• ঢাকা
  • শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

থমথমে রোহিঙ্গা ক্যাম্প


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ২, ২০২১, ০১:৪৬ পিএম
থমথমে রোহিঙ্গা ক্যাম্প

ঢাকা : কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি এখনো থমথমে। ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

এদিকে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করা হচ্ছে জঙ্গি সংগঠন আরসাকে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইয়াকিন নামের এই জঙ্গি সংগঠন মিয়ানমারে আরসা নামে পরিচিত।

১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নইমুল হক বলেন, শুক্রবার (১ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে উখিয়া উপজেলার কুতুপালংয়ের লম্বাশিয়া ক্যাম্পের এপিবিএন সদস্যরা ওই রোহিঙ্গাকে আটক করেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ৪৮ বছর বয়সী মুহিবুল্লাহ আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি পিস ফর হিউম্যান রাইটস নামে একটি সংগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন।

বুধবার রাতে লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুর এলাকার স্কুলশিক্ষক মুহিবুল্লাহ পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমে ‘রোহিঙ্গাদের কণ্ঠস্বর’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন।

২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে আলোচনায় আসেন তিনি। জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থায় রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্বও করেছিলেন।

মুহিবুল্লাহকে হত্যার ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জাতিসংঘ, ইউএনএইচসিআর, যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে উখিয়ার লম্বাশিয়াসহ আশপাশের রোহিঙ্গা শিবিরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিবারের সন্দেহ, রোহিঙ্গাদের আরেকটি সংগঠন আরসার সদস্যরা তাকে হত্যা করে থাকতে পারে।

মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সাংবাদিকদের বলেন, বুধবার রাতে উখিয়ার ১-ইস্ট নম্বর লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্থানীয় মসজিদে দুই ভাই মিলে নামাজ পড়েন তারা।

এরপর মুহিবুল্লাহসহ তিনি আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি পিস ফর হিউম্যান রাইটস অফিসে যান। সেখানে তিনি (মুহিবুল্লাহ) কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে আলাপ করছিলেন।

পরে হাবিবুল্লাহ রাতের খাবার খেতে ঘরে চলে যান। খাওয়ার মধ্যেই গুলির শব্দ শুনে এআরএসপিএইচআর অফিসে ছুটে গিয়ে ভাইকে রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। সে সময় ১৫/২০ জন অস্ত্রধারী লোক তাকে ঘিরে ছিল। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে মুখে মাস্ক ও গামছা পরিহিত ওই অস্ত্রধারীরা হামলা চালায়।

মুখঢাকা হলেও হামলাকারী কয়েকজনকে চিনতে পারার দাবি করে হাবিবুল্লাহ বলেন, আরসার নেতা মাস্টার আব্দুর রহিম, লালু ও মুর্শিদসহ ৩/৪ জনকে চিনতে পেরেছি। এরা বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস করে আসছে। অন্যদের চিনতে পারিনি।

হামলার কারণ কী হতে পারে জানতে চাইলে হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য আমেরিকা ও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের সাথে বাংলাদেশের ইতিবাচক আলালোচনা হয়েছে। আমার ভাই মুহিবুল্লাহ দ্রুত প্রত্যাবাসন নিয়ে খুবই আশাবাদী ছিলেন। রাতে এ নিয়েই এআরএসপিএইচআর অফিসে বসে অন্য রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে আলাপ করছিলেন তিনি।

মুহিবুল্লাহর আরেক ভাই আহমদ উল্লাহ বলেন, মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের সর্বজনগ্রাহ্য নেতা হয়ে উঠেছিলেন। তার সঙ্গে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিবর্গের যোগাযোগ ছিল। এ কারণে পুরনো সংগঠন আরসা তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। আরসার সদস্যরা আমার ভাই মুহিবুল্লাহকে নেতা মানতে রাজি ছিল না। তারাই (আরসা) প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আমার ভাইকে খুন করেছে।

এর আগে থেকে প্রত্যাবাসন নিয়ে কাজ না করতে আরসার সদস্যরা আমার ভাইকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি দাবি জানান নিহত রোহিঙ্গা নেতার এ ছোট ভাই।

থমথমে পরিস্থিতি, মামলা : রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর বুধবার রাতেই শরণার্থী শিবিরের মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয় এপিবিএনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

যেখানে মুহিবুল্লাহ খুন হন, সেই লম্বাশিয়াসহ আশপাশের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি। লম্বাশিয়া ক্যাম্পের বিভিন্ন স্টেশনের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ক্যাম্পে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে লম্বাশিয়াসহ আশাপাশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে এপিবিএন পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য নিয়োজিত রয়েছে।’

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বিকালে মুহিবুল্লাহর লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গ থেকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। হাবিবুল্লাহ লাশ বুঝে নেন। পরে পুলিশ পাহারায় তার লাশ অ্যাম্বুলেন্সে করে কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হয়।

খুনের কারণ জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল বলেন, ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গুলিতেই মুহিবুল্লাহ খুন হয়েছে, এটা নিশ্চিত। কিন্তু কেন খুন করল, কারা খুন করল; তা এখন নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা খোঁজ-খবর নিচ্ছে। ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে,’ বলেন তিনি।

উখিয়া থানার ওসি আহমেদ মঞ্জুর মোরশেদ জানান, মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় তার ভাই মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জনকে আসামি করে বৃহস্পতিবার রাতে মামলা করেছেন।

মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও খুনিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!