ঢাকা: ভোট বন্ধে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ক্ষমতা কমিয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী বিল পাস হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ জুলাই) জাতীয় সংসদে এটি পাস হয়।
বিরোধীদল দাবি করেছে, এই সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দাবি করেন, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে অহেতুক বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
আরপিও’র সংশোধনী অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তা ফলাফল ঘোষণা করার পর, কোনো আসনের পুরো ফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে না ইসি। যেসব ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ আসবে, শুধু সেসব (এক বা একাধিক) ভোটকেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করতে পারবে। এরপর তদন্ত সাপেক্ষে ফল বাতিল করে ওইসব কেন্দ্রে নতুন করে নির্বাচন দিতে পারবে ইসি।
এছাড়া সংশোধিত আরপিওতে নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা গণমাধ্যমকর্মী এবং পর্যবেক্ষকদের কাজে কেউ বাধা দিলে তাকে শাস্তির আওতায় আনার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এ ধরনের অপরাধে সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
এছাড়া মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগের দিন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণ এবং টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির সরকারি সেবার বিল পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯১(এ) ধারায় বলা আছে, ‘নির্বাচন কমিশন যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, নির্বাচনে বলপ্রয়োগ, ভীতিপ্রদর্শন, চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিরাজমান অপকর্মের কারণে যুক্তিযুক্ত, ন্যায়সঙ্গত এবং আইনানুগভাবে নির্বাচন পরিচালনা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে না, তাহলে যে কোনো ভোটকেন্দ্র বা ক্ষেত্রমতো সম্পূর্ণ নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনের যে কোনো পর্যায়ে ভোট গ্রহণসহ নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে।
এখন আরপিও সংশোধনীর মাধ্যমে এই ক্ষমতা সীমিত করে ইসিকে শুধু ভোটের দিন সংসদীয় আসনের (অনিয়মের কারণে) ভোট বন্ধ করতে পারার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
অবশ্য ইসির কর্মকর্তাদের কেউ কেউ দাবি করেছেন, সংশোধনীতে ইসির ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। এতদিন আইনের এই ধারায় অস্পষ্টতা ছিল। এখন কোন কোন ক্ষেত্রে ইসি ভোট বন্ধ করতে পারবে, তা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।
সংশোধনীতে আরপিও’র ৯১ ধারার (এ) উপধারায় ‘ইলেকশন’ শব্দের বদলে ‘পোলিং’ শব্দ প্রতিস্থাপন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘ইলেকশন’ শব্দ দিয়ে পুরো নির্বাচনপ্রক্রিয়া বোঝায়। অর্থাৎ তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত সময়টা হলো ‘ইলেকশন’। আর ‘পোলিং’ হলো শুধু ভোটের দিন। এই সংশোধনী পাস হলে নির্বাচন কমিশন অনিয়মের কারণে শুধু ভোটের দিন কোনো ভোটকেন্দ্র বা পুরো সংসদীয় আসনের ভোট বন্ধ করতে পারবে। কিন্তু ‘ইলেকশন’ শব্দটি থাকলে ভোটের আগেও পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইসি ভোট বন্ধ করতে পারতো। তাই এখানে তাদের ক্ষমতা খর্ব হচ্ছে।
সোনালীনিউজ/আইএ
আপনার মতামত লিখুন :