটা পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আত্রাই নদীর বাঘাবাড়ী পয়েন্টের পানি এখন বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। ধলেশ্বরী নদীর এলাসিন পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম পয়েন্টের পানি ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে এখন। নতুন করে ঘাগট নদীর গাইবান্ধা পয়েন্টে সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সোনালীনিউজ প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে দেশের বিভিন্ন জেলার বন্যা পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে-
পাবনা : উজানের ঢল আর টানা বৃষ্টিতে পাবনায় যমুনা নদীর পানি একদিনের ব্যবধানে দ্বিগুণ বেড়েছে। এতে নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করায় উঠতি নানা ফসল ও সবজির ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় কোটি কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি কৃষি বিভাগের।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উত্তরাঞ্চলীয় নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ হাসান জানান, গতকাল বেলা আড়াইটায় যমুনা নদীর পানি বেড়ে নগরবাড়ী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। একদিনের ব্যবধানে পানি দ্বিগুণ বাড়ায় জেলাজুড়ে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
জেলা কৃষি অধিদপ্তরের ভাষ্যমতে, পাবনা সদর, ঈশ্বরদী, বেড়া, সুজানগরসহ কয়েকটি উপজেলার নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে সবজি ও ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। কোটি কোটি টাকার ফসল ও সবজির ক্ষতির সম্মুখীন চাষিরা। অন্যদিকে কিছু স্থানে পানি প্রবেশ করায় জনসাধারণের বাড়তি ভোগান্তি যোগ হয়েছে প্রাত্যহিক জীবনে। কিছু স্থানে নদীতে ভাঙন ও পানি বৃদ্ধির ফলে নদী-তীরবর্তী মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ও আসবাব সরিয়ে অন্যত্র নিচ্ছেন।
টাঙ্গাইল : ভারি বর্ষণ ও মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন। তিনি বলেন, গত কয়েক দিন যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যমুনা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ সেন্টিমিটার বেড়েছে।
যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অর্ধলাখেরও বেশি মানুষ, তলিয়ে গেছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে টিউবওয়েল ও টয়লেট ডুবে যাওয়ায় বেড়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। এভাবেই দিনদিন অবনতির দিকে যাচ্ছে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি।
রাজবাড়ী : রাজবাড়ীতে পদ্মার পানি হুহু করে বাড়ছে। গত কয়েক দিনে পানি কমতে থাকলেও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তা আবারো বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার তিনটি পয়েন্টেই পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, গতকাল সকাল ৬টায় গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া পয়েন্টে পানি ৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ছ, পাংশার সেনগ্রাম পয়েন্টে পানি ৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। আর সদরের মাহেন্দ্রপুর পয়েন্টে পানি ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে।
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। পানির ধীরগতি থাকলেও লোকজনের মুখে স্থায়ী বন্যার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ আমনক্ষেতসহ বিভিন্ন তাল ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদী-তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চলের অনেকের ঘরে পানি উঠেছে।
বিশেষ করে পুটিমারী কাজলডাঙ্গা, রাজারভিটা, উত্তর রমনা, রমনা ঘাট, কাচকোল, মাচাবান্দা, জোড়গাছ, পাত্রখাতা, তেলী পাড়া, বৈলমনদিয়ারখাতা, দক্ষিন খাউরিয়া এলাকায় বাড়িঘরে পানি ওঠায় লোকজন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
অপরদিকে গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি নিয়ে পানিবন্দি মানুষ বিপাকে পড়েছে। এসব পরিবারের মাঝে বিশুদ্ধ পানি, খাবার ও গো খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। মাইলডাঙ্গা, পেদিখাওয়া, চাচলারবিল, হন্নেরন্দ ও মাগুরার বিলের আমনক্ষেতসহ উঠতি ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
পাউবো জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৬ সে.মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলা সদরের আকন্দপাড়ার নুরনবী জানান, গত দুই বছরের বন্যার মতো এবারো আমাদের পানিবন্দি অবস্থায় থাকতে হবে।
থানাহাটের হযরত আলী, মুকুল মিয়া, তারাবর জানান, গত বছর হাঁটুপানির ওপরে উপজেলা সদরে বন্যার পানি দ্রুত বের হওয়ার জন্য পুরাতন স্লুইসগেটটির সংস্কারসহ আরো একটি স্লুইসগেটের জন্য মানববন্ধন করা হলেও পাউবোর নিকট থেকে কোনো প্রকার সাড়া মেলেনি।
ফলে বিগত দুই বছরের বন্যা পরিস্থিতির চেয়েও এ বছরে ভয়াবহ বন্যায় দুর্ভোগ পোহাতে হবে বলে এলাকার সচেতন মহল ধারণা করছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কুমার প্রণয় বিশান দাস জানান, ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিকাংশ আমনক্ষেত বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :