• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

নতুন চ্যালেঞ্জ খাদ্য নিরাপত্তা


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ২১, ২০২১, ০৬:৩৯ পিএম
নতুন চ্যালেঞ্জ খাদ্য নিরাপত্তা

ঢাকা : মহামারি করোনাভাইরাসের ধাক্কায় এমনিতেই বিশ্বজুড়ে বাড়ছে খাদ্য সংকট। এ কারণে বিভিন্ন দেশে বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, করোনা সংকটে বিশ্বজুড়ে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে খাদ্যের দাম। গত দশ বছরে যা সর্বোচ্চ বলে দাবি সংস্থাটির। এফএও’র প্রধান ছু তুংইয়ু কয়েকদিন আগে বলেছেন, বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।

তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়পর্বে রয়েছে। এফএও’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালে সারা বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ৮১.১ কোটি।

এবছর বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকটের মূল কারণ হিসেবে করোনা মহামারিকেই দায়ি করা হচ্ছে। কিন্তু ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবকেই প্রধানত দায়ি করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের বাংলাদেশও খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত।

সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সম্প্রতি একটি ধারণাপত্র তৈরি করেছে। যেখানে বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে ১০ বছরে বাংলাদেশে খাদ্য আমদানি তিনগুণ বেড়েছে।

২০৩১ সালের মধ্যে দেশের জনসংখ্যা আরো প্রায় তিন কোটি বাড়বে। একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর অন্য দিকে বাড়তি জনংখ্যার কারণে টেকসই ও নিরাপদ খাদ্যের জোগান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তাই এবার জাতিসংঘের ৭৬তম অধিবেশনে বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক সংঘাত সমীকরণ এবং জলবায়ুর মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু থাকতেও বাংলাদেশের মূল এজেন্ডা ছিল খাদ্য নিরাপত্তা।

অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানো এবং জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে খাদ্য উৎপাদন কতটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে সেটি বিশ্বনেতাদের স্মরণ করিয়ে দেন।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই দুই সংকটের পাশাপাশি অন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তার খোরাক যোগাচ্ছে তা হলো-দ্রুত নগরায়ণের ফলে কৃষিজমি কমে আসা। একারণে সরকার গবেষণার মাধ্যমে কৃষির যান্ত্রিকীকরণ ও সম্প্রসারণের ওপর জোর দিচ্ছে। সেইসঙ্গে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য এবং কৃষকদের আয় বৃদ্ধির বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।

এ লক্ষ্যে আগামী পাঁচ বছরে ২.৯ বিলিয়ন ডলার বা ২৪ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। সরকারের এ বিশাল পরিকল্পনায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে প্রাথমিকভাবে সম্মতি দিয়েছে বহুজাতিক দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. আবদুর রৌফ (পরিকল্পনা) জানান, প্রস্তাবিত প্রকল্পে ঋণ দিতে বিশ্বব্যাংক আগ্রহ দেখিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরির কাজও শুরু করেছে। সরকারের বিবেচনায় লাভজনক বিবেচিত হলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন সাপেক্ষে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে বলেও জানান তিনি।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে প্রণয়ন করা জাতীয় কৃষি নীতিমালার আওতায় ২০২১-২০২৫ সময়ের জন্য পৃথক ‘ইমপ্লিমেন্টেশন প্ল্যান অব অ্যাকশন’ বা পিওএ তৈরি করা হয় ২০২০ সালে। সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে এ পরিকল্পনায় ব্যয় ধরা হয় ২.৯ বিলিয়ন ডলার। এই অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই প্রকল্পটি তৈরি করা হচ্ছে। আগামী বছরের মার্চে প্রকল্পটির ঋণপ্রস্তাব বোর্ড সভায় উপস্থাপনের লক্ষ্যে কাজ করছে বিশ্বব্যাংক।

এরই অংশ হিসেবে ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার, চর ও পাহাড়ি অঞ্চলসহ সারা দেশের অনাবাদি জমিতে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো, প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি ও যান্ত্রিকীকরণে গুরুত্ব দেওয়া হবে প্রকল্পটিতে। এ ছাড়া মানসম্মত বীজ, ঋণ, স্টোরেজের মতো কৃষি উপকরণ নিশ্চিতেও থাকছে গুরুত্ব।

দেশের এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে তার নির্দেশ ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন। সে লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ও কাজ করে যাচ্ছে। বিদ্যমান করোনা মহামারি পরিস্থিতিতেও গত বছর আউশ ও বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। সরকারের বিশেষ প্রণোদনা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানের ফলে বন্যা খরা এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেও আশানরূপ ফলন সম্ভব হয়েছে।

খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকার প্রযুক্তি নির্ভর কৃষির দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে। কৃষিতে বাড়াছে যন্ত্রের ব্যবহার। পুরনো ধারণা থেকে বের হয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে বদলে দিচ্ছে কৃষকের জীবন। এতে খরচ যেমন কমে আসছে তেমনি বাড়ছে উৎপাদন ক্ষমতা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের নীতি সহায়তা কৃষি খাতের পরিস্থিতি আমূল বদলে দিচ্ছে। উন্নত বীজ, সার, প্রযুক্তিসহ নানান অত্যাধুনিক উপকরণের স্পর্শে কৃষি এখন অনেকটাই পরিণত। এর ফলে উৎপাদন যেমন বেড়েছে কয়েকগুণ তেমনি উৎপাদনশীলতায় পেয়েছে ভিন্নমাত্রা। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে যন্ত্রের সাথে কৃষির মেলবন্ধন আরো সুদৃঢ় হবে আগামীতে এমনই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!