• ঢাকা
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

এখন কেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘থ্রি-সি’ ভিসা নিষেধাজ্ঞা


নিউজ ডেস্ক অক্টোবর ৪, ২০২৩, ১১:৪৪ এএম
এখন কেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘থ্রি-সি’ ভিসা নিষেধাজ্ঞা

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট। ছবি- সংগৃহীত

ঢাকা : বাংলাদেশের সরকার, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যম, সকলেই আসন্ন জাতীয় নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় সে আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছে আর তাদের এই উদ্দেশ্যকে সমর্থন করার জন্য ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।  

সোমবার (স্থানীয় সময় ৩ অক্টোবর) ভয়েস অফ আমেরিকাকে এমনটাই জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।

কেন এই সময়েই, ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে আমেরিকা ‘থ্রি-সি’ ভিসা বিধিনিষেধ জারি করার সিদ্ধান্ত নিলো এই প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বাংলাদেশের সরকার, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যম সকলেই আসন্ন জাতীয় যাতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় সে আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছে।

এই উদ্দেশ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের নেতা নির্বাচন করার যে আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছে তা পূরণ করার জন্য ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা, সরকারপন্থী এবং বিরোধীদলসহ রাজনৈতিক দলের সদস্যরা বা অন্যান্য যারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দুর্বল করার জন্য দায়ী বা প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকবে, বাংলাদেশের সেসকল ব্যক্তির ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের নীতি ঘোষণা করেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, এই নীতির উদ্দেশ্য এটা দেখানো যে, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের জনগণের সম্পর্ক গঠনমূলক অংশীদারিত্বের এবং ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড ও সহিংসতা প্রতিরোধ করা’।

এর আগে, ভয়েস অফ আমেরিকায় সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমার এটাই প্রশ্ন যে হঠাৎ করে কথা নেই বার্তা নেই, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) আমাদের উপর ভিসা স্যাংশন দিতে চাচ্ছে কী কারণে? আর মানবাধিকারের কথা যদি বলে বা ভোটের অধিকারের কথা যদি বলে তো আমরা আওয়ামী লীগ, আমরাই তো এ দেশের মানুষের, বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করেছি। ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’ এই স্লোগান তো আমার দেওয়া। কাজেই সে ক্ষেত্রে হঠাৎ এই ধরনের একটা স্যাংশন দেবার যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না।

ওদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ২৫ সেপ্টেম্বর এক সমাবেশে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার পর, যারা সরকারের অবৈধ কাজে সহায়তা করেছে, তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। প্রশাসনে উৎকণ্ঠা রয়েছে।

বাংলাদেশের নাগরিকদের ব্যাপারে এই ধরনের ভিসা বিধিনিষেধ এবারই প্রথম

২২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ঘোষণা করে যে, তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধীদলের সদস্যসহ বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তি যারা গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ণ করার জন্য দায়ী বা এতে জড়িত বলে চিহ্নিত হয়েছে, তাদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০২৩ সালের ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনের ঘোষণা করা ভিসা বিধিনিষেধই বাংলাদেশের নাগরিকের বিরুদ্ধে নেয়া এই ধরনের প্রথম পদক্ষেপ।

ভিসা বিধিনিষেধ ‘থ্রি সি’

বাংলাদেশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার ভয়েস অফ আমেরিকাকে ‘থ্রি সির’ ব্যাখ্যা দিয়েছেন এইভাবে, ‘থ্রি সি’ নামক ভিসা বিধিনিষেধ নীতি গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে ক্ষুণ্ণ করছে এমন যেকোন ব্যক্তির ওপর এই ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ শব্দটি হলো ‘যেকোন ব্যক্তি’। এমন ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে দুর্বল করে এমন কার্যক্রমের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন, জনসাধারণকে সংগঠনের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগ করা থেকে বিরত রাখার জন্য সহিংসতার ব্যবহার এবং রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ বা তাদের মতামত প্রকাশ করা থেকে বিরত রাখার জন্য পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ।

বাংলাদেশের কোনো নির্দিষ্ট দলকে সমর্থন করে না যুক্তরাষ্ট্র: ম্যাথিউ মিলার

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার আবারো বলেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র কোনো নির্দিষ্ট দলকে সমর্থন করে না; আর, বাংলাদেশে নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত করতে চায় না। সোমবার (২ অক্টোবর) ওয়াশিংটনে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।

ম্যাথিউ মিলার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শুধু নিশ্চিত করতে চায়, বাংলাদেশের জনগণ যেন অবাধে তাদের নেতা নির্বাচন করতে পারে। তিনি বলেন, সুতরাং, আমি গত সপ্তাহে যা বলেছিলাম, কিছুটা ভিন্ন ভাষায় পুনরায় তা বর্ণনা করতে বা বলতে চাই, যা বাংলাদেশিরাও চায়; অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আর, যা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে মিলার বলেন, বাংলাদেশের সরকার, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ এবং গণমাধ্যম সবাই আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছে; যেমনটা আমরা চাই।

তিনি বলেন, আমরা যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তা এই উদ্দেশ্য এবং এটা বাংলাদেশের জনগণের অবাধে তাদের নেতা নির্বাচন করার আকাঙ্ক্ষা সমর্থন করে।

বাংলাদেশিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রথম পদক্ষেপ : ২২ সেপ্টেম্বর এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানান, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বাংলাদেশিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

ম্যাথিউ মিলার বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করতেই এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে, বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে আগ্রহীদের সমর্থন করতে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত অঙ্গীকারের অংশ এটি।

ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপের মধ্যে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। মিলার বলেন, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র; যাতে এটি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়।

মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানান, নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন ব্যক্তি ও তাদের নিকটতম স্বজনরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন।

তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ণ করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত হলে, সেসব ব্যক্তি ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন।

মিলার জানান, এর মধ্যে বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনের ঘোষণা: বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের লক্ষ্যে ভিসা নীতির ঘোষণা দিতে গিয়ে এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, আজ, আমি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করা্র উদ্দেশ্যে অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের ২১২ (এ) (৩) (সি) (‘৩সি’) ধারার অধীনে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করছি।

এই নীতির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যেকোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির জন্য ভিসা প্রদান সীমিত করবে।

এর মধ্যে বর্তমান ও প্রাক্তন বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র মে মাসের ৩ তারিখে বাংলাদেশ সরকারকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।

তিনি আরো বলেছেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে এমন কর্মের মধ্যে রয়েছে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার ব্যবহার, জনগণকে তাদের সংগঠনের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করা থেকে বিরত রাখা এবং রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ, বা মিডিয়াকে তাদের মতামত প্রচার থেকে প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে যেকোনো রকম ব্যবস্থার ব্যবহার।

ওই বিবৃতিতে তিনি বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সকলের- ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুশীল সমাজ এবং মিডিয়ার। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে যারা চায় তাদের সকলকে আমাদের সমর্থন দিতে আমি এই নীতি ঘোষণা করছি।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!