• ঢাকা
  • রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

জ্বালানি খাতে জিম্মি গ্রাহক


বিশেষ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২২, ০৫:৫২ পিএম
জ্বালানি খাতে জিম্মি গ্রাহক

ঢাকা : করোনা মহামারির প্রভাবে গত দুই বছর আয়-ব্যয়ের সমন্বয় হচ্ছে না সাধারণ মানুষের। প্রতিদিন বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। কিছুদিন আগে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির চাপে দিশেহারা মানুষ। 

এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) আবারো বাড়লো এলপি গ্যাসের দাম। 

এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি সব শ্রেণির গ্রাহকের গ্যাসের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। 

এভাবে একযুগে এলপি গ্যাসের দাম ৩৫০ টাকা থেকে শুরু করে বাড়তে বাড়তে হয়েছে ১২৪০ টাকা। আর গত ১২ বছরে মোট সাতবার সব শ্রেণির গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাসসহ সবধরনের জ্বালানি খাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে গ্রাহক। দেশে এক বছরের অধিক সময় ধরে লাগাতার নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকায় এই সময়েই জ্বালানি ও গ্যাসের দাম বাড়ানো উদ্বেগজনক। 

তাদের মতে, জ্বালানি সেক্টরে দুর্নীতিপরায়ণতা, বিতরণে নৈরাজ্য, গ্যাস চুরি ও অবৈধ সংযোগ এবং সরবরাহ লাইন থেকে অবৈধ বিতরণ বন্ধে কঠোর নয় সরকার। 

এছাড়া দেশে গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। বরং গ্রাহকদের জিম্মি করে বারবার গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে দিশেহারা মানুষ। 

এ পরিস্থিতিতে সব ধরনের গ্যাসের দাম আবার বাড়ালে সাধারণ মানুষ আরো ভোগান্তিতে পড়বে। 

এ অবস্থায় মীমাংসিত সামুদ্রিক ব্লক ও স্থলভাগে নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান এবং নতুন উত্তোলন গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন তারা। আর দেশের মানুষের জীবনমানের কথা চিন্তা করে জ্বালানি ও গ্যাস খাতে ভর্তুকি বৃদ্ধির আহ্বান জানান জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। 

তবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতি মাসেই এলপিজির দাম সমন্বয় করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে যখনই তেল বা এ-জাতীয় পণ্যের দাম ওঠানামা করে, তখনই দেশেও এ সম্পর্কিত পণ্যের দামও ওঠানামা করে।
 
এদিকে ফেব্রুয়ারি মাসে এলপিজির (১২ কেজি) দাম এক হাজার ২৪০ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), যা জানুয়ারি মাসে ছিল এক হাজার ১৭৮ টাকা। যানবাহনে ব্যবহূত অটোগ্যাস লিটার প্রতি ৫৭ দশমিক ৮১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) নতুন এই দর ঘোষণা দিয়েছে। 

ভার্চুয়াল এই দর ঘোষণা অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিইআরসি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল, কমিশনের সদস্য মকবুল ই-এলাহী চৌধুরী, মোহাম্মদ আবু ফারুক, মোহাম্মদ বজলুর রহমান। ঘোষিত দর গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে কার্যকর হবে বলে জানান চেয়ারম্যান।

গত বছরের ১২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো এলপি গ্যাসের দর ঘোষণা করে বিইআরসি। তখন বলা হয়েছিল, আমদানিনির্ভর এই জ্বালানির সৌদি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি আরামকো ঘোষিত দরকে ভিত্তিমূল্য ধরা হবে। সৌদিতে দর ওঠানামা করলে ভিত্তিমূল্য ওঠানামা করবে। অন্যান্য কমিশন অপরিবর্তিত থাকবে। 

জানুয়ারি মাসে সৌদি সিপির দর ছিল প্রোপেন ৭৪০, বিউটেন ৭১০ ডলার, যা চলতি মাসে বেড়ে মেট্রিক টন ৭৭৫ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। ঘোষণার পর থেকে প্রতি মাসে এলপিজির দর ঘোষণা করে আসছে বিইআরসি। কিন্তু বাস্তবে সেই দরের পুরোপুরি প্রতিফলন হচ্ছে না। কোথাও বেশি দরে আবার ক্ষেত্রবিশেষে কম দরে বিক্রির খবর মিলেছে। ১২ এপ্রিলের আগে পর্যন্ত এলপিজির দর ছিল কোম্পানিগুলোর ইচ্ছাধীন।
 
অন্যদিকে গত ১৮ জানুয়ারি সব শ্রেণির গ্রাহকের গ্যাসের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। আবাসিক গ্রাহকের ব্যবহূত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৯ টাকা ৩৬ পয়সা থেকে ২০ টাকা ৩৫ পয়সা এবং শিল্পে ব্যবহূত প্রতি ঘনমিটারের গ্যাসের দাম ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৩ টাকা ২৪ পয়সা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। 

একই সাথে ক্যাপটিভে (শিল্পকারখানায় নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহূত গ্যাস) ১৩ টাকা ৮৫ পয়সার স্থলে ৩০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। 

ইতোমধ্যে ৬টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির মধ্যে তিনটি তিতাস, বাখরাবাদ ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি গত সপ্তাহে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) পৃথকভাবে এই প্রস্তাব জমা দিয়েছে। বাকি তিনটি কোম্পানির প্রস্তাব জমা দেয়ার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। 

এ প্রস্তাব আমলে নিলে আবাসিকে এক চুলা ৯২৫ টাকা থেকে বেড়ে ২ হাজার টাকা এবং দুই চুলার ক্ষেত্রে ৯৭৫ টাকা থেকে বেড়ে ২ হাজার ১০০ টাকা হবে। পেট্রোবাংলার এক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

এদিকে আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্যাসের ক্ষেত্রে সিস্টেম লসের কারণে কিছু লোকসান হওয়ার কথা। কিন্তু গত কয়েক বছর দেখা যাচ্ছে সরবরাহ করা গ্যাসের চেয়ে বিল বেশি হচ্ছে। এটাকে সিস্টেম গেইন হিসেবে দেখানো হচ্ছে হিসাবের খাতায়। ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে সিস্টেম গেইন করেছে তিতাস। 

সংস্থাটির ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সিস্টেম গেইন ছিল তিন দশমিক ৮৯ শতাংশ। একই বছর জালালাবাদের সিস্টেম গেইন ছিল শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ, কর্ণফুলীর চার দশমিক ২৯, বাখরাবাদের চার শতাংশ এবং পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির তিন দশমিক ৯৪ শতাংশ। 

অর্থাৎ কোম্পানিগুলো গ্যাসের বদলে বাতাস বিক্রি করে ওই পরিমাণ আয় করেছে। তারপরও ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরেই সব পর্যায়ের গ্রাহকের ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয় ২৬ শতাংশ।

২০১৯ সালের জুনে সর্বশেষ সপ্তমবারের মতো গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার। যখন বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম কমেছে শতকরা ৫০ ভাগ, যখন ভারত তাদের ভোক্তাদের জন্য গ্যাসের দাম কমিয়েছে ১০১ রুপি, তখন বাংলাদেশে অবিশ্বাস্য হারে দাম বাড়ানো হয়। 

সে সময়ে আবাসিকে দুই চুলার খরচ ৮০০ থেকে বাড়িয়ে ৯৭৫ টাকা করা হয়। বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদন, হোটেল ও রেস্তোরাঁ, ক্যাপটিভ পাওয়ার, শিল্প ও চা বাগানে ব্যবহূত গ্যাসের দাম গড়ে ৩২ শতাংশ ০৮ শতাংশ বাড়ে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ, কৃষি ও শিল্প-এই তিন খাতে ব্যবহূত গ্যাসের দাম গড়ে ৪৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, লক্ষ করা দরকার বিগত ১২ বছরে মোট সাতবার গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার। 

কিন্তু এর বিপরীতে, গ্যাস খাতে দুর্নীতি, ব্যবস্থাপনায় অদূরদর্শিতা, বিতরণে নৈরাজ্য, গ্যাস চুরি ও অবৈধ সংযোগ, সরবরাহ লাইন থেকেই অবৈধ বিতরণ, ১২ শতাংশ সিস্টেম লস, অন্যায্য মিটারিংয়ের সমস্যা দূর করতে বিশেষ কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি। 

পাশাপাশি, এলএনজি আমদানির মাত্রাতিরিক্ত খরচ আর এলএনজি ও গ্যাস পাইপলাইনের প্রকল্পের ধীরগতি এখনো দূর হয়নি। গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়টি উপেক্ষা করে অতিমাত্রায় আমদানিনির্ভর জ্বালানি নীতি ভবিষ্যতে আরো বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।

তিনি বলেন, প্রতি বছর প্রায় ১২ লাখ টন এলপিজি বাংলাদেশে আমদানি করা হয়। আর এই আমদানির জন্য যে অর্থ ব্যয় হয়, ভোক্তাদের তার প্রায় ১০ গুণ টাকা দিয়ে এলপিজি কিনতে হয়। বাংলাদেশে ভোক্তাদের সিলিন্ডারপ্রতি কমপক্ষে ১০০ টাকা করে বেশি দিতে হয়।

শামসুল আলম বলেন, এলপিজির ব্যবসায়ীরা দাম নির্ধারণের জন্য বিইআরসিতে আবেদন না করার কারণে দীর্ঘদিন এই পণ্যটির কোনো দাম নির্ধারণ হয়নি। গত বছর আদালতের নির্দেশনার পর এই পণ্যটির দাম নির্ধারণে গণশুনানি হয়। সর্বশেষ গত বছর এপ্রিলে একটি গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে তখন যে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল, সেটি এলপিজি ব্যবসায়ীরা কার্যকর না করায় ভোক্তা অধিকারের পক্ষে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ আপত্তি তোলে।

অভিযোগ করে তিনি বলেন,  বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন সমন্বয় করে গ্যাসের যে দাম নির্ধারণ করে তা কখনোই তেমন কার্যকর হতে দেখা যায় না। ফলে সেটি ভোক্তাদের ওপর কী প্রভাব ফেলে তাও বোঝা যায় না।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, গ্যাস উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ না হওয়ার কারণে দেশে এলপিজি একটি আমদানিনির্ভর পণ্য। অ

পরিশোধিত তেল শোধনাগারে নিয়ে পরিশোধনের পর তেলের পাশাপাশি প্রায় ১০টি পণ্য বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে বেরিয়ে আসে। এলপি গ্যাস তার মধ্যে একটি। যার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে যখনই তেল বা এ-জাতীয় পণ্যের দাম ওঠানামা করে তখনই এ সম্পর্কিত পণ্যের দামও ওঠানামা করে। এ ধরনের পণ্যের কোনো সুনির্দিষ্ট দাম থাকে না। 

একদিন এমনকি ঘণ্টার পার্থক্যের কারণেও দাম পরিবর্তিত হয়ে যায়। আর এ কারণেই এলপিজির দামও ঘন ঘন পরিবর্তন হয়। তার মতে, দামের এমন ওঠানামা সহ্য করা ছাড়া খুব বেশি কিছু করার নেই।

তিনি বলেন, এর আগে এলপি গ্যাসের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে না থাকায় এ বিষয়ে তেমন একটা নজরে আসেনি। যার কারণে এই প্রভাবের সাথে বাংলাদেশের মানুষ খুব বেশি একটা পরিচিত নয়। তবে বিশ্বের অন্য শহরগুলোতে এটা নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ডা. ইজাজ হোসেন বলেন, সরকার যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ এলপিজি আমদানি করে বাফার স্টক বা মজুত করতে পারতো যাতে এগুলো দাম বাড়ার সময়টাতে ব্যবহার করা যেতো, তাহলে এই দাম সমন্বয়ের বিষয়টি কিছুটা স্থিতিশীল করা সম্ভব। তবে এ সময় কখনোই তিন মাসের বেশি হওয়া সম্ভব নয়।

তিনি আরো বলেন, দুর্নীতিপরায়ণতা, ব্যবস্থাপনায় অদূরদর্শিতা, বিতরণে নৈরাজ্য, গ্যাস চুরি ও অবৈধ সংযোগ, সরবরাহ লাইন থেকেই অবৈধ বিতরণ, ১২ শতাংশ সিস্টেম লস, অন্যায্য মিটারিং, এলএনজি আমদানির খরচ বাড়িয়ে দেখানো, এলএনজি ও গ্যাস পাইপ লাইনের প্রকল্পে ধীরতা। এসবের দায় কেন জনগণ নেবে? 

এমনকি মীমাংসিত সামুদ্রিক ব্লক ও স্থলভাগে নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও নতুন উত্তোলন চুক্তিতে ব্যর্থতার কারণেই গ্যাস খাতে ভর্তুকি টানতে হচ্ছে। এদিকে সরকারকে আরো গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য (গ্যাস) মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বিশেষ করে সৌদি আরবে দাম বৃদ্ধির কারণে সব ধরনের গ্যাসের দাম সমন্বয় করা হয়েছে।

প্রতি মাসেই এলপিজির দাম সমন্বয় করার সিদ্ধান্ত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণশুনানি এবং দাম সমন্বয়ের বিষয়টি একটু ভিন্ন। গণশুনানি হয় বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে। এলপিজি এমন একটি পণ্য যেটি বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। আর এ কারণেই আন্তর্জাতিক বাজারে দাম ওঠানামা করলে সে হিসেবে বাংলাদেশেও পণ্যটির দাম সমন্বয় করা হয়। এটি বিইআরসি করে থাকে। আর গণশুনানিতে এলপিজির মজুত ও বোতলজাতকরণের সাথে সংশ্লিষ্ট লাইসেন্স রয়েছে এমন ব্যবসায়ী এবং ভোক্তাদের প্রতিনিধিরা থাকেন। সূত্র : বাংলাদেশের খবর

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!