ঢাকা : স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন প্রকল্প তদারকিতে জেলা প্রশাসনে শাখা সৃষ্টির প্রস্তাব ছিল দীর্ঘদিন ধরেই। চলমান ডিসি সম্মেলনেও একই প্রস্তাব করা হয়। তবে ডিসিদের এই প্রস্তাবে সায় দেয়নি পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান।
মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিনদিনের ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় সেশন শেষে সাংবাদিকদের এক কথা জানান মন্ত্রী।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বৈঠকে জেলা প্রশাসকরা স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যেন কমিটি করা হয় সে প্রস্তাব করেছিল। তবে আমরা বলেছি, কমিটি করার প্রয়োজন নেই। ডিসিদের এলাকায় কাজ দেখার অধিকার আছে। আমরা আপনাদের (ডিসি) সঙ্গে ঘন ঘন যোগাযোগ করি, চিঠি দিই। সে অনুযায়ী আপনারা কাজ করবেন। আর কিছু প্রয়োজন হলে আমরা তো আছি। আমিও ডিসি ছিলাম। আমি মনে করি কমিটি করার প্রয়োজন নেই। যথেষ্ট দায়িত্ব ও ক্ষমতা ডিসিদের হাতে আছে। এটাকে প্রয়োগ করা প্রয়োজন। সেজন্য ব্রিটিশ ধারণার যে ইনস্পেকশন, সেটার প্রয়োজন নেই। তারা দেখতে যাবে, ওভার সি করবে, সেটা আরও বেশি করে করার জন্য ডিসি সাহেবদের অনুরোধ করেছি।
জেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন বিষয়ে এম.এ মান্নান বলেন, আমি ডিসিদের বলে দিয়েছি, এটা তো অলরেডি বিধান আছে। জেলা প্রশাসকরা তাদের এলাকায় যেসব প্রকল্প আছে সেগুলো দেখতে পারেন। দেখা মানে কিন্তু ইনস্পেকশন নয়, ইনস্পেকশন শব্দটা ভয়ংকর। পরিদর্শন অর্থে বলেছি। যাওয়া আসা খোঁজখবর নেওয়া। সেটাকে আমরা আন্ডারলাইন করেছি। সরকারি প্রকল্পে বিদেশি ঋণ বোঝাতে ‘সহায়তা’ শব্দটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকদের বৈঠকে সচেতন করা হয়েছে।
এম.এ. মান্নান বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে আইএমইডির কার্যালয় করার ব্যাপারে আমাদের সরকার প্রধানের একটা নির্বাহী আদেশ আছে। আইএমইডির স্থাপনা যেন মাঠ পর্যায়ে তৈরি করা হয়। বিভাগীয় পর্যায়ে আমরা অফিস করবো। সেটাকে বাস্তবায়নের জন্য আমরা বিভাগীয় প্রধানের সহায়তা চেয়েছি।
ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) আয় বাড়ানো ও শক্তিশালী করার জন্য ডিসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। ডিসি সম্মেলনের প্রথম দিন মঙ্গলবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তৃতীয় অধিবেশন শেষে তিনি বলেন, সম্মেলনে জেলা প্রশাসকরা তাদের মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতাগুলো তুলে ধরেছেন, কিছু কিছু প্রস্তাব এসেছে। সেখানে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালী করার জন্য কী ব্যবস্থাপনা হাতে নেওয়া যায় সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের পৌরসভাকে শক্তিশালী করা এবং গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়নের জন্য সেখানে আলোচনা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু কিছু সমস্যা আছে, সেখানে অবকাঠামো নির্মাণে স্বাভাবিক জায়গার চেয়ে বেশি ব্যয় হয়। সেগুলোর জন্য আরও বেশি বরাদ্দ দেওয়ার কথা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি রাষ্ট্রের সব জায়গায় সমভাবে আয় বাড়ানোর ব্যবস্থা নেই। কিছু কিছু জায়গায় কম হয়। সেখানে যাতে ভর্তিুকি দেওয়া হয় সেই প্রসঙ্গ এসেছে। এগুলো যৌক্তিকতার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির জন্য বলা হয়েছে।
আয় বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আয় এবং তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তাদের কিছু কর্মচারী লাগবে। ইউপিতে আরও লোকবল লাগবে, এটি করতে গেলে তাদের আয় বাড়াতে হবে। আয় বাড়ানোর জন্য এখানে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী সকালে এ কথাগুলো বলেছেন, আমিও আমার বক্তৃতায় গুরুত্ব দিয়েছি। আমি বলেছি জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তা, বিভিন্ন পেশাজীবীরা সবাই মিলে সম্মিলিত ভাবে বাংলাদেশের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
ইউএনও-উপজেলা চেয়ারম্যান দ্ব›দ্ব প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, সব জায়গায় একই রকম সমস্যা হয় এটা বলা যাবে না। অনেক জায়গায় ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যান একসঙ্গে অনেক ভালো ভাবে কাজ করছেন। আবার কোথাও সমস্যা হয়। ক্ষেত্র বিশেষে যেখানে যেখানে জটিলতা আছে সেখানে কাজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল, আর আমি নিজেও এটাকে গুরুত্ব দিয়েছি। আমাদের সবাইকে বিশ্বাস করতে হবে। এখানে কোনো বিতর্ক করার সুযোগ নেই। জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, শিক্ষক সবার প্রয়োজন আছে। কৃষকদেরও উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। সবারই প্রয়োজন আছে। সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এগুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
রাজনীতিকদের সঙ্গে কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্বের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, দেশটা পরিচালিত হয় রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে। রাজনীতিতে নীতি তৈরি করা, আইন তৈরি করা, জনগণের দাবি আদায় করা, প্রশাসনিক কর্মকতাদের অধিকার আদায় করা সবার জন্যই রাজনীতি প্রয়োজন। রাজনীতির সঙ্গে কোনো দ্ব›দ্ব নেই। কোথাও কোথাও ব্যক্তিগত ভাবে সমস্যা তৈরি হলে এটাকে অবশ্যই রাষ্ট্র নিরসন করবে। এই অঙ্গীকার রাষ্ট্রের আছে এবং আমরাও অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমাদের জেলা প্রশাসক যারা দূর-দূরান্তে বিভিন্ন জায়গায় যাবেন, তারা যেন শান্তিপূর্ণ ভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন এজন্য রাষ্ট্র অঙ্গীকারাবদ্ধ।
সোনালীনিউজ/এমএএইচ
আপনার মতামত লিখুন :