• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১

বাংলাদেশে বন্যায় ক্ষতির ‘ঝুঁকি বাড়ছে’


নিজস্ব প্রতিবেদক     সেপ্টেম্বর ২, ২০২২, ০৪:২১ পিএম
বাংলাদেশে বন্যায় ক্ষতির ‘ঝুঁকি বাড়ছে’

ঢাকা : বাংলাদেশে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ার চিত্র ফুটে উঠল যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ভূ-পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের স্যাটেলাইট ছবিতে। গত বছরের ১ ডিসেম্বরে কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে একদল গবেষক দেখালেন, এই ঝুঁকির মাত্রা কতটা বেড়েছে।

সেদিন রাতের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, কীভাবে বাংলাদেশে নদী তীরগুলোতে মানুষের বসবাস বেড়ে চলছে, যা বন্যা হলে ক্ষতির ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিচ্ছে। রাতের ছবিতে নদী তীরে বাতির আলো দেখে সে স্থানগুলোতে মানব বসতি বিস্তার ফুটে উঠছিল। ২০০০ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে নদী তীরে এই আলোর ফারাক চোখে পড়ার মতো।

পাশাপাশি ১৯৮৮ সালের এবং ২০২২ সালের দিনের ছবি দিয়ে দেখানো হয়েছে, ঢাকার নদী তীরগুলো জনবসতির কারণে কত ঘিঞ্জি হয়েছে। গবেষকদের শঙ্কা, যেহেতু নদীতীরের প্লাবনভূমিতে জনবসতি অনেক বেড়েছে, ফলে বন্যাপ্রবণ বাংলাদেশে এসব এলাকায় বন্যা দেখা দিলে ক্ষয়ক্ষতিও বাড়বে।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, ময়মনসিংহ শহর এলাকায় এমন ঝুঁকি বেশি বাড়ছে। ঢাকায় জনসংখ্যা ১৯৮৮ সালের তুলনায় ২০২২ সালে চার গুণ বেড়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ার সঙ্গে রাজধানী ঢাকা আরও ঘনবসতিপূর্ণ হচ্ছে। ফলে বন্যাপ্রবণ এলাকায় বসতি স্থাপনকারী মানুষও বেড়েছে, বলা হয় নাসার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে।

ঢাকার চারপাশে ঘিরে রয়েছে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, টঙ্গী খাল। শহর যত বাড়ছে, নদী তীরে বসতিও যে ততই বাড়ছে, তা ১৯৮৮ ও ২০২২ সালের কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা ছবি দুটি তুলনা করলে স্পষ্ট হয়ে যায়।

বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নেচার’ এ সম্প্রতি প্রকাশিত এক বিশ্লেষণের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, বুড়িগঙ্গা ও বালু নদীর তীরে বসতি বেশি বাড়ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যেখানে ২০০০ সালে বাংলাদেশের দেড় কোটি মানুষ বন্যার ঝুঁকিতে থাকা এলাকায় (নদীর ২ কিলোমিটারের মধ্যে) থাকত, ২০২২ সালে সেই সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি। আর ঢাকায়ই ৬০ লাখ মানুষের বাস এমন এলাকায়।

পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির ভূগোলে গবেষক আরিফ মাশরুর বলেন, নদীর ২ কিলোমিটারের মধ্যে আলোর প্রভা (স্যাটেলাইট ছবিতে) বাংলাদেশে ২৩৫ শতাংশ বেড়েছে। পেন স্টেট ইউনিভার্সিটি, কার্টিন ইউনিভার্সিটি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা যৌথভাবে এই গবেষণা চালায়। তারা কৃত্রিম উপগ্রহের রাতের ছবি নদী তীরে আলোর প্রভা এবং দিনের ছবি থেকে ভূমির ব্যবহারের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন।

আরিফ মাশরুর বলেন, জনসংখ্যা যতই বাড়ছে, ভূমির অভাবে নদীর তীরে অপরিকল্পিত বসতি গড়ে উঠছে। কার্টিন ইউনিভার্সিটির পরিবেশ-ভূগোলবিদ আশরাফ দেওয়ান বলছেন, ছবিতে রাতের আলোর প্রভাব দেখে যতটা ধারণা পাওয়া যাচ্ছে, বাস্তবে বন্যার ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে থাকা মানুষের সংখ্যা আরও বেশি হবে।

কারণ হিসেবে তারা বলছেন, হয়ত দেখা যাবে, নদী তীরে দুর্গম অনেক এলাকায় হয়ত বিদ্যুৎ নেই। ফলে ছবিতে তারা ধরা পড়ছে না। তিনি বলেন, ১৯৮৮ সালের বন্যায় ঢাকা ডুবেছিল। ২ হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। ১৯৯৮ সালের বন্যায় মারা গিয়েছিল ৯০০ মানুষ, সেবার অর্থের হিসাবে ৩৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।

আমরা আশা করছি, এই গবেষণা পরিস্থিতির গুরুত্বটি নীতি-নির্ধারকদের উপলব্ধিতে আনতে ভূমিকা রাখবে, বলেন আশরাফ দেওয়ান। নইলে যদি বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তবে আরও প্রাণ ঝড়ার শঙ্কা থেকে যাবে, সতর্ক করেন তিনি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!