• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ

আগেও পেটাতেন এখনও পেটান


নিউজ ডেস্ক সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩, ০৮:৪২ পিএম
আগেও পেটাতেন এখনও পেটান

ঢাকা : গত ৭ আগস্ট জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে শাহবাগে একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশে ব্যাপক লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এতে আহত অন্তত ১২ জন আহত হন। সেদিনের সেই লাঠিপেটার নেতৃত্বে দেন রমনা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ।

এডিসি হারুন সম্পর্কে ঘটনার নানা প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের একটাই মন্তব্য—'তিনি (এডিসি হারুন) শুধু পেটান।'

এর আগে, নিজের অধীনস্ত এক পুলিশ সদস্যকেও চড় মারার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। নিউ মার্কেট এলাকায় দোকান মালিক, বিক্রেতা ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় শিক্ষার্থীদের দিকে রাবার বুলেট ছুড়তে এক কনস্টেবলকে নির্দেশ দেন তিনি। 'বুলেট শেষ' বলায় ও্ড কনস্টেবলকে চড় মারেন তিনি।

ঘটনাটির একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন এডিসি হারুন। তার নেতৃত্বে শাহবাগে সমাবেশকারীদের পেটানোর ঘটনা, এমনকি তিনি নিজেই লাঠি দিয়ে বিক্ষোভকারীদের পেটাচ্ছেন—এমন ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে সমালোচনার জন্ম দেয়।

ভিডিওতে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীরা সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে শাহবাগ মোড়ে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছিল। এমন সময় রমনা জোনের এডিসি হারুন অর রশিদের নির্দেশনায় তিনিসহ অন্যসহকর্মীরা বিক্ষোভকারীদের পেটাতে শুরু করেন। পেটানোর আগে তার গায়ে জ্যাকেট এবং মাথায় হেলমেট পরিয়ে দেন তার সহকর্মীরা। হেলমেট পরানোর সঙ্গে সঙ্গেই তিনি মারমুখো হয়ে উঠেন। তিনি ও তার সহকর্মীরা বিক্ষোভকারীদের অমানুষিকভাবে লাঠিপেটা করেন।

রাজধানীর ডিএমপি রমনা জোনের আওতাধীন এলাকার মধ্যে শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপুর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

এ ছাড়াও হাইকোর্ট, জাতীয় প্রেস ক্লাবের মতো প্রতিষ্ঠানে দেশের আলোচিত বিভিন্ন বিষয় ও ঘটনা নিয়ে নিয়মিত প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এর আগে যারা রমনা জোনের দায়িত্বে ছিলেন তাদের কাউকে নিয়ে এ ধরনের কোনো সমালোচনা হয়নি। এডিসি হারুন 'উগ্র আচরণ' করেন বলে অভিযোগ করেন তারা। যেকোনো যৌক্তিক দাবির আন্দোলনে বেপরোয়াভাবে পেটানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে।

বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করতে গিয়ে পুলিশের মারধরের শিকার হওয়া ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা অতিদ্রুত এডিসি হারুনকে প্রত্যাহারের দাবি জানান।

চলতি বছরের ৪ মার্চ গণ-অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নূরের নেতৃত্বে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ মিছিলে ঢাকা ক্লাবের সামনে রমনা জোনের উপকমিশনার হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ও সাদা পোশাকের লোক বিক্ষোভকারীদের ওপর অতর্কিত লাঠিচার্জ করে।

এ ঘটনার অন্তত তিনজন প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, একাধিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে এডিসি হারুনের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। তিনি নিজেই আমাদের নেতাকর্মীদের পিটিয়ে গলা টিপে ধরেছেন। রমনা জোনের পুলিশের যে মারমুখী আচরণ সেদিক থেকে সামনের সারিতে আছেন হারুন। তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন।

একই অভিযোগ করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এডিসি হারুনের নেতৃত্বে পুলিশ ছাত্রদলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়বলে অভিযোগ করে তারা।

২০২১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে বিচার চেয়ে শাহবাগে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও অন্যান্য বাম সংগঠন আয়োজিত মশাল মিছিলে লাঠিপেটা করে পুলিশ। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে টিএসসি থেকে শাহবাগে যাওয়ার পথে এডিসি হারুনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ তাদের মারধর করে আহত করেন।

গত শুক্রবার (০৮ সেপ্টেম্বর) সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিল একদল চাকরিপ্রত্যাশী। অবরোধ প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলছিল। এরপর পুলিশ এসে তাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। সেখান থেকে সরে শাহবাগ থানামুখী রাস্তার দিকে এগোলে পুলিশ তাদের কয়েকজনকে লাঠিপেটা করে। এডিসি হারুনও লাঠিপেটা করে যুবকদের ধাওয়া দেন বলে জানান বিক্ষোভকারীরা।

সে সময় ছবি তুলতে গেলে কয়েকজন সাংবাদিকদের সঙ্গে এডিসি হারুন দুর্ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ।

অবশেষে ঘটল গতকালের ঘটনা। এডিসি হারুন অর রশিদের দুর্ব্যবহারের কফিনে শেষ পেরেক। গতকাল রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে পুলিশ নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

আহতরা হলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফজলুল হক হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ। এ দুজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ভুক্তভোগী ও তাদের সহপাঠীদের অভিযোগ, পুলিশের রমনা বিভাগের এডিসি হারুন অর রশিদ তাদের থানায় নিয়ে বেদম পিটিয়েছেন। ছাত্রলীগের নেতা পরিচয় দেওয়ার পরও হারুনের সঙ্গে ১০-১৫ জন পুলিশ সদস্য মিলে তাদের পেটান।

যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন তার বিরুদ্ধে ওঠা পুরনো অভিযোগ প্রসঙ্গে এর আগে বলেন, আমার সময়ে কখনো কোনো আন্দোলনে পুলিশের ওপর হামলা ও জনদুর্ভোগ ছাড়া আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করা হয়নি। যখন আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড হয়, তখন নিবৃত্ত করার চেষ্টা করা হয়।

এবার আর শেষ রক্ষা হলো না। ছাত্রনেতাদের ওপর প্রতিহিংসাপরায়ণ ও বর্বর নির্যাতন করার কারণে প্রতিবাদের মুখে তাকে সরে যেতে হলো রমনা বিভাগ থেকে। তাকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে পদায়ন করা হয়েছে। আজ পুলিশ হেডকোয়াটার্স থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে তাকে সেখানে সংযুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!