• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

পদ্মা সেতু নিয়ে গুজবের শিকার রেনুর পরিবার কেমন আছে


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ২৫, ২০২২, ০৩:১০ পিএম
পদ্মা সেতু নিয়ে গুজবের শিকার রেনুর পরিবার কেমন আছে

ঢাকা: বাংলাদেশের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হলো। উন্মোচিত হলো যোগাযোগের নতুন দিগন্ত। এ যেন বাঙালির স্বপ্ন ও সাহসের জয়। একই সঙ্গে খুলে গেলো আরও শত সহস্র স্বপ্নের দুয়ার।শনিবার (২৫ জুন) বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এরপর টোলপ্লাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তিনি। সেখানে টোল দিয়ে মাওয়া প্রান্তে উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করে মোনাজাতে অংশ নেন। এর মাধ্যমেই খুলে যায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগের সড়ক পথের দ্বার।

নির্মাণকাজ শুরুর আগে থেকেই পদ্মা সেতু নিয়ে ছিল নানা ষড়যন্ত্র। বাধাগ্রস্ত করতে ছড়ানো হয়েছিল গুজব। সেতু নির্মাণে লাগবে শিশুর মাথা। এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। আতঙ্কিত হয়ে পড়ে মানুষ।

গুজবে কান দিয়ে ২০১৯ সালে সারাদেশে ২১ জন গণপিটুনির শিকার হন। প্রাণ হারান পাঁচজন। এর মধ্যে ওই বছরের ২০ জুলাই বাড্ডায় তাসলিমা বেগম রেনুর (৪০) হত্যাকাণ্ড ছিল সবচেয়ে আলোচিত।

সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করানোর তথ্য নিতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি এখন বিচারিক আদালতে।

যে সেতু নিয়ে এত ষড়যন্ত্র, গুজব, বাধা, প্রাণহানি; সেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলো আজ। সেতু নিয়ে গুজবের বলি রেনুর পরিবারের ক্ষেত্রেও আগ্রহ ব্যতিক্রম নয়। অধীর আগ্রহে ছিলেন তারাও। সব বাধা পেরিয়ে পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলো, তাতেই গর্বিত রেনুর পরিবার।

২০১৯ সালে রেনুর করুণ মৃত্যুর সেই শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি স্বজনরা। পদ্মা সেতু নিয়ে এই মৃত্যু এখনও পীড়া দেয় তাদের। যখনই পদ্মা সেতুর কথা মনে পড়ে, সেতু নিয়ে কোনো কথা কানে আসে, তখনই রেনুর পরিবারের সবার চোখে ভেসে ওঠে রেনুর রক্তমাখা চেহারা, সেই বর্বরতার চিত্র। যে চিত্র ২০১৯ সালের ২০ জুলাই দেখেছিলেন দেশবাসী। শুধু গুজবের বলি হয়েছিলেন রেনু।

পদ্মা সেতু উদ্বোধন সম্পর্কে রেনুর বড় বোনের ছেলে ও রেনু হত্যা মামালার বাদী সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনে আমরা খুবই আনন্দিত। আমার খালা পদ্মা সেতু গুজবের বলি। যেই পদ্মা সেতু নিয়ে গুজব রটিয়ে আমার খালাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, সেই সেতু উদ্বোধন হলো আজ। সব বাধা পেরিয়ে সেই পদ্মা সেতু আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। এটা আমাদের জন্যও গর্বের, অহংকারের। এখন খালা হত্যার বিচারকাজ শেষ হলে আমাদের শান্তি হতো।

সরকারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আর্থিকভাবে আমরা কিছুটা হিমশিম খাচ্ছি সংসার চালাতে। বসুন্ধরা গ্রুপ যে ১০ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে দিয়েছিল তা থেকে প্রতি মাসে প্রায় দুই হাজার টাকার মতো আসে। সেই টাকা দিয়ে প্রতি মাসে চলা কষ্টকর।

সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু আরও বলেন, রেনু খালার বড় ছেলে তাহসিন আল মাহিরের বয়স এখন তেরো বছর। সে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৭ম শ্রেণিতে পড়ে। থাকে স্কুলের হলে। আগে কিছুটা চঞ্চল ছিল, তবে এখন কিছুটা শান্ত হয়ে গেছে। মাহির বলে, ‘ভাইয়া চলো, আমরা একদিন পদ্মা সেতু ঘুরতে যাবো’। তবে সপরিবারে পদ্মা সেতু ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা জানালেন টিটু।

নিহত রেনুর ছোট মেয়ে তুবাকে বলা হয়েছিল তার মা আমেরিকায় আছে। সেও যাবে এক সময়। তবে এখন সে তার মায়ের ছবি দেখলে বলে তার মা চাঁদ হয়ে গেছে। তুবাও চুপচাপ থাকে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, রেনু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল হক ১৫ জনের বিরুদ্ধে গত বছরের সেপ্টেম্বরে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। এর মধ্যে দুজন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় ঢাকার সপ্তম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তাদের বিচার শুরু হয়। আর পৃথক আদালতে চলছে এ মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১৩ অভিযুক্তের বিচার। তবে করোনা মহামারিসহ মামলা জটের কারণে কিছুটা সময় লাগছে বলে আদালত সূত্র জানিয়েছে।

২০১৯ সালের শুরুর দিকে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজের জন্য মানুষের মাথা লাগবে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। এ নিয়ে সারা দেশে বেশ কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। গণপিটুনিতে প্রাণ হারান অন্তত পাঁচজন। অবশেষে পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মানুষকে এই গুজবের ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!