ঢাকা: নিজ দেশ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া এক লক্ষ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে প্রকল্প গ্রহণ করে বাংলাদেশ সরকার। এই প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্প, আর এটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিল বাংলাদেশ নৌবাহিনীর।
প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে ভাসান চরের রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকি স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আশ্রয়ণ-৩ (নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলাধীন চরঈশ্বর ইউনিয়নস্থ ভাসানচরে বলপূর্বক বাস্তচ্যুত মায়ানমারের নাগরিকদের আবাসন এবং দ্বীপের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ) প্রকল্প সমাপনান্তে ভাসানচরে নির্মিত স্থাপনাসমূহের রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নিকট হস্তান্তরসহ অন্যান্য দায়িত্ব অর্পণ বিষয়ে নিন্মোক্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় ভাসানচরে নির্মিত অঞ্চল অবকাঠামো, স্থাপনা, বাঁধ, জেটিসহ অন্যান্য পূর্তকাজ এবং সকল স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ (স্থাপনা, অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি ও আনুষঙ্গিক উপকরণ) বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নিকট হস্তান্তরিত হবে।
ভাষানচরে নির্মিত স্থাপনাগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ, দ্বীপ এবং এর সন্নিহিত এলাকাসমূহের নিরাপত্তা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন ও সমন্বয়, বাঁধের নিরাপত্তা বিধান, বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিকদের কক্সবাজার হতে ভাসানচরে স্থানান্তর, সেবা সরবরাহ ও সরঞ্জামাদি পরিবহন, অত্যাবশ্যকীয় অনুষঙ্গ সংস্থাপন ও নির্মাণ এবং এতদসংক্রান্ত প্রশাসনিক কার্যক্রমের দায়িত্ব বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নিকট অর্পিত হবে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী নিজস্ব প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা, প্রয়োজনীয় জনবল ও সরঞ্জামাদি এবং নিজস্ব বাজেটে এ দায়িত্ব সম্পাদন করবে। অর্থ বিভাগ এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় বাজেটের সংস্থান করবে।
উল্লেখিত কার্য সম্পাদনকল্পে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা ও পন্থা এবং প্রশাসনিক ও বাজেট কাঠামো নিরূপন ও নির্ধারণের কাজ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের সাথে সমন্বয়পূর্বক প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী কর্তৃক সম্পাদিত হবে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাসমূহ বিশেষতঃ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তরের সাথে সমন্বয়পূর্বক বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিকদের কক্সবাজার হতে ভাসানচরে স্থানান্তরের কার্যক্রম বাংলাদেশ নৌবাহিনী কর্তৃক সম্পাদিত হবে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে সমন্বয়পূর্বক ভাসানচরে স্থানান্তরিত বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিকদের প্রত্যাবাসন ও এ সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের সাথে সার্বিক সমন্বয়ের কার্যক্রম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কর্তৃক তাদের নিজস্ব ম্যান্ডেট অনুযায়ী সম্পাদিত হবে। এছাড়া ভাসানচরে কার্যক্রম গ্রহণকারী জাতিসংঘের বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থা, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা/আইএনজিও, দেশীয় এনজিও ও সমধর্মী প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে সমন্বয় সাধন সংক্রান্ত কার্যাদি শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কর্তৃক সম্পাদিত হবে।
ভূমি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সরকারের প্রচলিত আইন, বিধি-বিধান ও নির্দেশনার আলোকে ভাসানচরের ভূমি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব জেলা প্রশাসক, নোয়াখালীর উপর ন্যস্ত থাকবে। এছাড়া যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন এর সাথে সমন্বয়পূর্বক ভাসানচরে ক্ষুদ্র ব্যবসা, দোকান বরাদ্দ ও সমধর্মী কাজে সাময়িক ভূমি বরাদ্দ বিষয়ক যাবতীয় কার্যক্রম প্রচলিত আইনে জেলা প্রশাসক, নোয়াখালী কর্তৃক সম্পাদিত হবে।
প্রযোজ্যক্ষেত্রে দ্বীপের অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, যেকোন দুর্যোগ মোকাবিলা এবং ক্ষেত্রবিশেষে ভাসানচরে দায়িত্বরত সরকারি-বেসরকারি দপ্তর/ প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে সমন্বয়ধর্মী কাজ জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটিতে আলোচনাপূর্বক জেলা প্রশাসন, নোয়াখালী কর্তৃক সম্পাদিত হবে। ভাষানচরে কোনো মামলা-মোকদ্দমার উদ্ভব হলে দেশের প্রচলিত আইনে জেলা প্রশাসক, নোয়াখালী তা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করবে।
জাতীয় পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নীতি-সহায়তা প্রদান, প্রাসঙ্গিক নীতি-কৌশল নির্ধারণ এবং পরিকল্পনা প্রণয়নসহ ভাসানচর সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় সমন্বয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের মাধ্যমে সম্পাদিত হবে। প্রকল্প সমাপনান্তে প্রস্তাবিত হস্তান্তর প্রক্রিয়ার বিষয়াদি সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহ প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবকে অবহিত রাখবে। জাতীয় পর্যায়ে ভাসানচর সম্পর্কিত সার্বিক সমন্বয়ের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব প্রয়োজনে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে সমন্বয়মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
সোনালীনিউজ/এসআই/আইএ
আপনার মতামত লিখুন :