ঢাকা : ওমিক্রন আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত এবং দ্রুত ব্যবস্থা নিতে দেশের বিমানবন্দর ও সীমান্তের স্থলবন্দরগুলোতে সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন। সেখানে চেকপোষ্টগুলোতে করোনা পরীক্ষা জোরদার করা হয়েছে। তবে সেখানে র্যাপিড টেস্টের ব্যবস্থা নেই।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, ‘থার্মাল মেশিন সক্রিয় আছে। তবে র্যাপিড টেস্টের বিষয়ে এখনও কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। করোনা পরীক্ষার কার্যক্রম চলছে টিমেতালে। ফলে বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের দ্বারা করোনার নতুন ধরন ছড়ানোর শঙ্কা আমাদের মধ্যে থেকেই যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, দেশের তিন আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর ও পাঁচটি স্থলবন্দরে বসানো থার্মাল মেশিনগুলোতে যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রার ফল কতটুকু সঠিক আসছে তা নিয়েও নানা রকমের প্রশ্ন রয়েছে। তবে এই মেশিন দিয়েই চলছে করোনা পরীক্ষার কাজ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বড় তিন বিমান বন্দর ঢাকার শাহজালাল, সিলেট ওসমানী ও চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমান বন্দরে থার্মাল স্ক্যানার মেশিন বসানো হলেও সেগুলো বেশির ভাগ সময়ই দ্রুত সার্ভিস দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমান বন্দরে যাত্রীদের মাঝে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করা হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিমান বন্দরে বসানো থার্মাল মেশিন ভালো ভাবে কাজ করছে না। যদিও বিষয়টি স্বীকার করছেন না বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
কুমিল্লার বাসিন্দা শফিউল্লাহ গত সোমবার কাতার থেকে দেশে ফিরেছেন। তিনি বলেন, বিমান থেকে নামার পর কনকোর্স হলে স্থাপিত স্ক্যানার মেশিন দিয়ে পরীক্ষার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন স্বাস্থ্য কর্মী। তা সক্রিয় ছিল না। নিজের পকেট থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিমান বন্দরের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ শরীফ জানান, র্যাপিড টেস্টের ব্যবস্থা একমাত্র ঢাকায় শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরে রয়েছে। এ ছাড়া আর কোথাও নেই। তবে তারা বিশেষ করে দুবাই ও আফ্রিকা থেকে আসা যাত্রীদের স্বচ্ছ ভাবে স্ক্যানিং করছেন।
এই কর্মকর্তা মনে করছেন, থার্মাল মেশিনে তাপমাত্রার ফল কম-বেশি আসে। তা নিয়ম মোতাবেক কাজ করছে না। এক নাগাড়ে অনেক পরীক্ষা করা হলে মাঝে মধ্যে ফল্ট করে বলে মন্তব্য করছেন তিনি।
যদিও শাহ আমানত বিমানবন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার এম ফরহাদ হোসেন দাবি করেছেন, সব কিছু ঠিকমতো চলছে। সুরক্ষার জন্য যেসব ব্যবস্থা থাকা দরকার তার সবটাই আছে।
অন্যদিকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগের নির্দেশনা মতোই কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিমান বন্দরটির ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ।
শাহজালাল বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, এ বিমান বন্দরে সংশ্লিষ্টরা র্যাপিড টেস্ট ও নতুন ধরন ভ্যারিয়েণ্ট অমিক্রন প্রতিরোধে সতর্ক সঙ্কেত দিয়েছেন। যা দেয়া হয়েছে মৌখিক। ওই আলোকেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তিন বিমান বন্দরে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের করোনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে দ্রুত শনাক্তে তেমন কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেই। ফলে বেশিরভাগ যাত্রী পরীক্ষা ছাড়াই গ্রামে চলে যাচ্ছেন। এরফলে করোনার ভয়াবহ ধরন ভ্যারিয়েন্ট অমিক্রনের আক্রমনের শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। আর যারা আফ্রিকা বা দুবাই কাতার যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসছেন। তাদের অনেকে কর্তৃপক্ষকে দেয়া ঠিকানায় থাকছেন না। বেশির ভাগই পালিয়ে রয়েছেন। ফলে গত এক মাসে আফ্রিকা থেকে আসা আড়াইশ প্রবাসীর খোঁজ মিলছে না।
এদিকে বিমান বন্দর হয়ে দেশে প্রবেশ করা ব্যক্তির নাম-ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর সংরক্ষণ করা ছাড়া তেমন কিছুই করা হচ্ছে না। এসব বিদেশ ফেরত আসা ব্যক্তি গ্রামে গিয়ে কোয়ারেন্টাইনে থাকছে কি না, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন কি না তা দেখভালও করছে না কেউ।
অপরদিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, থার্মাল মেশিন সক্রিয় আছে। তবে র্যাপিড টেস্টের বিষয়ে এখনও কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে দেশের ১২টি স্থলবন্দরে এখন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্তে শুধু যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা মাপা, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার ও যাত্রীরা দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে। বেনাপোল, আখাউড়া, ভোমরা, হিলি, বুড়িমারী ও বাংলাবন্দর সীমান্ত চেকপোষ্টে বসেনি থার্মাল স্ক্যানার মেশিন। তবে ভ্যারিয়েন্ট অমিক্রন ঠেকাতে ওই সকল সীমান্ত চেকপোষ্টে পরিক্ষা নিরীক্ষার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, এসব বন্দরে চিকিৎসক ও নার্স অপ্রতুল থাকায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত চিকিৎসা দেয়া যাচ্ছে না। তবে সম্প্রতি বন্দরগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সরঞ্জাম দরকার ও সঙ্কট রয়েছে তা জানতে চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী তারা চাহিদাও দেওয়ার কথা ভাবছেন।
অন্যদিকে স্থলবন্দরে থার্মাল স্ক্যানার মেশিন না থাকায় ঝুঁকি ও উদ্বেগ বাড়ছে। তারা মনে করছেন, খুব দ্রæত এই মেশিন বসানো দরকার বলে মনে করছেন। কারণ হিসেবে বলছেন, নতুন ধরনের ভ্যারিয়েন্ট অমিক্রনের ঝুঁকি বেশি। গতকাল প্রতিবেশী দেশ ভারতে দুইজন পুরুষের মধ্যে করোনার ভ্যারিয়েন্ট অমিক্রন জীবানু পাওয়া গেছে। এর ফলে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা ব্যক্তির শরীরেও এই ধরন জীবানু থাকা আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে তা ছড়িয়ে পড়বে সারাদেশে। ক্রমান্বয়ে আক্রান্ত হবেন তার কাছের মানুষজন। এভাবে তা সারাদেশে ছড়িয়ে যাবে।
তবে স্থলবন্দর সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দেশকে করোনার নতুন ধরন ভ্যারিয়েন্ট অমিক্রন থেকে রক্ষায় বন্দরগুলোর প্রতিটি খোলা না রেখে দেশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট করে দেওয়া উচিত। এতে জানা যাচ্ছে, কোন দেশ থেকে কতজন যাত্রী দেশে প্রবেশ করল।
জানা গেছে, দেশের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন এক হাজারের বেশি যাত্রী ভারত থেকে আসছে ও যাচ্ছে। বিশেষ করে ভারত থেকে আসা যাত্রীরা করোনায় আক্রান্ত কি না, তা পরীক্ষার জন্য র্যাপিড টেস্টের কোনো ব্যবস্থাই নেই সীমান্তের চেকপোষ্টে। ফলে ভারত থেকে আসা ব্যক্তিদের কাছ থেকে করোনার ধরন ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
অন্যদিকে সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দরের উপপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, আমাদের এখানে কোনো ধরনের থার্মাল স্ক্যানার নেই। এ মেশিন বসানো হবে কি না জানি না। তবে এটি বসানো দরকার।
লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন বলেন, এখানে জ্বর পরিমাপের জন্য কোনো থার্মাল স্ক্যানার বসানো হয়নি। তবে তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য ডিজিটাল থার্মোমিটার ব্যবহার করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বলেন, আমাদের করোনার সময় ৫টি বন্দরে থার্মাল স্ক্যানার মেশিন দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো এখনও সক্রিয় আছে। কিন্তু যারা আসছে তাদের দ্রুত পরীক্ষার জন্য বন্দরগুলোতে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেই।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :