ঢাকা : বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। প্রতিদিনই বাড়ছে চাল, তেল, চিনি, ডাল, সবজিসহ অধিকাংশ পণ্যের দাম। এ অবস্থায় মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন আয়ের মানুষের ভরসা ট্রেডিং করপোরেশন অব বালাদেশ (টিসিবি)। কিন্তু এবার পণ্যের দাম বাড়াল টিসিবিও। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অল্প আয়ের মানুষেরা।
রাজধানীতে ১০০ স্থানসহ সারা দেশের ৪০০ থেকে ৪৫০ টি স্থানে ট্রাকের মাধ্যমে খোলা বাজারে নিত্যপণ্য বিক্রি করছে টিসিবি। মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে হলেও নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু পণ্য নিয়ে খোলা ট্রাকে করে টিসিবির এই বিক্রয় কার্যক্রম চলছে। সর্বশেষ গত ৬ অক্টোবর শুরু হওয়া এই কার্যক্রম চলে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। এরপর একদিন বিরতি দিয়ে আবারো শুরু হয় এ কার্যক্রম। শুক্রবার ছুটির দিন ব্যতীত আগামী ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত এই কার্যক্রম চালু থাকবে। একজন ক্রেতা টিসিবির ট্রাক থেকে সর্বোচ্চ দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি চিনি, দুই কেজি ডাল এবং আড়াই কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারবেন।
এবারে টিসিবির বিক্রয় কার্যক্রমে পণ্যের মূল্য বাড়ানো এবং পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে দেওয়াতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিয়মিত টিসিবি পণ্য ক্রেতারা। তারা বলছেন, কম মূল্যে পেতাম বলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও টিসিবির পণ্য কিনতাম। যেটুকু মূল্য সাশ্রয় হতো তা দিয়ে সংসারের অন্য জিনিসপত্র কিনতে পারতাম। এখন সেই টিসিবিও তেল আর ডালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। মুগদা জেনারেল হাসপাতালের সামনে টিসিবির ট্রাকে পণ্য কেনার জন্য লাইনে দাঁড়ানো নাসির উদ্দিন বলেন, বাজারের চেয়ে দামে সস্তা বলে রোদে পুড়ে, দুই-তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে টিসিবির ট্রাক থেকে মালামাল কিনতাম। আজ শুনছি তেল আর ডালের দাম বাড়িয়েছে। তাছাড়া পেঁয়াজও দিচ্ছে না। তাহলে আর এখান থেকে মালামাল কিনে লাভ কী?’
আরেক গ্রাহক সুলতানা রাজিয়া বলেন, বাজারে পেঁয়াজের দাম ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। এখান থেকে পেতাম ৩০ টাকা কেজিতে। তেল পেতাম ২ লিটার ২০০ টাকায়। আজ বলছে দাম বেড়েছে তেলের। ২ লিটার ২২০ টাকা। আবার পেঁয়াজও নাই। সরকারি প্রতিষ্ঠান এভাবে করলে কী চলে? কত ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। এখানে একটু দিলে আমরা সাধারণ মানুষরা বাঁচতে পারি।
মুগদা জেনারেল হাসপাতালের সামনে খোলা ট্রাকে বিক্রিরত টিসিবির শ্যামলী এলাকার পরিবেশক মেহের এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. সরওয়ার বলেন, টিসিবি থেকে আমাদেরকে যেভাবে বিক্রি করতে বলে, সেভাবেই বিক্রি করি। আজ থেকে ডালের কেজিতে ৫ টাকা ও তেলের লিটারে ১০ টাকা করে দাম বেড়েছে। আর পেঁয়াজ আপাতত বন্ধ থাকলেও টিসিবি থেকে বলেছে, ১০-১৫ দিন পরে আবারো পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হবে। ২৫০ থেকে ২৬০ জন ক্রেতা আজ আমাদের এখান থেকে পণ্য কিনতে পারবেন।
রাজধানীর তালতলা বাজারের সামনে টিসিবির ট্রাকে পণ্য কিনতে আসা রিকশাচালক সেলিম হোসেন বলেন, দুই লিটার তেল আর দুই কেজি ডাল কিনতে আগের থেকে ৩০ টাকা বেশি লাগলো। এখন যে পরিস্থিতি তাতে ৩০ টাকা অনেক বেশি। আগে টিসিবির পণ্য কম দামে খেতাম, এখন তাও বেড়ে গেলো।
রামপুরায় টিসিবির পণ্য কিনতে আসা গৃহবধূ আকলিমা বেগম বলেন, বাজারে দাম বাড়ে, আবার সরকারের দেওয়া পণ্যের দামও বাড়ে। সেই বাড়তি টাকা জোগার করতে আমাদের মতো গরিবরা মরে।
সেখানকার টিসিবির ডিলার আলম হোসেন বলেন, দাম কিছুটা বাড়লেও তার প্রভাব খুব একটা পড়েনি। আগের মতোই ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পণ্য কিনছেন। তিনি বলেন, এখনো বাজারের থেকে প্রতিলিটার তেলের দাম ৫০ টাকা এবং ডালের দাম ১৫-২০ টাকা কম রয়েছে।
গতকাল খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, সয়াবিন তেল ২ লিটার ২৯৫-৩০৩ টাকা, সাদা চিনি ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা এবং মসুর ডাল (মান এবং দেশ ভেদে) প্রতি কেজি ৯০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে টিসিবির খোলা ট্রাকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩০ টাকা, সয়াবিন তেল ২ লিটার ২০০ টাকা, সাদা চিনি এবং মসুর ডাল ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। বর্তমানে তেলের দাম লিটার প্রতি ১০ টাকা বেড়ে ২ লিটার ২২০ টাকা এবং ডালের দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৬০ টাকায় বিক্রি করছে। চিনির দাম আগের মতো ৫৫ টাকাই রয়েছে। তবে ৩০ টাকা কেজি দামে বিক্রি করা পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রয়েছে।
তেল এবং ডালের দাম বাড়ানোর পাশাপাশি পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধের ব্যাপারে টিসিবির ঊর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী মো. হুমায়ুন কবির বলেন, বাজারের তুলনায় দাম অনেকটাই কম হওয়ার কারণে রাজধানীর প্রায় ২২ এলাকায় কিছু লোকজন তেল আর ডাল কিনে নিয়ে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছিল। এটি আমাদের চোখে ধরা পড়ার কারণে দাম বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি বাজারের তুলনায় টিসিবির পণ্যর দাম অনেক কম থাকায় তেল ও ডালের দাম সমন্বয় করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পেঁয়াজ বিক্রি আসলে বন্ধ হয়নি। আমদানি করা পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। ২-১ দিনের মধ্যে সেটা খালাস হলে আবারো বিক্রি শুরু হবে। আর টিসিবির এই বিক্রয় কার্যক্রম আগামী ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে।
ঢাকায় ১০০টি স্থানসহ সারা দেশে ৪০০ থেকে ৪৫০টি ট্রাকে করে খোলাবাজারে পরিবেশকদের মাধ্যমে টিসিবি পণ্য বিক্রি করছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :