• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১
জাতির পিতার জন্মদিন

আদর্শ বাস্তবায়নই হোক লক্ষ্য


দ্বীন ইসলাম আরিয়ান মার্চ ১৭, ২০২২, ১১:৪৯ এএম
আদর্শ বাস্তবায়নই হোক লক্ষ্য

ঢাকা : বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের মহানায়ক ও বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা। তার আমৃত্যু সংগ্রাম, অমিত সাহস, অতুলনীয় অর্জন ও উদাহরণযোগ্য ত্যাগের প্রতি আমাদের কুর্নিশ।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তৎকালীন ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মেছিলেন তিনি। তখন উপনিবেশের সময়। ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে তুঙ্গে উঠছে জনমত। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, এ কে ফজলুল হক বাংলার রাজনৈতিক নেতৃত্বে।

১৯১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকাফেরত মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী তখনো কংগ্রেসের নেতৃত্বে আসেননি। মুসলিম লীগের রাজনীতি পূর্ববঙ্গে দানা বেঁধে উঠছে। গোপন সশস্ত্র রাজনীতি আগে থেকেই তৎপর। ব্রিটিশ উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামের সহিংস ও অহিংস ধারার পাশাপাশি উপনিবেশ তোষণের সুবিধাবাদী রাজনীতির মিশ্র এক প্রেক্ষাপটে জন্ম শেখ মুজিবের।

এরপর দেশবন্ধুর আকস্মিক মৃত্যু, গান্ধীর অহিংস রাজনীতি, বিপ্লবী রাজনীতির উত্থান, ত্রিশের মহামন্দা, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষের দুই দশক পর আরেকটি মহাযুদ্ধের দামামা, ১৯৩৭ এর প্রথম নির্বাচন ঘটে গেছে মুজিবের কৈশোরেই। ঘটনাবহুল এ সময়ে তার রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ। স্কুলে থাকতেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে দাবি নিয়ে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সামনে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালেই কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময়ই তিনি মুসলিম ছাত্রদের একটি দলে যোগ দেন। পুরোপুরি রাজনীতিতে জড়ান এখানেই। তার রাজনৈতিক গুরু ছিলেন অক্সফোর্ড শিক্ষিত শহীদ সোহরাওয়ার্দী। যুদ্ধকালীন কলকাতা ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এক দুর্ভিক্ষের শহর। যুদ্ধোত্তর কলকাতা ছিল ভয়াবহ এক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সাক্ষী।

ভয়াবহ এ অভিজ্ঞতা পরবর্তী জীবনের রাজনীতি চর্চায় কাজে লাগিয়েছিলেন শেখ মুজিব। ধর্মীয় জাতীয়তার ভিত্তিতে দেশভাগ তার রাজনৈতিক অভিযাত্রায় বড় অভিঘাত সৃষ্টি করে। দেশভাগের পরপরই পূর্ববঙ্গের মানুষের ওপর নেমে আসা নতুন উপনিবেশের খড়গের আঘাত রুখে দাঁড়ান তিনি। পশ্চিম পাকিস্তানের বর্ণবাদী চরিত্র প্রকাশ পায় ভাষা সংস্কৃতি দখলের উদ্যোগ থেকে।

বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের অগ্রবর্তী সংগঠক হিসেবে আমরা তাকে দেখতে পাই। দেখতে পাই মুসলিম লীগবিরোধী যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী মোর্চার অন্যতম রূপকার হিসেবে।

এর আগে ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা এবং ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে তরুণ শেখ মুজিবুর রহমান নিজেকে পূর্ববঙ্গের মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির আকাক্সক্ষার ধারক হিসেবে নির্মাণ করেন।

এরপর পুরোপুরি অসা¤প্রদায়িক চরিত্র ধারণ করে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দ বাদ দেওয়া এবং আইয়ুবের সামরিক শাসনের সময় দলকে পুনর্গঠন করে পূর্ববঙ্গের মানুষের আকাঙ্খার নতুন স্বদেশ গঠনে শেখ মুজিব হয়ে ওঠেন বাঙালির কেন্দ্রীয় চরিত্র। বাঙালির মুক্তির সনদ হিসেবে পরিচিত ছয় দফার মধ্য দিয়ে তিনি স্বাধিকার আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্বে নিয়ে যান বাঙালি জাতিকে।

এরপর ১৯৬৯-এর তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, আইয়ুব খানের পতন ও ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনের পর তার অবিসংবাদী নেতৃত্বে বাঙালি ইতিহাসের অন্যতম এক রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সংঘটিত ভয়াবহ এক গণহত্যার প্রতিরোধ গড়ে ভারতের সহায়তায় বাঙালি বিজয় লাভ করে ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর।

১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে আসা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনে চারটি নীতি নিয়ে অগ্রসর হন। বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র এ চার নীতি আমাদের সংবিধানের মূলনীতি। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক অঙ্গীকার। জাতীয়তাবাদ অর্থ সংকীর্ণ জাত্যভিমান নয়। উপনিবেশের বিরুদ্ধে জাতিসত্তার লড়াই। ধর্মনিরপেক্ষতা বঙ্গবন্ধুর কাছে ধর্মের বিরুদ্ধাচরণ করা নয়। সব ধর্মচর্চা ও পালনের স্বাধীনতার সুরক্ষা। সমাজতন্ত্র মানে প্রচলিত মার্কসবাদী রাষ্ট্র নয়। বরং কল্যাণকামী রাষ্ট্র গঠন। আর গণতন্ত্র ধর্ম-বর্ণ-জাত নির্বিশেষে সবার রাজনৈতিক ও বাক-স্বাধীনতা রক্ষার কবচ।

উপনিবেশ ও সাম্প্রজ্যবাদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বরাজনীতিতেও আলোচ্য ব্যক্তিত্ব। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক তাকে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক বলে আখ্যা দেন। স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় তার হত্যাকাণ্ড ইতিহাসের আরেক কলঙ্কিত অধ্যায়।

এরপর সামরিক শাসনের দীর্ঘ ছায়ার নিচে বাংলাদেশ দিকভ্রষ্ট ছিল। ১৯৭৫ সালের আগস্টের পর দুই দশক তিনি কার্যত নিষিদ্ধ ছিলেন তার স্বাধীন করা রাষ্ট্রে।

১৯৯৬ সালে তার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রথম সরকার গঠনের পর তিনি আবার সরকারিভাবে স্মরিত হন। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় পর্বের টানা মেয়াদের সরকারের ধারাবাহিকতায় আজ রাষ্ট্রীয়ভাবে তার জন্মশতবর্ষ উদযাপিত হচ্ছে দেশে-বিদেশে। স্বাধীন বাংলাদেশ আজ প্রাপ্য মর্যাদায় তার সেরা সন্তানকে স্মরণ করছে।

বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের প্রধান উপজীব্য যে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসংকীর্ণ অর্থে জাতীয়তাবাদ এখনো কাক্সিক্ষত গন্তব্য খুঁজে পায়নি। এই যাত্রা নিরন্তর। বঙ্গবন্ধুর জীবনের আরাধ্য দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন তা আজ আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সত্যিকার অর্থে এটাই। তার সেই আদর্শ বাস্তবায়নই যেন হয় প্রধান লক্ষ্য।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!