• ঢাকা
  • শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১

মাস্কে কমেছে সংক্রমণ


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ৭, ২০২১, ০১:১০ পিএম
মাস্কে কমেছে সংক্রমণ

ঢাকা : মাস্কের ব্যবহার কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ অনেকটা কমিয়েছে বলে জানা যায় বাংলাদেশে পরিচালিত একটি সমীক্ষায়। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, মাস্কের কার্যকারিতা নিয়ে মাঠ পর্যায়ে বড় পরিসরের সমীক্ষা বিশ্বে এটাই প্রথম।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইয়েল স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট’র জেসন অ্যাবালাক এবং মুশফিক মোবারক এই সমীক্ষা পরিচালনা করেন।

তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, মাস্ক পরার জন্য সচেতনতামূলক প্রচারের কারণে উপসর্গযুক্ত সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনা গেছে, বিশেষ করে বয়স্কদের মধ্যে।

ইয়েল ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে গত ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাংলাদেশের ৬০০ গ্রামের ৩ লাখ ৪০ হাজারের বেশি মানুষ এই জরিপে অংশ নিয়েছেন।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলে, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা দল ‘ইনোভেশন্স ফর পোভার্টি অ্যাকশন অ্যান্ড স্কলার্সর সঙ্গে সমন্বিতভাবে সমীক্ষাটি পরিচালনা করেন মোবারক ও অ্যাবালাক।

এই গবেষণা চালানো হয় গ্রামগুলেকে দুই ভাগে ভাগ করে। এক ভাগে ছিল ১ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ, যাদের মাস্ক পরাতে উৎসাহ দেওয়া হয় গতবছর নভেম্বর থেকে।

স্থানীয় নেতৃত্বের সমর্থন এবং এলাকা ঘুরে পর্যবেক্ষণ দলের প্রচারসহ সমন্বিত চার ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয় সচেতনতা বাড়ানোর জন্য। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের এ অংশকে বলা হচ্ছে ‘টার্গেটেড গ্রুপ’।

আর অন্য অংশে ‘কন্ট্রোল গ্রুপে’ অন্য গ্রামগুলোর ১ লাখ ৬৩ হাজার বাসিন্দাকে কেবল পর্যবেক্ষণের আওতায় রাখা হয়। কোনো ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম সেখানে চালানো হয়নি।

গত এপ্রিলে এ সমীক্ষার প্রথম পর্বের ফলাফলে দেখা যায়, সমন্বিত উদ্যোগের ফলে টার্গেটেড গ্রুপের গ্রামগুলোতে মাস্ক ব্যবহার বেড়ে ৪২ শতাংশ হয়েছে, যেখানে কন্ট্রোল গ্রুপে গ্রামগুলোতে মাস্ক ব্যবহারের হার ১৩ শতাংশ।

এই সমীক্ষায় দেওয়া সুপারিশগুলো দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সরকার গ্রহণ করছে এবং ১০ কোটির বেশি মানুষের ওপর তার প্রয়োগ হচ্ছে। এছাড়া বড় বড় কোম্পানি এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো এবিষয়ে সহায়তা দিচ্ছে।

সমীক্ষার দ্বিতীয় পর্বে টার্গেটেড এবং কন্ট্রোল গ্রামগুলোতে কোভিড-১৯ উপসর্গের বিষয়ে জরিপ চালিয়েছেন গবেষকরা।

যাদের উপসর্গ ছিল, তাদের রক্তের নমুনা চাওয়া হয়েছে এবং কোভিড-১৯-এর অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয়েছে।

জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, মাস্ক পরার প্রচার চালানো হয়েছে এমন টার্গেটেড গ্রামগুলোতে উপসর্গযুক্ত সক্রমণ শনাক্ত হয়েছে কন্ট্রোল গ্রুপের গ্রামগুলোর চেয়ে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ কম। যেসব গ্রামে কাপড়ের মাস্কের পরিবর্তে সার্জিক্যাল মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে সেখানে আরো ভালো ফল পাওয়া গেছে।

ওইসব এলাকায় সংক্রমণের হার ছিল সার্বিকভাবে কন্ট্রোল গ্রুপের চেয়ে ১১ শতাংশ কম। ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের মধ্যে সেটা ২৩ শতাংশ কম আর ৬০ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে তা ৩৫ শতাংশ কম।

গবেষকরা বলছেন, মাত্র ৪২ শতাংশ মানুষ মাস্ক পরার ফলেই সংক্রমণের মাত্রা এতোটা কমে এসেছে। বিশ্বব্যাপী মাস্ক পরার কার্যকারিতা এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হতে পারে।

এছাড়া অধিকতর ঝুঁকিতে থাকা বয়স্ক ব্যক্তিদের সুরক্ষা বাড়ার বিষয়টিও সমীক্ষায় গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে।

জেসন অ্যাবালাক বলেন, আমাদের প্রতিবেদন থেকে যদি বলা হয়, মাস্ক ব্যবহার কেবল মাত্র ১০ শতাংশ সংক্রমণ কমতে পারে, তবে সেটা হবে বড় ধরনের ভুল। আমরা মনে করি উপসর্গযুক্ত কোভিড সংক্রমণ কমিয়ে আনতে মাস্ক অত্যন্ত শক্তিশালী একটি অস্ত্র এবং বিশেষ করে গুরুতর অসুস্থতা এবং মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের সংক্রমণ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে।

স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য সরবরাহ সংকট এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সামাজিক দূরত্ব এবং হাত ধোয়ার মতো নির্দেশেনা পালনে নমনীয়তা দেখা দেওয়ার আশঙ্কায় মহামারির শুরুর দিকে মাস্ক ব্যবহারের পক্ষে জোড়ালো সমর্থন ছিল না।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার পর ডিজিজ কন্ট্রোল’ সিডিসি অবশ্য ২০২০ সালের এপ্রিলে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও জুন মাসে একই পথ অনুসরণ করে। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই পরে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ গ্রহণ করে।

কিন্তু সংক্রমণ কমিয়ে আনতে মাস্ক ব্যবহারের কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণার বিষয়টি কেবলমাত্র পরীক্ষাগার আর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

মাস্ক ব্যবহারের ফলে দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম মানার প্রবণতা কমে যায় কি না সে বিষয়টি পরীক্ষা করারও একটি সুযোগ করে দিয়েছে এই গবেষণা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ নীতিনির্ধারকদের জন্য এ বিষয়টি এখনো একটি প্রশ্ন হিসেবে রয়ে গেছে।

এই গবেষণার রূপরেখা তৈরির সময় গবেষক দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

পর্যবেক্ষণ দলগুলো জানিয়েছে, মাস্ক ব্যহারের প্রচারাভিযান চালানো টার্গেটেড গ্রামগুলোতে অন্য এলাকার তুলনায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার হার ৫ শতাংশ পয়েন্ট বেশি পাওয়া গেছে। এছাড়া জনসমাগম হয় এমন স্থানে ভিড়ও বাড়েনি।

মুশফিক মোবারক বলেন, যা আশঙ্কা করা হয়েছিল এটা তার ঠিক উল্টো। আমাদের ব্যাখ্যা হচ্ছে, যখন আপনি মাস্ক নিয়ে কথা বলা শুরু করবেন, লোকজন তখন দূরত্ব বজায় রাখাসহ কোভিড সংক্রান্ত সবকিছুকেই গুরুত্ব দেওয়া শুরু করবে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, গবেষকরা তাদের পাওয়া ফলাফলের বিষয়ে আরো কিছু জরিপ চালাবেন। যার একটিতে দেখা হবে-মাস্ক ব্যবহার উপসর্গহীন সংক্রমণের মাত্রা কিংবা সংক্রমণের তীব্রতা কমিয়ে আনে কি না।

আরেকটি গবেষণায় বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে করোনাভাইরাসের টিকার প্রাপ্যতা বাড়ায় মানুষকে টিকা নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করার কয়েক ধরনের উপায় পরীক্ষা করে দেখা হবে।

মোবারক বলেন, মাস্কের ব্যবহার কীভাবে বাড়ানো যায় সেজন্য আমরা যেভাবে একটি মডেল দাঁড় করেছি, ওই একই দল এখন উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মানুষের কাছে টিকা পৌঁছানোর শেষ ধাপের একটি কার্যকর মডেল তৈরির চেষ্টা করছে।

কিন্তু এটা হয়ত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে টিকার প্রাপ্যতা আরো বিস্তৃত হওয়ার এক বছর বা তারও বেশি আগে হয়ে যাচ্ছে। গবেষণায় এ সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে প্রভাব ফেলার মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ উপায় বের করার চেষ্টা করা হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!