• ঢাকা
  • রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
জলবায়ু সংকট মোকাবিলা

উন্নত দেশগুলোকে অর্থায়নের আহ্বান শেখ হাসিনার


শাহীন হাওলাদার , জাতিসংঘ সদর দফতর থেকে সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩, ০২:৪৯ পিএম
উন্নত দেশগুলোকে অর্থায়নের আহ্বান শেখ হাসিনার

ঢাকা: বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলোকে সমানভাবে অর্থায়নের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবার ঝুঁকিতে আছে। বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন এবং আসন্ন সংকট এড়াতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ন্যায্য অংশীদারীত্বের বিষয়ে সৎ থাকবে।”

জাতিসংঘের ৭৮তম অধিবেশন (ইউএনজি) এর চতুর্থ দিন বুধবার ‘জলবায়ু ন্যায্যতা প্রদান: ত্বরান্বিত উচ্চাকাক্সক্ষা এবং অভিযোজন ও সবার জন্য প্রাথমিক সতর্কবার্তা বাস্তবায়ন’ শীর্ষক জলবায়ু উচ্চাকাক্সক্ষা শীর্ষক এক অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

সভায় প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমনের সমানভাবে অর্থায়নের উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়াও তিনি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের আগাম সতর্কতা ব্যবস্থার অভূতপূর্ব সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দু’টি উদ্যোগ এর প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন যার মধ্যে ‘‘আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম ফর অল’’উদ্যোগের লক্ষ্য হল ২০২৫ সালের মধ্যে সবার জন্য আগাম সতর্কতা নিশ্চিতকরণ। এই উদ্যোগের অধীনে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা প্রদানের জন্য জাতিসংঘ প্রথম যে ৩০ টি দেশকে বাছাই করে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জলবায়ু সংকটের কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (এসডিজি) বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে  স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ শতকরা ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে যা আমাদের এ খাতে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের যে প্রচেষ্টা তারই প্রতিফলন।

অপরদিকে  বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল আরেকটি দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের আহ্বান জানানো হয়। একই সাথে জোরপূর্বক রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মায়ানমারে প্রত্যাবাসনের নিশ্চিত করতে দেশটির উপর চাপ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়।

পর্যাপ্ত অর্থায়নের অভাব টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অগ্রগতির জন্য একটি বড় বাধা মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সহজলভ্য অর্থায়ন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের জন্য অপরিহার্য। দুঃখজনকভাবে, পর্যাপ্ত অর্থায়নের অভাব টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অগ্রগতির জন্য একটি বড় বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। সেজন্য জরুরীভিত্তিতে, আমাদের এমন একটি আর্থিক স্থাপত্য ব্যবস্থা গঠন করা প্রয়োজন যার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য, বিশেষ করে সংকট, জরুরী অবস্থা এবং দুর্যোগের সময়ে তহবিল নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে অভিযোজন এবং আগাম সতর্কতায় বিনিয়োগ করা সঠিক। আমরা আশা করি আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরা জলবায়ু ন্যায্যতা প্রদানের জন্য এই সুযোগগুলোকে কাজে লাগাবে। শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিবের দুটি উদ্যোগে সমর্থন দিতে বাংলাদেশ এই অধিবেশনে যোগ দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ভূমিকম্প মডেলিং নিয়ে দেশব্যাপী একটি প্রদর্শনী মহড়া করতে জাতিসংঘকে অনুরোধ জানিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ১৯৭০ সালে ভোলা ঘূর্ণিঝড়ের সময় যে লক্ষাধিক লোক মারা গিয়েছিল তার তুলনায় এখন বাংলাদেশে প্রাণহানির সংখ্যা এক অঙ্কে নেমে এসেছে। বর্তমানে আমাদের ৬৫,০০০ উপকূলীয় মানুষের সমন্বয়ে বিশ্বের বৃহত্তম কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবক কর্মসূচি রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ একটি সমন্বিত বহু-বিপত্তি প্রাথমিক সতর্কীকরণ পদ্ধতির সর্বশেষ জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, “আমরা আবহাওয়ার পূর্বাভাসের নিয়মিত আপডেট দেওয়ার জন্য মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করছি।”

এরপর প্রধানমন্ত্রী করোনা প্রতিরোধ, প্রস্তুতি এবং প্রতিক্রিয়া শীর্ষক এক উচ্চ পর্যায়ের সভায় বক্তব্য প্রদান করেন। এসময় তিনি বলেন , কোভিড-১৯ মহামারি হতে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড়  শিক্ষণীয় বিষয় হলো ‘যতক্ষণ পর্যন্ত সবাই নিরাপদ নয়, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউই নিরাপদ নয়”।

‘‘কোভিড অতিমারি প্রমাণ করেছে যে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে যেকোন সংকট থেকে পুনরুদ্ধার সম্ভব। আমরা কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বিশ্বসূচকে পঞ্চম স্থান লাভ করেছি। ’’ তিনি বলেন।

এসময় প্রধানমন্ত্রী বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়ন এবং ভবিষ্যতে যেকোন স্বাস্থ্য বিষয়ক জরুরী অবস্থা মোকাবিলার জন্য ৫টি প্রস্তাব উপস্থাপন করেন যার মধ্যে রয়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সহজলভ্য অর্থায়ন; বিজ্ঞান-ভিত্তিক পদ্ধতিতে অতিমারি নজরদারি, প্রতিরোধ, প্রস্তুতি সংস্থান ইত্যাদি।

প্রধানমন্ত্রীর দিনভর  দ্বিপক্ষীয় বঠৈকগুলোতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমনেস, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব জুনায়েদ আহমেদ পলক, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনসহ উচ্চ র্পযায়রে প্রতনিধি দল উপস্থিত ছিলেন।

এমএস

Wordbridge School
Link copied!