ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদের ২৫তম অধিবেশন রোববার (২২ অক্টোবর) থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। এটি বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ সংসদ অধিবেশন। বিকেল ৪টায় জাতীয় সংসদ ভবনের সংসদ কক্ষে অধিবেশনটি শুরু হবে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন।
গত ৫ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে অধিবেশনের আহ্বান করেন। এই অধিবেশনটি একাদশ জাতীয় সংসদের ২৫তম ও ২০২৩ সালের পঞ্চম। ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রথম অধিবেশন বসেছিল। এর আগে, গত ৩ সেপ্টেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদের ২৪তম অধিবেশন শুরু হয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর শেষ হয়। সংসদে ৩৫টি বিল তোলা হয়। পাস হয় ১৮টি বিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় নিয়মিত বিরতিতেই অনেকটা নিয়মরক্ষার জন্য চলতি সংসদের অধিবেশন বসেছে। টানা দুই বছর করোনা মহামারির মধ্যে সীমিত পরিসরে সংসদের কার্যক্রম চলেছে। করোনার কারণে মাত্র দেড় ঘণ্টায় একটি অধিবেশন শেষ করা হয়েছে, যা ছিল দেশের ইতিহাসে সংক্ষিপ্ততম অধিবেশন। আর করোনা পরিস্থিতিসহ অন্যান্য সময়ে অধিবেশন সংক্ষিপ্ত হওয়ায় চলতি সংসদের কার্যদিবস আগের দু’টি সংসদের তুলনায় কম। গত ১৪ সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া ২৪তম অধিবেশন পর্যন্ত মোট ২৬২ কার্যদিবস অধিবেশন বসেছে। এর আগে দশম সংসদ ৪১০ কার্যদিবস ও নবম সংসদ ৪১৮ কার্যদিবস চলে।
সংসদ সচিবালয়ের তথ্যানুযায়ী, চলতি সংসদে রেকর্ডসংখ্যক অধিবেশন বসলেও তুলনামূলক কমসংখ্যক বিল পাস হয়েছে। গত ২৪তম অধিবেশন পর্যন্ত ১৪০টি বিল পাস হয়েছে। এর আগে নবম সংসদে ২৭১টি ও দশম সংসদে ১৯৩টি বিল পাস হয়েছিল। তবে চলতি অধিবেশনে রেকর্ডসংখ্যক বিল পাসের সম্ভাবনা রয়েছে। গত অধিবেশনে ১৮টি বিল পাস হয়েছিল। এবার ২৫টির মতো বিল পাস হতে পারে। বর্তমানে সংসদে পাসের অপেক্ষায় আছে পাঁচটি বিল। আর ১২টি বিল সংসদীয় কমিটিতে পরীক্ষাধীন রয়েছে। সংসদের উত্থাপনের জন্য গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাঁচটি বিল সংসদ সচিবালয়ে জমা পড়েছে। এই বিলগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা বিল-২০২৩, আনসার ব্যাটালিয়ন বিল-২০২৩, সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধন) বিল-২০২৩, জেলা (পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলাসমূহে বলবৎকরণ) বিল-২০২৩ এবং নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বিল-২০২৩। এছাড়া মন্ত্রী পরিষদে অনুমোদিত আরো ৩/৪টি বিল সংসদে আসতে পারে বলে জানা গেছে।
এদিকে, চলতি সংসদে রেকর্ডসংখ্যক ৩১ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এমন দুঃখজনক ঘটনা অতীতের কোনো সংসদে ঘটেনি। বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো: ফজলে রাব্বি মিয়া, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ বরেণ্য সংসদ সদস্যরা মৃত্যুবরণ করেছেন। এর মধ্যে ছয়জন মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। সর্বশেষ গতকাল শনিবার পটুয়াখালী-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো: শাহজাহান মিয়া মৃত্যুবরণ করেছেন। সংসদ-সদস্যদের মৃত্যুজনিত কারণে উপ-নির্বাচনের বেলায়ও চলতি সংসদে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া কুয়েতের আদালতে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সদস্য শহীদ ইসলাম পাপুলের সাজা হওয়ায় বিদেশে নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে জড়িত থাকায় সংসদ সদস্য বাতিলের ঘটনাও প্রথম ঘটেছে।
চলতি সংসদের প্রথম বছর ২০১৯ সালে ৬১ কার্যদিবস, ২০২০ সালে ৫৩ কার্যদিবস, ২০২১ সালে ৪২ কার্যদিবস, ২০২২ সালে ৪৪ কার্যদিবস এবং চলতি বছরে ৬১ কার্যদিবস অধিবেশন বসেছে। এই সংসদের ২৫টি অধিবেশনের মধ্যে দু’টি বিশেষ অধিবেশন ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর বিশেষ অধিবেশন বসে। পরের বিশেষ অধিবেশনটি ছিল চলতি বছরের এপ্রিল মাসে। জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এই অধিবেশন বসে।
২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি বর্তমান সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে। আগামী ২৯ জানুয়ারি এই সংসদের ৫ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হবে। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে, সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। সে অনুযায়ী, আগামী পহেলা নভেম্বর থেকে নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হবে। আর স্বাভাবিক সময়ে একটি অধিবেশন শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে পরবর্তী অধিবেশন বসার বাধ্যবাধকতা থাকলেও নির্বাচনীকালীন সময়ের জন্য সেটা প্রযোজ্য নয়। ফলে চলতি অধিবেশন শেষ অধিবেশন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু বলেন, চলতি সংসদে অধিবেশনের কার্যদিবস কম হলেও প্রতিটি অধিবেশন সংবিধান ও কার্যপ্রণালী বিধি মেনে বসেছে এবং পরিচালিত হয়েছে। সংবিধানের বাধ্যবাধকতার কারণে করোনার ঝুঁকির মধ্যেও অধিবেশন চালাতে হয়েছে।বিরোধী দলের সংসদ বর্জনের ঘটনা ঘটেনি। ওয়াক আউটের ঘটনাও ছিল খুবই কম। এই সংসদের রেকর্ডসংখ্যক সদস্যের মৃত্যু হলেও বিরোধী দলীয় সদস্যরাসহ সবাই সংসদে বাধাহীনভাবে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। ফলে সংসদ ছিল পুরোপুরি কার্যকর।
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, সংসদকে কার্যকর করতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে বিরোধীদল জাতীয় পার্টি। অতীতের মতো সংসদ বর্জনের পরিবর্তে বিরোধীদলীয় সংসদ-সদস্যরা সরকারের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিতে সবসময় সোচ্চার ছিল।
উল্লেখ্য, অধিবেশন শেষ হওয়ার পর আগামী নভেম্বর মাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর আগামী জানুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :