• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
লিসি ওয়াচারের প্রতিবেদন

বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কেস স্টাডি


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ২৩, ২০২৩, ১১:৫৪ এএম
বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কেস স্টাডি

ঢাকা : দিন যত যাচ্ছে বাংলাদেশও এশিয়ার অন্যতম একটি সম্ভাবনাময় রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর নানা সময় দেশটির অর্থনীতির বিভিন্ন রিপোর্ট পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে সত্যিই বাংলাদেশ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সফলভাবে অংশীদারিত্ব নিজেদের দখলে নিতে যাচ্ছে। আর এভাবেই বাংলাদেশের অর্থনীতির সাফল্যের প্রশংসা এবারে ওঠে এসেছে  বিখ্যাত মার্কিন অনলাইন সংবাদপত্র পলিসি ওয়াচারে।

পত্রিকাটি শনিবার (২২ জুলাই) সংখ্যায় প্রকাশিত বাংলাদেশের অর্থনীতি কি সত্যিই দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে শীর্ষক এক  শিরোনামে এক নিবন্ধে বলা হয়, ৫০ বছরের মধ্যে সামষ্টিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধি ২৭১ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

অনলাইন এই সংবাদ মাধ্যমটির সম্পাদকীয় বাছাই বিভাগে নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে। নিবন্ধের লেখক সুইজারল্যান্ডের লুসার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক ড. এমিলিয়া ফার্নান্দেজ মুলত দক্ষিণ এশীয় ভূ-রাজনীতি বিশেষজ্ঞ এবং নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে সুপরিচিত।

নিবন্ধে তিনি বলেন, অনেকগুলো অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচক পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশ- ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। এমনকি বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কেস স্টাডিতে পরিণত হয়েছে, যা খুব কম অর্থনীতিবিদই ভবিষ্যদ্বাণী করতে পেরেছিলেন।

তিনি লিখেন, ২০০৬ সালে বাংলাদেশ যখন জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল তখন অনেকেই এটিকে আকস্মিক সৌভাগ্য বা দৈবক্রম বলে উড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এরপরেই দেখা যায় ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশ প্রতি বছর পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে এবং দেশটি এখন বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির অন্যতম।

ফার্নান্দেজ বলেন, বাংলাদেশের সফল যাত্রা একটি ভালো উদাহরণ হিসেবে দেখা যেতে পারে যা কিনা মাত্র দুই দশকে দেশটিকে একটি  গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সূচকে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পাসাপাশি গত ২০ বছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ৫০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, হিসেব মতে এটি পাকিস্তানের আড়াই গুণ।

নিবন্ধে আরও বলা হয়, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশ ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। ওয়াশিংটন-ভিত্তিক রক্ষণশীল থিংক ট্যাংক দ্য হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিবেদনমতে, ২০২১ সালে ৫৬.৫ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ ১২০ তম স্থানে রয়েছে। আর বাংলাদেশের সমান স্কোর নিয়ে ভারত ১২১তম অবস্থানে ও অন্যদিকে পাকিস্তানের অবস্থান ১৫২ তম।

এমিলিয়া ফার্নান্দেজ বলেন, দেশটি বৈশ্বিক শান্তি সূচকেও ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনির একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস’র (আইইপি)  প্রকাশিত সর্বশেষ গ্লোবাল পিস ইনডেক্সে (জিপিআই) অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।

এর আগে স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক যাত্রা শুরুর সময় ১৯৭২ সালে প্রতিটি অর্থনৈতিক সূচকে ভারত ও পাকিস্তান ছিল এগিয়ে।আর আজ ৫০ বছর পর, প্রায় প্রতিটি সূচকে ভারত ও পাকিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। যেটা স্বাধীনতার মহান অর্জন বলা যায়।

এতে বলা হয়, যে কোনো দেশের উন্নয়নে মানবসম্পদকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক উপদান হিসেবে বিবেচনায় রাখা হয়ে থাকে যেখানে  বাংলাদেশ শুধু পাকিস্তান নয়, অনেক ক্ষেত্রে ভারতের চেয়েও এগিয়ে রয়েছে বর্তমানে।

বিশেষ করে নারী শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুহার হ্রাসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে। কয়েকটি দেশ ছাড়া বিশ্বের সকল দেশ বৈশ্বিক মন্দায় কঠিন সময়ের মুখোমুখি হচ্ছে এবং বাংলাদেশেও এমন চাপ প্রবলভাবে অনুভূত হচ্ছে।

বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঠেকেছিল একেবারে তলানিতে এবং অযোগ্য ওয়ান-ইলেভেনের কল্যাণে অর্থনীতি ব্যবস্থা ছিল ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু সেই থেকে বাংলাদেশের ইতিহাস সামনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এমনকি এই মহামন্দার সময়েও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিশ্বের সবচেয়েও ধনী ও সেরা অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বিবেচিত দেশটিকে ছাড়িয়ে গেছে।

এমিলিয়া ফার্নান্দেজের ভাষায় বাংলাদেশের বলিষ্ঠ নানা ইতিবাচক  পদক্ষেপে বিশ্বে তোলপাড় শুরু করে দিয়েছে সবার কাছে।

আর কীভাবে এই দেশের অগ্রযাত্রাকে থামানো যায়, তা নিয়েও বিশ্বনেতাদের কারসাজি শুরু হয়েছে। তবে বাংলাদেশকে যে হারানো যাবে না, তা গোল্ডম্যান শ্যাক্স তার এক রিপোর্টে তুলে ধরেছেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে,  ২০৭৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ১৬তম অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী একটি দেশ।

তিনি বলেন, পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০৭৫ সালে বাংলাদেশের জিডিপি ৬.৩ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। আর সে হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের জিডিপি দাঁড়াবে ৬ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার। ফলে স্থানীয় মুদ্রায় জিডিপির আকার হবে ৬৮৬.৭ লাখ কোটি টাকা। যা কিনা চলতি অর্থবছরে সরকারের আনুমানিক জিডিপির চেয়ে ৬৩৬ লাখ কোটি টাকা বেশি।

এমিলিয়া বলেন, অর্থনীতির উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত থাকলে, ২০৭৫ সালে বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছানোর পাশাপাশি  সৌদি আরব, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, ইতালি, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়াকেও ছাড়িয়ে যাবে। আর তখন বিশ্ব অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখবে কোন যাদুমন্ত্রে আজ বাংলাদেশ এপর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। সূত্র: বাসস

সোনালীনিউজ/এমটিআই

 

Wordbridge School
Link copied!