ঢাকা : 'শুধু ঢাকা শহর নিয়ে ভাবলে হবে না, প্রতিটি গ্রামে সকল নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দিতে হবে'- আজ বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা ওয়াসার ‘দাসেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার’ প্রকল্প উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগারের শুভ উদ্বোধন করেছি, ইতিমধ্যে আরেকটি, পাগলা পয়ঃশোধনাগারের ভিত্তি স্থাপন করেছি।
এ সময় শুধু বড় শহরেই নয়, পর্যায়ক্রমে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত পানি শোধনাগার নির্মাণের তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। গ্রাম পর্যন্ত মানুষ যেন সব ধরনের নাগরিক সুবিধা পান সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু ঢাকা শহর নিয়ে ভাবলে হবে না। প্রতিটি গ্রামে সকল নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দিতে হবে। অনুষ্ঠানে রাজধানী ও মহানগরসহ দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় পয়োঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলার নির্দেশ দেন সরকারপ্রধান।
নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে ঢাকা ওয়াসাকে আরও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা ২০৩০ সাল নাগাদ ঢাকার চারপাশে পাঁচটি পয়োঃশোধনাগার নির্মাণ করার কথা জানান।
রাজধানীর আশপাশের নদীগুলোকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে সুদৃশ্য এই অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। সমন্বিত আধুনিক ব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিদিন ৫০ মিলিয়ন পয়ঃশোধন করা সম্ভব হবে। দেশে এটাই প্রথম এ ধরনের প্ল্যান্ট। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম একক পয়ঃশোধন কেন্দ্র হবে এটি।
দাশেরকান্দি শোধনাগার প্ল্যান্ট, যা খিলগাঁও থানার অন্তর্গত, আফতাবনগর সংলগ্ন এবং গুলশান (একাংশ), বনানী, তেজগাঁও, নিকেতন, মগবাজার, মালিবাগ, আফতাবনগর, বাড্ডা, কলাবাগান, পান্থপথ, ধানমন্ডি (একাংশ) ও হাতিরঝিলসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকার পয়ঃশোধনের ব্যবস্থা করবে।
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান জানিয়েছেন, এ ধরনের একক পয়ঃশোধনাগার প্ল্যান্ট দক্ষিণ এশিয়ায় বৃহত্তম এবং এটিই সেরা। প্ল্যান্টটি পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও জনবান্ধব।
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, নর্দমা থেকে আনা পানি প্ল্যান্টের মাধ্যমে পরিশোধিত করে বালু নদীতে পড়ছে, যা নদীর পানির গুণগতমান বাড়াবে। এমনকি এই পানি সুপেয় করে তোলা সম্ভব হবে। আর এখান থেকে পাওয়া ফ্লাই অ্যাশ দিয়ে তৈরি হবে সিমেন্ট। এ জন্য প্রয়োজনীয় ফ্লাই অ্যাশ, পয়ঃশোধনের উপজাত সিমেন্ট কারখানায় বিক্রি করা হবে। সেটি করা হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে।
দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মহসিন আলী বলছেন, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই এখানে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টন ছাই পাওয়া যাবে। এই ছাই প্রসেসিং করা হলে ১০ শতাংশের মতো পাওয়া যায়। যার পরিমাণ প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ টন। এই ছাই সিমেন্ট কোম্পানিতে যাবে।
প্রতি তিন মাস পর পর ভারতীয় একটি কোম্পানির মাধ্যমে বিষয়টি চেক করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, প্রকল্পটি পরিবেশবান্ধব। এটা হাতিরঝিল সমন্বিত একটি প্রকল্প অংশ। হাতিরঝিল করার সময় এটির ডাইভারশন লাইন করা হয়। সেই ডাইভারশন লাইন দিয়ে পয়ঃবর্জ্য ফেলা হতো রামপুরা খালে। ঢাকার অন্যতম এই জলাশয়কে বাঁচাতে প্ল্যান্টটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে, পরিবেশদূষণ কমাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পয়ঃশোধনের পর এখান থেকে দৈনিক ৪০ কোটি লিটার পরিশোধিত পানি (এফ্লুয়েন্ট) পাওয়া যাবে। যা আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে নিষ্কাশিত হবে গজারিয়া খাল তথা বালু নদীতে। এর ফলে রামপুরা খালসহ বালু নদী ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানির মানের আরও উন্নতি হবে। প্ল্যান্টটি ২০৩০ সালের মধ্যে সারা দেশে উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। ‘এসডিজি লক্ষ্য-৬’ বাস্তবায়নে সহায়ক হবে এই প্ল্যান্ট।
ওয়াসা জানায়, চীনের অর্থায়নে ৩ হাজার ৪৮২ দশমিক ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৬২ দশমিক ২ একর জমিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। এই অর্থের ১ হাজার ১০৬ দশমিক ৪২ কোটি টাকা জিওবি তহবিল থেকে, ১০ কোটি টাকা ওয়াসার তহবিল থেকে ব্যয় হবে। এ ছাড়া চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক এই প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। প্রকল্পটির বাকি ২ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা ব্যাংকটি থেকে সহায়তা হিসেবে আসবে।
প্রকল্পটিতে প্রতিদিন প্রায় ৫৬০ টন প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতাসহ একটি স্লাজ ড্রাইং-বার্নিং সিস্টেম রয়েছে। এর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ১ আগস্ট। পাওয়ার চায়নার অধীনে চেংডু ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের ডিজাইনে নির্মিত প্রকল্পটি এক বছরের অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ওয়াসার কাছে হস্তান্তর করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়ান, ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যুয়ারেজ অথোরিটির (ওয়াসা) ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইবরাহিম উপস্থিত ছিলেন।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :