• ঢাকা
  • শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১
মধ্য ও নিম্ন-আয়ের মানুষের ক্ষোভ

জ্বালানি তেলের প্রভাব চালে


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২৭, ২০২১, ১২:১৩ পিএম
জ্বালানি তেলের প্রভাব চালে

ঢাকা : বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠজুড়ে দল বেঁধে আমন ধান কাটছেন কৃষকরা। পাশাপাশি চলছে মাড়াইয়ের কাজ। কৃষকের গোলা ভরছে সোনালি ধানে।

অন্যদিকে সরকারি সিদ্ধান্তেই গত কয়েক মাসে আমদানি করা হয়েছে প্রচুর পরিমাণ চাল। আমদানিতে উৎসাহ দিতে চাল আমদানি শুল্কও কমানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও কমেছে চালের দাম। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বেড়েছে ট্রাক ভাড়া। এই অজুহাতে বেড়েছে চালের দাম।

ভরা মৌসুমেও চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মধ্য ও নিম্ন-আয়ের মানুষেরা। তবে গত সপ্তাহের চেয়ে বাজারে শীতকালীন সবজির দাম খানিকটা কমেছে।

রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খোলা বাজারে সব ধরনের চাল প্রতি কেজি দেড় থেকে দুই টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন এলাকা থেকে রাজধানীতে চাল আনতে ট্রাকপ্রতি ভাড়া বেড়েছে গড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। এর প্রভাবেই বেড়েছে চিকন-মোটা সব চালের দাম। জ্বালানির প্রভাবে চাল পরিবহন খরচ বেড়েছে ২৮ শতাংশ। ডিজেলের দাম না বাড়লে আমনের এই মৌসুমে পাইকারি ও মিল পর্যায়ে কেজিতে চালের দাম ৫০ থেকে ৬০ পয়সা কমতো। কিন্তু এবার উল্টো বেড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে। সাধারণ মানের নাজিরশাইলও চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি। এ ছাড়া আঠাশ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, কাজল লতা ৫২ থেকে ৫৪ টাকা, পাইজাম ৫২ থেকে ৪৫ টাকা, গুটি স্বর্ণা ৪২ থেকে ৪৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

টিসিবির হিসাবে, মিনিকেট ও নাজিরশাইলসহ সরু চালের দাম গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ  বেশি। চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬৮ টাকা কেজি দরে। গত বছর একই সময় যা বিক্রি হয়েছে ৫৪ থেকে ৬২ টাকা কেজি দরে। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা কেজি দরে।

চালের আরো বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করছেন সাধারন মানুষ। নিউমার্কেট এলাকার রিকশা চালক করিম মিয়া জানান, প্রতিদিন যা উপার্জন হয় তাতে সাত জনের সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার ওপর দিন দিন বাড়ছে চালের দাম। সামনের দিনগুলোতে কিভাবে চলবেন তা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় তিনি।

এদিকে সরকার অনুমতি দিয়েছে চাল আমদানির। এর অংশ হিসেবে সরকার ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট ১২ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানির জন্য সরবরাহকারী দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি করেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সরকার চাল কিনেছে ১০ লাখ ৬৬ হাজার টন। এ ছাড়া গত অর্থবছরের শেষের দিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় ৩২০টি বেসরকারি কোম্পানিকে ১৫ লাখ ৬১ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে আরও ৪১৫টি বেসরকারি সংস্থাকে ১৬ লাখ ৯৩ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। চলতি বছরের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি হয়েছে ১০ লাখ ৬৫ হাজার টন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় গুদামগুলোয় চালের মজুত ছিল ১২ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন।

বাবুবাজার চালের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির আগে ট্রাক ভাড়া ছিল ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এখন তা ২২ থেকে ২৪ হাজার টাকা। এ হিসেবে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ২৫০ টাকা। আর কেজি প্রতি দাম বেড়েছে দুই থেকে চার টাকা। একই কারণে প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও।

বাদামতলী-বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিনের দাবি, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির পরে জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, কুষ্টিয়ার বড় মোকাম থেকে ঢাকায় ট্রাকের ভাড়া এরই মধ্যে কমপক্ষে তিন থেকে চার হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে চালের দামে। এই দাম কমার সম্ভাবনা নেই।

কৃষি বিপণন বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, গত ২১ নভেম্বর বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের খুচরা মূল্য ছিল ৪৪ টাকা থেকে ৪৮ টাকার মধ্যে। গত মে মাসে মোটা চালের দাম ছিল ৪২ টাকা ৬৩ পয়সা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত জুলাই থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ৭ লাখ ৭৩ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময় চাল আমদানির পরিমাণ ছিল শূন্যের কোঠায়। আমদানিকৃত চালের মধ্যে সরকার এনেছে ৪ লাখ ৯৪ হাজার টন। আর ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৭৯ হাজার টন। চালের আমদানি বাড়াতে সরকার চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে। ফলে গত অর্থবছরের শেষে চাল আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৩ লাখ ৫৯ হাজার টন।

এদিকে বাজারে দিনদিন কমছে শীতকালিন সবজির দাম। গতকাল কেজি প্রতি শিম বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও দাম ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আর চলতি মাসের শুরুর দিকে ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি। শিমের পাশাপাশি গেলো গাজরের দামও কিছুটা কমেছে। মানভেদে গাজরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১০০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা।

শিম ও গাজরের দাম কিছুটা কমলেও আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পাকা টমেটো। গত সপ্তাহের মতো পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। আর কাঁচা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি।

এদিকে পটল, বরবটি, ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। ফুলকপির পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং বাঁধাকপির পিস ৩০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

দাম অপরিবর্তিত থাকার তালিকায় থাকা অন্য সবজির মধ্যে ঝিঙের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কাঁচকলার হালি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, লালশাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকা, মুলাশাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাক বিক্রি হচ্ছে। আর পালংশাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা।

অপরিবর্তিত রয়েছে মুরগির দামও। ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩২০ টাকা। লাল লেয়ার মুরগি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা।

মুরগির পাশাপাশি অপরিবর্তিত রয়েছে ডিম ও পেঁয়াজের দাম। গত সপ্তাহের মতো ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর পেঁয়াজের কেজি গত সপ্তাহের মতো ৫০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

আর মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কাতল মাছ। শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে টাকি মাছ। শোল মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।

তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। নলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি। সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দাম পরিবর্তন আসেনি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!