ঢাকা : অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার ৮৯ জন কর্মকর্তা। মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এই পদোন্নতি দেওয়া হয়। এর আগেই সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সভায় পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। পদোন্নতি পেলেও পর্যাপ্ত পদের অভাবে বেশিরভাগ কর্মকর্তাকে আগের পদেই দায়িত্বপালন করতে হবে। পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের ইমেইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগদান করতে বলা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতি পাওয়ার পর প্রথমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগদান করতে হয়।
প্রজ্ঞাপন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এই পদোন্নতিতে নবম ব্যাচের ২ জন, দশম ব্যাচের ৩ জন, ১১তম বঞ্চিত ১০জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ইকোনোমিক ক্যাডারের ১২ জন, অন্যান্য ক্যাডারের ১১ জন এবং ১৩তম ব্যাচের ৪১ জন পদোন্নতি পেয়েছেন। এ পদোন্নতিতে ৩৭২ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি বিবেচনায় নেওয়ার ফলে বাকী ২৮৫ জন কর্মকর্তা বঞ্চিত হলো। এরমধ্যে নিয়মিত ১৩তম ব্যাচের ১৩৬ জন কর্মকর্তা বিবেচনায় থাকলেও পদোন্নতি পেলেন মাত্র ৪১ জন কর্মকর্তা। ফলে এই ব্যাচেই বঞ্চিত হল ৯৩ জন কর্মকর্তা। ফলে পদোন্নতি প্রত্যাশি একটি বড় অংশের কর্মকর্তা বঞ্চিত হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েকদিন থেকে শুনছিলাম পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন হবে। এর মধ্যে তালিকা কাটাছেড়ার অনেক গল্প কানে এসেছে। এরপর হতাশ হয়েছি। দীর্ঘ চাকরি জীবনে সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ হওয়া সত্ত্বেও পদোন্নতি জোটেনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হলেও বারবার বঞ্চিত করা হচ্ছে। তবে এবার তারা আশায় বুক বেঁধে ছিলেন যে তাদের পদোন্নতি দেয়া হবে। কিন্তু পদোন্নতির তালিকা দেখে তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হাতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে এবার ১৩ম ব্যাচ পর্যন্ত কর্মকর্তাদের বিবেচনায় নেয়া হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৯৮ জন যুগ্ম সচিবকে পদোন্নতি দিয়ে অতিরিক্ত সচিব করা হলেও আরও দুই শতাধিক কর্মকর্তা পদোন্নতি বঞ্চিত হন। নিয়মিত ১৩তম ব্যাচ থেকে প্রথম দফায় যুগ্ম সচিব হওয়া সবাইকেও পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।
চলতি বছর অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য ৩৭২ জন যুগ্ম সচিব পদ মর্যাদার কর্মকর্তাকে বিবেচনায় নেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে ১৩তম ব্যাচ পর্যন্ত (লেফট আউটসহ) ৩০৫ জন কর্মকর্তা রয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য ক্যাডার থেকে বিবেচনায় ছিলেন ৬৭জন কর্মকর্তা।
পদোন্নতির যোগ্য এ ব্যাচের অনেক কর্মকর্তাকে গত বছর বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এরপর দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাদ পড়া কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন জনপ্রশাসন ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য আবেদন করেছিলেন বঞ্চিত প্রায় অর্ধশত কর্মকর্তা। আবেদনে প্রত্যেকে তাদের সততা, দক্ষতা, নিষ্ঠা, সৃজনশীলতা ও দায়িত্বশীলতার কথা উল্লেখ করেছেন। নিজেকে আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত করতে স্থানীয় এমপি, মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতার ডিও দিয়েছেন ১৭ জন কর্মকর্তা। এদের কেউ কেউ মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন সচিবের দপ্তরে গিয়ে কর্মকর্তার পদোন্নতির বিষয়টি বিবেচনা করতে অনুরোধ করেছেন। এ ছাড়া পদোন্নতি কার্যক্রম শুরুর পর থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী তাদের পরিচিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিষয়টি বিবেচনার জন্য এসএসবি সদস্যদের বলেছেন।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব (এপিডি) এর যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, প্রশাসনের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপ সচিবের নির্ধারিত পদের বিপরীতে এ মুহূর্তে প্রায় দ্বিগুণ কর্মকর্তা রয়েছেন। বর্তমানে বর্তমানে উপসচিবের ১ হাজার ৩২৪টি পদে কর্মরত আছেন ১ হাজার ৯৬২ জন কর্মকর্তা। যুগ্ম সচিবের ৫০২টি পদে ৬৮৫ জন এবং অতিরিক্ত সচিবের ২১২টি পদে ৪২০ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
সোনালীনিউজ/এমএএইচ
আপনার মতামত লিখুন :