ঢাকা: দেশের গুরুত্বপূর্ণ দুই সিটি করপোরেশন সিলেট ও রাজশাহীতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
সিলেটে প্রথম বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৯১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির মো. নজরুল ইসলাম লাঙল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫০ হাজার ১৬১ ভোট।
বুধবার (২১ জুন) রাত সাড়ে ৯টায় রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদের এ ফলাফল ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে রাজশাহীতে তৃতীয়বারের মতো (টানা দুইবার) মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৬০ হাজার ২৯০ ভোট।
২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত রাজশাহীর মেয়র ছিলেন লিটন এবং ২০১৮ সালে পুনরায় নির্বাচিত হন।
রাজশাহীতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. মুরশিদ আলম হাত পাখা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১৩ হাজার ৪৮৪ ভোট। যদিও বরিশালে হাতপাখা প্রার্থীর ওপর হামলার অভিযোগ এনে রাজশাহী এবং সিলেটে ভোট বর্জন করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
জাতীয় পার্টির মো. সাইফুল ইসলাম স্বপন লাঙল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১০ হাজার ২৭২ ভোট।
এর আগে বুধবার (২১ জুন) সকাল ৮টায় শুরু হয়ে একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।দুই সিটিতেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট গ্রহণ হয়।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, সিলেট সিটিতে ১৯০টি ও রাজশাহীতে ১৫৫টি কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট নেওয়া হয়। ১ হাজার ৭৪৭টি সিসি ক্যামেরা দিয়ে সিলেট সিটি এবং ১ হাজার ৪৬৩টি সিসি ক্যামেরা দিয়ে রাজশাহী সিটির ভোট নির্বাচন ভবন থেকে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
ভোট চলাকালীন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের মনিটরিং সেল থেকে কোনো অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলার কোনো তথ্য পাই নাই। মাঠের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ হচ্ছে। এ পর্যন্ত আমাদের কাছে অনিয়মের তথ্য নাই।’
ভোটার উপস্থিতি ভালো জানিয়ে রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘বেশ ভালো। সিলেটের কোনো কোনো কেন্দ্রে বৃষ্টি হচ্ছে; দুই-একটা কেন্দ্রে কম। আর সব জায়গায় ভালো। রাজশাহীতে খুবই ভালো।’
ভোট শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আমরা দিনভর নির্বাচন মনিটরিং করেছি। সকাল ৮টা থেকে শেষ পর্যন্ত। আমি বলবো নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, আন্দমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। আধাঘণ্টা প্রবল বৃষ্টির কারণে কিছুটা ব্যাঘাত হয়েছে। তবে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচন হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রাজশাহীতে আনুমানিক ৫২ থেকে ৫৫ শতাংশ উপস্থিতি হয়েছে। সিলেটে কম-বেশি ৪৬ শতাংশ উপস্থিতি জানতে পেরেছি। কিছুটা হেরফের হতে পারে। বাসাইল পৌরসভা নির্বাচনও ভালো হয়েছে। ৭০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি ছিল।
সিলেট সিটিতে ১৯০টি ভোটকেন্দ্রের ১ হাজার ৩৬৭টি ভোটকক্ষে ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৭৫৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৪ হাজার ২৩৬ জন, মহিলা ভোটার ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৭ জন এবং ছয়জন তৃতীয় ভোটার রয়েছেন। সিলেট সিটিতে মেয়র পদে ৮ জন, ৪২টি সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ২৯৪ জন এবং ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৮৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
সিলেটে মেয়র প্রার্থীরা হলেন-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির মো. নজরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাহমুদুল হাসান, জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম, স্বতন্ত্র মো. আব্দুল হানিফ, মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন, মো. শাহ জাহান মিয়া এবং মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা।
রাজশাহী সিটিতে ১৫৫টি ভোটকেন্দ্রের ১ হাজার ১৫৩টি ভোটকক্ষে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এর মধ্যে ১ লাখ ৭১ হাজার ১৬৭ জন পুরুষ, ১ লাখ ৮০ হাজার ৮০৯ জন মহিলা এবং ৬ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন। রাজশাহী সিটিতে মেয়রপ্রার্থী ৪ জন, ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১১১ জন এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৪৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
রাজশাহীতে মেয়র প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, জাতীয় পার্টির মো. সাইফুল ইসলাম স্বপন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. মুরশিদ আলম এবং জাকের পার্টির মো. লতিফ আনোয়ার।
সোনালীনিউজ/আইএ