ঢাকা : ডাবের দাম ২০০ টাকা শুনেই মধ্য বয়সী এক নারী বলে উঠলেন, ‘হায়রে আল্লাহ!’ ততক্ষণে তার জন্য একটি ডাব কেটে ফেলেছেন বিক্রেতা। কিন্তু ওই নারী ডাব কিনবেন না। শেষে সেই ডাবটি নিলেন ওই নারী।
বললেন, হাসপাতালে তার ভাইয়ের মেয়ে অসুস্থ হয়ে ভর্তি আছে। দিনে কয়েকটা ডাব খাওয়ানোর কথা। কিন্তু যে রোজগার তাতে তো একটি ডাব কিনতেই তা শেষ হয়ে যায়।
রাজধানীর শেরে-বাংলা নগরের শিশু হাসপাতালের সামনে ওই নারীর সঙ্গে কথা হয়। গণমাধ্যমে নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই ডাব কিনতে হয়। দরদাম করেও কোনো লাভ হয় না। যা-তা অবস্থা। ২০০ টাকা দিয়ে ডাবই যদি কিনতে হয়, আর খরচ নেই? ডেঙ্গু রোগীকে খাওয়ানোর সব পণ্যের দামই বাড়তি বলে জানালেন তিনি।
তিনি বলেন, ঢাকায় থাকি, ‘আত্মীয়-স্বজনরা মনে করে ভালো আছি। এখন যদি দেখে আমাদের এই অবস্থা তাহলে কী ভাববে?’ এই কারণেই নিজের নাম প্রকাশ না করার কথা বললেন তিনি।
শ্যামলীর শিশু হাসপাতালের সামনে দুইজন ডাব বিক্রেতাকে দেখা যায়। তাদের ভ্যানে থাকা ডাবের প্রতিটির দাম ২০০ টাকা। তবে একজনের ভ্যানে ছোট সাইজের ১৫০ টাকার ডাবও রয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, একে তো ডেঙ্গুর কারণে ডাবের চাহিদা বেশি। অন্যদিকে বৃষ্টির কারণে ডাবের সরবরাহ কমে গেছে। সেজন্য গেল সপ্তাহ থেকেই ডাবের দাম এমন।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। এজন্য প্রাকৃতিক তরল হিসেবে ডাব থাকে চাহিদার শীর্ষে। রাজধানীর অধিকাংশ হাসপাতালের সামনেই তাই দেখা গেছে ডাব বিক্রেতাদের।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের সামনের ডাব বিক্রেতাদের একজন হারুন। তিনি বলেন, মানুষের দরকার পড়লেও ডাবের বিক্রি খুব একটা নেই। আমাদের কিছু করার নেই, লোকে ভাবে আমরা বেশি দাম নিই।
পাশের আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) একশ’ ডাব এনেছি। এখনো বিক্রি করতে পারিনি। ডাব যেখান থেকে আনি সেখানে পাওয়া যাচ্ছে না। বৃষ্টির জন্য তারা গাছে উঠতে পারছে না। সেজন্য দাম বেশি। এখন পাইকারীতে কত টাকায় কিনি সেটা বলে তো লাভ নেই। মানুষ তো বিশ্বাস করবে না। ভাববে আমরা বেশি রাখছি।’
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) ও আজ বুধবার রাজধানীর মিরপুর, আগারগাঁও, শ্যামলী, কারওয়ান বাজার ও বাংলা মোটর এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, বড় আকারের প্রতিটি ডাব বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। স্থানভেদে ছোট আকারের ডাবের দাম ১২০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত। রোগীর পথ্য হিসেবে ডাবের বেশ কদর রয়েছে। সে জন্য হাসপাতাল এলাকায় ডাবের দামও কিছুটা বেশি।
মিরপুর ১ নম্বর এলাকায় জুবায়ের আহসান নামের এক ক্রেতা জানান, অসুস্থ হয়ে বাসায় আছেন তার স্ত্রী। এই সপ্তাহের শুরু থেকেই বাড়তি দামে ডাব কিনছেন। সঙ্গে আরও অনেক খরচ বেড়েছে। এসব খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।
এমটিআই