ঢাকা : দেশে ফের করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি চলছে। আগামী মার্চ-এপ্রিলে আবারো সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ আশঙ্কা থেকে চলতি মাসের মধ্যেই হাসপাতালগুলোকে পুরোপুরি প্রস্তুত করার লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে আগের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
দেশে গত একদিনে নতুন শনাক্ত, শনাক্তের হার এবং মৃত্যু সবই বেড়েছে। নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরো ৬৭৪ জন। আগের দিন শনাক্ত হয়েছিলেন ৫৫৭ জন। গত একদিনে মারা গেছেন চারজন, তার আগের দিন এ সংখ্যা ছিল একজনে।
সোমবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি হেলথ) অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে মার্চ-এপ্রিলে সংক্রমণ আবার বাড়তে পারে। সেই আশঙ্কা মাথায় রেখে আমরা জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত করতে কাজ করছি। জানুয়ারির মধ্যেই হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত করার লক্ষ্য রয়েছে।
ডিজি হেলথ বলেন, জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে ১০ শয্যার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) প্রস্তুত রাখার লক্ষ্য রয়েছে আমাদের। এছাড়া প্রতিটি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন পরিপূর্ণভাবে স্থাপন করা হবে। জানুয়ারির মধ্যেই এসব কাজও শেষ করার পরিকল্পনা আছে আমাদের।
তিনি আরো জানান, যারা বিভিন্ন ধরনের কো-মরবিডিটিতে ভুগছেন যারা তারা ৬০ বছরের চেয়ে কম বয়সী হলেও বুস্টার ডোজ পাবেন। দুয়েকদিনের মধ্যেই এই বয়সসীমা কমিয়ে আনা হবে। এসএমএস ছাড়াও ষাট বছরের কম বয়সী কো-মরবিড রোগীরা আগের কেন্দ্রে টিকা নিতে পারবেন, সে ক্ষেত্রে তাদের রোগের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমাণ থাকতে হবে।
এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্তদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি, তাদের বুস্টার ডোজ নেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে টিকা কার্ড নিয়ে কেন্দ্রে যেতে হবে। তাকে বলতে হবে তার শারীরিক অসুস্থতা রয়েছে। একটা লোকের ক্যানসার আছে, কিন্তু বয়স ৪০। সে বাদ যাবে কেন? আমরা তাকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করবো। টিকার জন্য নিবন্ধন করার সময় সব তথ্য নেওয়া হয়েছে। এটা দেখেই নিশ্চিত হওয়া যাবে তার কো-মরবিডিটি আছে কিনা। আর কেউ যদি নিবন্ধনের সময় তথ্য না দিয়ে থাকে, তাহলে সে দেখাবে যে ক্যানসারে আক্রান্ত।
তিনি বলেন, অনেক ধরনের কো-মরবিডিটি আছে। আমরা চিন্তা করছি, যেসব কো-মরবিড রোগী বেশি ঝুঁকিপূর্ণ—যেমন: ক্যানসারে আক্রান্ত, অ্যান্টিক্যানসার ড্রাগ খেয়েছে, রেডিয়েশন পেয়েছে, কেমোথেরাপি পেয়েছে, ইমিউন দুর্বল—এ ধরনের মানুষের আমরা প্রাধান্য দিতে চাচ্ছি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত একদিনে শনাক্তের হার তিন দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে গত ২ অক্টোরব এর চেয়ে বেশি তিন দশমিক ৪১ শতাংশ ছিল শনাক্তের হার। নতুন শনাক্ত হওয়া ৬৭৪ জনকে নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হলেন ১৫ লাখ ৮৭ হাজার ১৪০ জন। আর নতুন চারজনকে নিয়ে সরকারি হিসাবে মোট মারা গেলেন ২৮ হাজার ৮১ জন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে এখনো আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। করোনা সংক্রমণের হার শতকরা ৩ ভাগেরও কম। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগের চাইতে কিছুটা ক্লাসের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। গতকাল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। যদি আমাদের মনে হয়, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য ক্লাস কমাতে হবে, কমিয়ে দেবো। বন্ধ করার প্রয়োজন হলে বন্ধ করে দেবো।
তিনি আরো বলেন, পাশের দেশ ভারতে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে। আমাদের দেশে এ হার একদমই নিম্নমুখী। এরই মধ্যে কয়েকজনের দেহে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। তাই আমাদের খুবই সতর্ক থাকতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
দীপু মনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে মার্চ মাসে এদেশে সংক্রমণ বাড়তে দেখা গেছে। তাই মার্চ মাস না আসা পর্যন্ত পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে সেটা বোঝা যাবে না। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মানলে সংক্রমণ কম রাখতে পারবো।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :