ঢাকা : রাজধানীর উত্তরায় প্রাইভেটকারের ওপর বিআরটি প্রকল্পের ক্রেন থেকে গার্ডার পড়ে একই পরিবারের ৫ সদস্য নিহতের ঘটনায় ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
ক্রেনচালক ও তার সহকারী এবং নিরাপত্তা জন্য নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মীসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বুধবার (১৭ আগস্ট) রাতে ঢাকা, গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ ও বাগেরহাট থেকে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত সোমবার রাজধানীর উত্তরায় প্রাইভেটকারের উপর নির্মাণাধীন বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ক্রংক্রিটের বক্স গার্ডার আছড়ে পড়লে পাঁচজন নিহত ও দুইজন আহত হন। তারা সবাই একই পরিবারের সদস্য।
সোমবার রাতে এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলায় ক্রেইনের অপরেটর, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।
মামলায় প্রকল্পের গার্ডার আছড়ে পড়ে হতাহতের ঘটনায় ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর’ অভিযোগ আনা হয়।
নিহত ফাহিমা আক্তার ও ঝরনা আক্তারের ভাই মো. আফরান মণ্ডল বাবু উত্তরা পশ্চিম থানায় এ মামলা করেন।
উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি মোহাম্মদ মোহসীন জানিয়েছিলেন, মামলায় অবহেলার কারণে প্রাণহানির অভিযোগ করা হয়েছে।
ক্রেইন চালকের পাশাপাশি প্রকল্পের অন্যতম ঠিকাদার কোম্পানি চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশনের (সিজিজিসি) সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে দায়িত্বপ্রাপ্ত অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
সোমবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে উত্তরায় জসীম উদ্দীন বাস স্ট্যান্ড এলাকার প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনের সড়কে বিআরটি প্রকল্পের কংক্রিটের গার্ডার ক্রেইন দিয়ে তোলা হচ্ছিল ট্রেইলারে। এর মধ্যে ভারসাম্য হারিয়ে ক্রেন একদিকে কাত হয়ে যায়।
তখন ক্রেইনে থাকা গার্ডারটি ওই ট্রেইলারের পাশ দিয়ে টঙ্গীমুখী সড়কে চলমান একটি প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে। ভারী ওই গার্ডারের চাপে মুহূর্তের মধ্যে চ্যাপ্টা হয়ে যায় গাড়িটি।
গাড়ির জানালার ধারে থাকা নবদম্পতি হৃদয় (২৬) ও রিয়া মনিকে (২১) টেনে বের করে স্থানীয়রা দ্রুত হাসপাতালে পাঠাতে পারলেও ওই পরিবারের আরও পাঁচজন গাড়ির ভেতর আটকে থাকেন তিন ঘণ্টা।
পরে সন্ধ্যায় গার্ডার সরিয়ে হৃদয়ের বাবা রুবেল মিয়া (৬০), রিয়ার মা ফাহিমা (৪০), খালা ঝর্না (২৮) এবং ঝর্নার দুই সন্তান জান্নাত (৬) ও জাকারিয়ার (২) লাশ উদ্ধার করা হয়।
মর্মান্তিক এই ঘটনার পর ব্যস্ত সড়কের মাঝখানে নিরাপত্তা বেষ্টনী ‘না রেখে’ বিআরটি প্রকল্পের কাজ করা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
সিসিটিভি ভিডিওতে দেখা যায়, ৫০ টন ওজনের গার্ডারটি প্রাইভেটকারে আছড়ে পড়ার আগ মুহূর্তে সেটি যখন শূন্যে ঝুলছিল, তখনও তার ঠিক নিচ দিয়ে কয়েকটি গাড়িকে দ্রুত পার হচ্ছিল।
এ ছাড়া ৫০ টন ওজনের গার্ডার বহনকারী ক্রেইনের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে। যদিও ক্রেইনটির সক্ষমতা ৮০ টন বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :