ঢাকা: বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানিয়েছেন, অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) পুনর্বহালে বাংলাদেশকে কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সে জন্য নতুন উপায় নিয়ে ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে বাংলাদেশে মেধাস্বত্ব সম্পর্কিত যে আইন রয়েছে, সেগুলো বিশ্বমানের করা এবং দ্রুত শ্রম আইন সংশোধন করে তা বাস্তবায়নের কথা বলেছে দেশটি। গতকাল বুধবার ঢাকায় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা) সপ্তম কাউন্সিলের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
রাজধানীর একটি হোটেল অনুষ্ঠিত টিকফা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন তপন কান্তি ঘোষ। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে দেশটির বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী ক্রিস্টোফার উইলসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এতে অংশ নেয়।
বাণিজ্য সচিব বলেন, আজকে (বুধবার) আমাদের বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সপ্তম টিকফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখানে অনেকগুলো এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশ পক্ষ থেকে আমরা আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশি পণ্য যাতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়, সে বিষয়টা জোরালোভাবে তুলে ধরেছি। বিশেষ করে আমরা বলেছি, আমরা আমেরিকা থেকে ১৪ শতাংশ তুলা আনি। এই কটন দিয়ে যে পোশাক তৈরি হবে এবং সেই পোশাক যখন আমেরিকায় রপ্তানি হবে, তখন শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিতে হবে। এ বিষয়টি তারা নোট করেছেন এবং আমাদের যুক্তিগুলো মনোযোগ সহকারে শুনেছেন। তারা বলেছেন, এ বিষয়ে কোনো সুবিধা দেওয়া যায় কিনা সে বিষয়ে চিন্তা করবেন। উচ্চ পর্যায়ে আলাপ করবেন।
তপন কান্তি ঘোষ বলেন, একই সঙ্গে বাংলাদেশের মেধাস্বত্ব সম্পর্কিত যে আইন রয়েছে সেগুলো বিশ্বমানের করাসহ দ্রুত শ্রম আইন সংশোধন করে বাস্তবায়নের কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) স্বল্পোন্নত দেশগুলো (এলডিসি) যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে যেন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দেয় সে বিষয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ওভারঅল শুল্কমুক্ত যে সুবিধা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সে বিষয়ে আমরা বলেছি পৃথিবীর সব উন্নত ও অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়। একমাত্র দেশ আমেরিকা এটা দিচ্ছে না। আমরা বলেছি গত ১০ বছরে আমরা অনেক উন্নতি করেছি, তাদের উদ্বেগের মধ্যে থাকা লেবার রাইটসসহ (শ্রম অধিকার) অন্যান্য ইস্যুতে। সুতরাং ডব্লিউটিওতে যে আলোচনা হচ্ছে সেখানে আমরা আমেরিকার সমর্থন কামনা করছি। তারা বলেছেন জেনেভায় তাদের ও আমাদের যে মিশন আছে, সেখানে একসঙ্গে কাজ করছেন। তারা এ বিষয়টি দেখবেন।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কী বলা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তপন কান্তি ঘোষ বলেন, তারা শ্রম অধিকার প্রশ্নে আলোচনা করেছেন। যেটা অন্যান্য সময়ও আলোচনা করে থাকেন। আমাদের লেবার ইউনিয়ন, ইনস্টিটিউশন প্রসেস সম্পর্কে তারা সন্তুষ্ট, যা আগের থেকে অনেক উন্নতি করেছে। এর বাইরে মেধাস্বত্ব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হয়ে যাচ্ছে, তাই মেধাস্বত্ব সম্পর্কিত যে আইন রয়েছে সেগুলো বিশ্বমানের হতে হবে বলে তারা বলেছেন। আমরা বলেছি বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অনেকগুলো আইন সংশোধন করেছে। তবে তারা আইনের বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন। আমরা বলেছি, আইন বাস্তবায়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা সব সময় চেষ্টা করছি আরও উন্নতি করার। ভবিষ্যতে তাদের টেকনিক্যাল সহযোগিতা প্রয়োজন হতে পারে। সেখানে তারা সম্মত হয়েছেন।
বাণিজ্য সচিব বলেন, এর বাইরে গ্লোবাল ফাইন্যানসিয়াল করপোরেশন (জিএফসি) নামে একটি ফান্ড আছে, যা গত বছর ৭.৪ বিলিয়ন ইউএস ডলারের ফান্ড। সেখান থেকে স্বল্প উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সহায়তা আকারে দেওয়া হয়। সেই ফান্ডে যাতে বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়, সে বিষয়ে আলোচনা করেছি। তারা বলেছে এখানে যে শর্ত মানতে হয়, জিএসপির শর্ত একই। এজন্য তারা আমাদের দ্রুত শ্রম আইন সংশোধনের কথা বলেছে। এসব বিষয়ে উন্নতি করতে পারলে তারা আমাদের জিএফসি ফান্ডের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করবে।
জিএসপি ইস্যুতে সচিব বলেন, জিএসপিতে বাংলাদেশকে নেওয়া যায় কিনা সেটা তারা চিন্তা করছেন। এমনও হতে পারে কোনো কোনো তৈরি পোশাক যা আমেরিকায় সংবেদনশীল নয়, সেসব বিষয় নিয়ে নতুন একটি উপায় বের করবেন, যাতে নতুন যে জিএসপি রেজুলেশন হবে সেখানে বাংলাদেশকে কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। কোনো আশ্বাস দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আশ্বাস বলতে এটাই তারা একটা উপায় বের করছেন। এখনতো জিএসপি নেই। যখন জিএসপি আসবে তখন যে রেজুলেশন করতে চাইবে, সেখানে বাংলাদেশকে কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। জিএসপি বিষয়ে কোন কোন জায়গায় জোর দিতে বলেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা জিএসপি ইস্যুতে আগে যে শর্তগুলো দিয়েছিল সেগুলো আরও উন্নতি করতে এক সঙ্গে কাজ করতে চান। সেটা শ্রম আইন হোক বা কলখানাগুলোতে নিরাপত্তার বিষয় হোক। আমরা অবস্থার উন্নতি ঘটাতে চাই।
টিকফা স্বাক্ষরের ১০ বছর পূর্তি সামনে রেখে বাংলাদেশের প্রাপ্তিটা কী এমন প্রশ্নের জবাবে তপন কান্তি ঘোষ বলেন, আমরা পেয়েছি অনেক কিছুই। টিকফার উদ্দেশ্যই হচ্ছে দুই দেশের বাণিজ্য বাড়ানো এবং যে বাধাগুলো আছে সেগুলো দূর করা। তবে বাণিজ্য তো অবশ্যই বেড়েছে। ৮-৯ বছর আগে আমাদের ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি ছিল এখন ১০ বিলিয়নের বেশি। রপ্তানির পরিমাণ দেখলে বাংলাদেশ অনেক বেশি লাভবান হয়েছে। তিনি জানান, টিকফা প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কিছু টেকনিক্যাল সমস্যার সমাধান করা গেছে।
বিনিয়োগ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে বাণিজ্য সচিব বলেন, আমরা তাদের বিনিয়োগের আহ্বান করেছি। আমাদের ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ চেয়েছি। ফার্মাসিটিক্যাল বিষয়ে বলেছি, এখানে রেজিস্ট্রেশন নিতে অনেক বেশি ফি দিতে হয়, সেটা কমিয়ে আনা যায় কিনা। সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
এমএস
আপনার মতামত লিখুন :