• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

যে কারণে গুলশানের ড্রেনে মেয়রের কলা গাছ থেরাপি


নিজস্ব প্রতিবেদক  জানুয়ারি ৪, ২০২৩, ০৩:২৭ পিএম
যে কারণে গুলশানের ড্রেনে মেয়রের কলা গাছ থেরাপি

ঢাকা: সকাল ১১ টা বাজতে আর অল্প কিছু সময় বাকি। এমন সময় রাজধানীর গুলশান ২ নম্বরের ১১২ নম্বর রোডে অবস্থান নেয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অভিযান পরিচালনাকারী টিম। সঙ্গে আছে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা, এক পিকআপ ভরা কলা গাছসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ। হঠাৎ এখানে এত মানুষ, সঙ্গে কলা গাছ এসব দেখে উৎসুক পথচারীরার ভিড় করতে থাকেন। মাঝে মাঝে এসে উঁকি দিয়ে যাচ্ছে আশেপাশের বাড়ির মালিক, কেয়ারটেকার ও দাড়োয়ানরা। কিন্তু কেউই আসলে বুঝে উঠতে পারছেন না এখানে এত মানুষ কেন, কী হতে যাচ্ছে?

এর কিছুক্ষণ পরই উপস্থিত হলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। মেয়রের আসা দেখে ১১২ নম্বর রোডের ১৩ নম্বর প্লটের মমতাজ ভিলার সামনের ড্রেনের উপরের স্লাব তুলে ফেলেন ডিএনসিসির পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। সেখানে দেখা যায় আশেপাশের ফ্ল্যাটগুলোর পয়োবর্জ্যের লাইন সিটি করপোরেশনের ড্রেনে এসে মিলেছে। মেয়রকে বিষয়টি দেখান সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। যা দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন মেয়র।

বুধবার বেলা পৌনে ১২ টার দিকে বদলে যায় এখানকার পরিবেশ, আশেপাশের সব বাড়িওয়ালারা অবাক হয়ে দেখেন মেয়রের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ। আসলে তারা বুঝে উঠতেই পারেনি মেয়র এভাবে তাদের বাড়ির পয়োবর্জ্যের লাইনে কলা গাছ ঢুকিয়ে এভাবে সাজা দিবেন।

মেয়র ড্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘কলা গাছ দিয়ে লাইন বন্ধ করে দাও। ওভার ফ্লো হয়ে যখন পয়োবর্জ্য তাদের ঘরের দিকে যাবে তখন এসব বাড়িওয়ালারা সোজা হবেন।’

মেয়রের নির্দেশের পর তাৎক্ষণিকভাবে কলা গাছ দিয়ে ১৩ নম্বর প্লটের বাড়ির সামনের ড্রেন বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর মেয়র বললেন, ‘আরও কলা গাছ এনে এই লাইন একেবারে ব্লক করে দেও। কোনো বাড়ির পয়োবর্জ্য সিটি করপোরেশনের ড্রেনে ঢুকবে না, খালে, লেকে নামবে না। এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তের কথা অনেক আগে থেকেই আমরা বলে আসছি, সচেতন করেছি, অনুরোধ জানানোর পরও গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু আপনারা (বাড়িওয়ালা) কেউ আমাদের কথা শুনেননি। ’

পরে গুলশান ২ এর আরও বেশ কয়েকটি বাসার সামনে যান মেয়র আতিকুল ইসলাম এবং একই ধরণের পদক্ষেপ নেন। এসময় তিনি বলেন, ‘আজ আমরা এটি করলাম বাড়িওয়ালারা যেন সচেতন হোন, নিজেরা যেন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এভাবে আমরা গুলশান, বারিধারা, বনানী, নিকেতন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করবো। তারপর এসব ঠিক করা না হলে জরিমানা করতে বাধ্য হবো। এসব এলাকায় বিভিন্ন দিনে আমাদের অভিযান চলবে। ’

এদিকে এক জরিপে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন দেখেছে- গুলশান, বারিধারা, বনানী, নিকেতন এলাকার ৩ হাজার ৮৩০টি বাড়ির মধ্যে ২ হাজার ২৬৫ টির সুয়ারেজ লাইন লেক কিংবা ড্রেনে সংযোগ দেওয়া আছে। এটি শতাংশের হিসেবে দাঁড়ায় মোট বাড়ির ৮৫ শতাংশ। ফলে লেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে ও মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এদিকে মেয়রের এমন কলা গাছ থেরাপি বিষয়ে বাড়ির মালিকরা বলছেন,  তাৎক্ষণিকভাবে মেয়র এত কঠিন পদক্ষেপ নিবেন তা আমরা বুঝতে পারিনি।

গুলশান ২ এর এক বাড়ির মালিক ওয়াহিদুর রহমান বলেন, ‘আজ হঠাৎ দেখলাম ১১২ নম্বর রোডে সিটি করপোরেশনের অভিযান। প্রথমে ভাবলাম হয়তোবা জরিমানা করবে কিন্তু পরে দেখি মেয়র নিজে দাঁড়িয়ে বাড়ির লাইন ড্রেনে দেওয়ার জায়গায় কলা গাছ দিয়ে বন্ধ করে দিচ্ছেন। এত কঠোর হওয়া প্রথমেই উচিত হয়নি, আমাদের কিছুটা সময় দিলে ভালো হতো। এগুলো তো অনেক আগের লাইন, আমরা তো হুটহাট রাতারাতি এটা ঠিক করে ফেলতে পারবো না। এজন্য সময় দরকার।’

এ বিষয়ে মেয়র আতিক বলেন, ‘আমরা গুলশান, বারিধারা, বনানী, নিকেতনের লেকে বারবার চেষ্টা করেছি মাছ ছাড়তে কিন্তু এসব বাড়ির পয়োবর্জ্যের লাইনের কারণে এগুলোতে মাছ ছাড়া যায় না। মাছগুলো মরে যায়। এসব লেকে যদি মাছ থাকতো তাহলে মাছগুলো মশার লার্ভা খেয়ে ফেলতো। তখন মশার উৎপাত কমে যেত, খালের পরিবেশ, জীব বৈচিত্র্যর ইতিবাচক পরিবর্তন হতো। কিন্তু এসব অসচেতন বাড়ির মালিকদের জন্য আমরা তা করতে পারছি না। তাই নিজেদের সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে, এসব বাড়ির মালিকদের এমন পয়োবর্জ্যের লাইনগুলো বন্ধ করতে হবে। এজন্য আমাদের আরও যত কঠিন হওয়া দরকার আমরা তেমনি পদক্ষেপ নিবো।’

অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী সপ্তাহে বারিধারা এলাকাতেও এমন অভিযান শুরু হবে। মূলত প্রাথমিকভাবে গুলশান, বনানী, বারিধারা, নিকেতন এলাকাতেই এমন অভিযানের পাশাপাশি জরিমানা আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। 

সোনালীনিউজ/এম

Wordbridge School
Link copied!