• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
শেখ হাসিনা

ভয় ভীতি আওয়ামী লীগকে দেখিয়ে লাভ নেই


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ২৮, ২০২৩, ০৫:৩৪ পিএম
ভয় ভীতি আওয়ামী লীগকে দেখিয়ে লাভ নেই

ঢাকা : আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই জানিয়ে আন্দোলনের মুখে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির সরকারের পতনের কথা স্মরণ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে আবার নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, নৌকায় ভোট দিলে ‘হয় উন্নয়ন’ আর বিএনপি করে ‘দুর্নীতি, মানুষ খুন’।

শনিবার (২৮ অক্টোবর) চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত টানেল উদ্বোধন করে আনোয়ারায় কর্ণফুলী ইপিজেডের মাঠে জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সরকার পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে একই দিন রাজধানীতে বিএনপি বড় কর্মসূচি চলছে। দলটি আজকে থেকে আন্দোলনের ‘মহাযাত্রা’র ঘোষণাও দিয়ে রেখেছে।

পুলিশের কাছ থেকে অনুমোদন না নিয়ে সমাবেশ করতে নেমেছে জামায়াতে ইসলামীও।

এই দুই সমাবেশস্থলের অদূরে জমায়েত আছে আওয়ামী লীগেরও। সকাল থেকে পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও দুপুরের আগে কাকরাইল মোড়ে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এরপর বিএনপির সমাবেশ বন্ধ হয়ে যায়, রোববার হরতালের ডাক দেয় দলটি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বিএনপি সরকারের পতন ঘটাবে, নানা রকম আন্দোলনের হুমকি দেয়। একটা কথা স্পষ্ট বলতে চাই, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে বাংলাদেশকে আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছে। ওই সমস্ত ভয় ভীতি আওয়ামী লীগকে দেখিয়ে কোনো লাভ নেই।

১৯৯৬ সালের আন্দোলনের মুখে বিএনপি সরকারের পতনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিল বলেই ১৫ ফেব্রুয়ারি তাকে বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন করে ক্ষমতা থেকে হটিয়েছিল, এটা তাদের মনে রাখা উচিত। এরা ভোট চোর, জনগণের অর্থ চোর, ওরা খুনি।

বিএনপি-জামায়াত মানেই হচ্ছে খুনি, হত্যাকারী, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ শান্তিতে বিশ্বাস করে, আওয়ামী লীগ উন্নয়নে বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী। এই বাংলাদেশকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না, এটা হল বাস্তবতা।

দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাজা হওয়ার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। 

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির কাজ হচ্ছে মানুষ খুন করা, লুটপাট করা, দুর্নীতি করা। খালেদা জিয়া এতিমের অর্থ এতিমদের না দিয়ে এক ব্যাংকে রেখে দিয়ে সেই অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত।

তার ছেলে তারেক রহমান বিদেশে পালিয়ে আছে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়ে দেশ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। আর কোটি কোটি টাকা মানি লন্ডারিং করেছে। ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারির সাথে জড়িত, সে কারণে সে সাজাপ্রপ্ত।

একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে, সেই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত।

১৯৭৫ সালে বাবা-বা ভাইদের হত্যা এবং এরপর জিয়াউর রহমানের শাসনামলে খুনিদের রক্ষা করে সংবিধানে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের কারণে বিচার না পাওয়া, ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর তার ওপর বারবার আক্রমণের কথাও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এসেছি এমন একটা সময় যখন খুনির দল পাওয়ারে, যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষমতায়।

বারবার আমার ওপর আক্রমণ। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি আমার উপরে গুলি হয়েছিল, ৩০ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী মারা গিয়েছিল। বারবার বাধা পেয়েছি, নিজের জীবনের কোনো মায়া করিনি।

একটি কথাই শুধু ভেবেছি, বাংলাদেশের মানুষ, যে মানুষের জন্য আমার বাবা সারা জীবন কষ্ট করেছেন, যে মানুষের জন্য আমার বাবা জেল-জুলুম, অত্যাচার সহ্য করেছেন, যে মানুষের জন্য আমার বাবা-মা জীবন দিয়ে গেছেন, সেই মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করব।

এ দেশের কোনো মানুষ না খেয়ে কষ্ট পাবে না, ভূমিহীন থাকবে না, রোগে চিকিৎসা পাবে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে, প্রত্যেক ছেলে-মেয়ে স্কুলে পড়বে সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমার একটাই কাজ দেশের মানুষের কল্যাণ করা।

ওয়াদা করেন নৌকায় ভোট দেবেন : গত ১৫ বছরে দেশে, বিশেষ করে চট্টগ্রামে উন্নয়নের বর্ণনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনারা স্বাধীনতা পেয়েছেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনারা উন্নয়ন পেয়েছেন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আজ কর্ণফুলী টানেল পেয়েছেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আরও উন্নয়ন পাবেন।

এরপর নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে ভোটের প্রতিশ্রুতিও আদায় করেন আওয়ামী লীগ প্রধান।

তিনি বলেন, আর কোনো চাওয়া-পাওয়া আমার নেই। শুধু আপনাদের দোয়া চাই। আপনারা দোয়া দেবেন।

নৌকা মার্কার ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আজকে কর্ণফুলী টানেল, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আজকে উন্নয়ন। আপনারা আমাদের কাছে ওয়াদা করেন আগামী নির্বাচন নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগে আপনারা সেবা করার সুযোগ দেবেন কি না, হাত তুলে ওয়াদা করেন।

নেতা-কর্মীরা সমস্বরে চিৎকার করে তার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাবা, মা, ভাই সব হারিয়ে আজকে আপনারাই আমার পরিবার, আপনারাই আমার স্বজন, আপনারাই আমার সব, সেভাবেই আমি দেশ পরিচালনা করি।

দোয়া করবেন, এই উন্নয়নের ধারা যেন অব্যাহত থাকে, ওই লুটেরা, সন্ত্রাসীদের হাতে যেন দেশ না পড়ে। বাংলাদেশের মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না- জাতির পিতা বলেছিলেন।

আমরা করি উন্নয়ন, ওরা করে ধ্বংস : বিএনপি সম্পর্কে সতর্ক করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন দেশের উন্নয়ন করি, ওই বিএনপি জামায়াত কী করে? ধ্বংস করে। তাদের ইতিহাস আগুন নিয়ে জ্যান্ত মানুষ পুড়িয়ে মারার ইতিহাস।

ওরা ভোট চোর, জনগণের অর্থ চোর, তারা হত্যায় বিশ্বাসী, আওয়ামী লীগ উন্নয়নে বিশ্বাসী। এই বাংলাদেশকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার পরিবারের হত্যার পেছনে জিয়াউর রহমান জড়িত। আমার বাবা-মা হত্যার করতে পারতাম না। কারণ, ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স দেওয়া হয়েছিল। জিয়াউর রহমান দিয়েছিল। খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে খুনিদেরকে পার্লামেন্টে বসিয়েছিল।

এরা খুন করা ছাড়া আর কিছু জানে না। আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতা-কর্মীকে খুন করেছে। … ১০ ট্রাক অস্ত্র পাচারের সঙ্গে তারা জড়িত। গ্রেনেড হামলায় আমাকে হত্যা চেষ্টা করেছে।

চট্টগ্রাম ‘সন্ত্রাসের রাজত্ব’ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা শান্তির অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাচ্ছি।

দইজ্জার তল দিয়ে গাড়ি চলে : বঙ্গবন্ধু টানেলকে চট্টগ্রামের মানুষের জন্য ‘উপহার’ হিসেবে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, “আজ দইজ্জ্যার তল দিয়ে (নদীর নিচ দিয়ে) গাড়ি চলে।

অর্থাৎ টানেল, কর্ণফুলী নদী। এখানে চট্টগ্রাম বন্দর। বারবার সিলটেশন (পলি জমা) হয়। যত ব্রিজ করব তত সিলটেশন হয়। তাই সিদ্ধান্ত হয় টানেল করে দেব।

এই টানেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিরাট ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এখন আর ঝড় বৃষ্টির অপেক্ষা করতে হবে না। নদীর তলদেশ দিয়ে এত বড় টানেল ধরে চলে যেতে পারবেন, এই প্রথম।

এখান থেকে কক্সবাজার যেতে অনেক সময় লাগত। এখন আর বেশি সময় লাগবে না। ঢাকা থেকেও সরাসরি যাওয়া যাবে। এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে আমরা যুক্ত হব। এই টানেল ভূমিকা রাখবে।

চট্টগ্রামের উন্নয়নে তার সরকার কী কী করেছে, তার বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৫ বছরে চট্টগ্রামে যত উন্নয়ন হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছি। চায়না ইকোনমিক জোন হবে গহিরায়।

ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক প্রশস্তকরণ, মেট্রোরেল নির্মাণের সমীক্ষা চলছে সফল হলে করে দেব, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করছি। চাক্তাই কালুরঘাট মেরিন ড্রাইভের কাজ চলছে।

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ২৫০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ করে দেব। বে টার্মিনাল করা হচ্ছে। একাধিক পানি শোধনাগার করেছি। স্যুয়ারেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি।

জলাবদ্ধতাকে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় সমস্যা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, এই সমস্যা দূরীকরণে ১১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প চলছে।

ইস্টার্ন রিফাইনারিতে দ্বিতীয় শোধনাগারের কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। ৩৫টি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাইটেক পার্ক, সফটওয়ার পার্ক, মিনি সেক্রেটারিয়েট করছি।

মাতারবাড়িতে ডিপ সি পোর্ট হচ্ছে। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করেছি। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাণিজ্য রাজধানী। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলেই সম্ভব হয়েছে এসব।

শিগগির ট্রেনে চেপে কক্সবাজার যাবেন জানিয়ে তিনি বলেন, রাঙামাটি পর্যন্ত রেল লাইন করার চিন্তা আছে।

আজ ভাতের কষ্ট নাই : শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিচ্ছি দেশকে। বয়স্ক ভাতা দিচ্ছি। বিধবা, স্বামী নিগৃহীতা ভাতা দিচ্ছি, বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি, সবার হাতে স্মার্ট ফোন। ২০০৮ সালে ঘোষণা দিয়েছিলাম, আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ।

২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখেছি। বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আজ ভাতের কষ্ট নেই। দারিদ্যের হার কমিয়ে এনেছি। মানুষ আজ ভাতের কষ্ট পায় না। জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন করেছি। লক্ষ্য, জাতির পিতার বাংলায় একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না।

যুব সমাজের কর্মসংস্থানের জন্য নানা রকম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, বিদেশগামীদের জন্য প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক করে দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “অনুরোধ, যারা বিদেশে চাকরি করতে যাবেন দালালকে টাকা দেবেন না।

ছয় লাখ ফ্রি ল্যান্সার আজ দেশে। বেকারত্ব তিন ভাগে নামিয়ে এনেছি। আশা করি, কেউ বেকার থাকবেন না।

দারিদ্র্যের হার ৪১ থেকে ১৮ ভাগে নামিয়ে আনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বিনা পয়সায় ঘর করে দিয়েছি। তাদের জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য জাতির পিতার বাংলায় একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না।

নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ যুদ্ধ : বিশ্বব্যাপী মন্দা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর এখন আবার ইসরায়েল ফিলিস্তিন যুদ্ধের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব কারণে সারা বিশ্বে জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। তাই এক কোটি মানুষকে কার্ড করে দিয়েছি। কম দামে পণ্য কিনতে পারবেন।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!