• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১

তথ্য গোপন করে পাসপোর্ট আবেদনের হিড়িক


নিউজ ডেস্ক জুলাই ২৩, ২০২৩, ১২:৩৪ পিএম
তথ্য গোপন করে পাসপোর্ট আবেদনের হিড়িক

ঢাকা : তথ্য গোপন করে একই ব্যক্তি একাধিক পাসপোর্ট গ্রহণের আবেদন করছে। বেশির ভাগ আবেদনে আবেদনকারীর নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আবেদনকারী নতুন করে সংশোধিত এনআইডি ও জন্মনিবন্ধন সনদ জমা দিচ্ছে। হাতে লেখা পাসপোর্ট ও মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) ক্ষেত্রে শত শত জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে।

২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার পর ইমিগ্রেশন অ্যান্ড পাসপোর্ট অধিদপ্তর (ডিআইপি) দাবি করেছিল যে, একজন ব্যক্তি তথ্য পরিবর্তন করে কোনো অবস্থায় একাধিক ই-পাসপোর্ট নিতে পারবে না। কারণ, ই-পাসপোর্টের পুরো প্রক্রিয়াটি ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়। একজন ব্যক্তি আগের এমআরপি পাসপোর্টের ন্যূনতম একটি ফোটা বা বর্ণের তথ্য গোপন করলেই ই-পাসপোর্ট তিনি আর পাবেন না।

সম্প্রতি ডিআইপিতে বেশ কয়েকটি ই-পাসপোর্ট জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে। এর নেপথ্যে ডিআইপির কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা জড়িত বলে তদন্ত রিপোর্টে ধরা পড়েছে। ইতোমধ্যে ডিআইপির দুই-এক জন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ১ নম্বর রোডের সি-২ নম্বর প্লটের ভবনের লেভেল-৭ ঠিকানায় অবস্থিত ক্রিয়েটিভ বিজে কোম্পানির চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা ২০০৭ সালে হাতে লেখা পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। পাসপোর্টে ঢাকার কাফরুল থানাধীন উত্তর ইব্রাহিমপুরের ৫৫২/২ নম্বর বাড়ি হিসেবে বর্তমান ঠিকানা দেওয়া হয়। পরে ঐ ব্যক্তিই হাতে লেখা পাসপোর্টের তথ্য পরিবর্তন করে কামাল হোসেন নাম বানিয়ে ২০১২ সালের দিকে জাপান চলে যান। এর আগে গোলাম মোস্তফা ও তার কোম্পানির আব্দুল হকের বিরুদ্ধে আদম পাচারের অভিযোগে ঢাকার বেশ কয়েকটি থানায় মামলা ছিল।

০১৫ সালের দিকে তিনি জাপান দূতাবাসে কামাল হোসেন নাম দিয়ে পাসপোর্টের আবেদন করেন। আবেদন করার সময় তার স্থায়ী ঠিকানা চাঁদপুর পরিবর্তন করে কুমিল্লা উল্লেখ করেন। দূতাবাসের মাধ্যমে তিনি এমআর পাসপোর্ট হাতে পান। ২০২০ সালের ১০ এপ্রিল পর্যন্ত তার পাসপোর্টের মেয়াদ ছিল। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিনি কামাল হোসেন নাম দিয়ে ই-পাসপোর্টের আবেদন করেন।

এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল নূরুল আনোয়ার বলেন, একজন ব্যক্তি তার নাম-ঠিকানা পরিবর্তন করে ই-পাসপোর্ট গ্রহণের সুযোগ নাই। এরপরও আমরা বিভিন্ন সময়ে এরকম আবেদন পেয়েছি। এসব আবেদনের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রবাসীদের মধ্যে ঘটে থাকে। বিষয়গুলো তদন্ত করে ভুয়া তথ্য ধরা পড়লে, সেক্ষেত্রে পাসপোর্ট প্রদান করা হয় না।

প্রবাসীদের এ ধরনের তথ্য গোপন করে অন্য নামে পাসপোর্ট আবেদনের তথ্য দিয়ে ডিআইপির একজন কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি  ফ্রান্সে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এরকম একটি অভিযোগ পেয়েছি। প্যারিসে এক জন বাংলাদেশি ই-পাসপোর্টধারী ব্যক্তির পাসপোর্টের তথ্য দিয়ে এমআর পাসপোর্ট বানানো হয়েছে।

২০১৩ সাল হতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ নামে চারটি পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে, যাদের কারো জন্মস্থান বা স্থায়ী ঠিকানা সাতক্ষীরা নয় এবং কারো জন্ম তারিখ, পিতার নাম ও মাতার নামের সঙ্গে আপনার জন্ম তারিখ, পিতার নাম ও মাতার নামের মিল নেই। প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাস হতে  মোহাম্মদ মামুনুর রশীদের নাম ঠিকানা, ফোন, সব ডাটা ব্যবহার করে অন্য এক ব্যক্তির নামে এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে। ঐ এমআর পাসপোর্ট দিয়ে অন্য ব্যক্তি ফ্রান্সে অবস্থান করছেন। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, আমাদের নজরে এসেছে যে, ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিকৃতির মাধ্যমে, বিশেষ করে জন্ম তারিখ ও জন্ম নিবন্ধন সংখ্যা (বিআরএন) বিকৃত করে বহু পাসপোর্ট ইস্যু করা হচ্ছে। এমনটা বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে যে, বিবেকবর্জিতভাবে ও সম্ভবত গোপন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিকৃত করা হচ্ছে।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, এটি মূলত, একটি অপরাধমূলক কার্যক্রম এবং গভীরভাবে উদ্বেগজনক। এ থেকে এটা স্পষ্ট, অপরাধীরা অন্য কারো পরিচয় ধারণ করে দেশ ছেড়ে পালাতে পারে। দূতাবাসের কাছে প্রায়ই জন্ম তারিখ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিকৃত করা পাসপোর্টের আবেদন আসে। কোনো ব্যক্তি পরিবর্তিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে নথিপত্র তৈরি করলে সেটা বৈধ হতে পারে না। এতে দূতাবাসকে লজ্জাজনক পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। সূত্র : ইত্তেফাক

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!