ঢাকা: আগামী ৬ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের তারিখ ধরে তপসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ৮ নভেম্বর থেকে ১৩ নভেম্বরের মধ্যে তপসিল ঘোষণার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠকও সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ৫ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক শেষে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
তপসিল ঘোষণার বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নভেম্বরের প্রথমার্ধে তপসিল ঘোষণা করে জানুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি রয়েছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি অবহিত করার জন্য আগামী শনিবার নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছেন, নির্বাচনের জন্য পরিস্থিতি অনুকূল হোক, প্রতিকূল হোক, নির্বাচন করতেই হবে। পরিস্থিতি প্রতিকূল হলে নির্বাচন হবে না—এ ধরনের কোনো মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং (ভুল ধারণা) জনগণের মধ্যে যেন না থাকে, সে জন্য স্পষ্ট করে বলতে চাই, নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ইসির ঊর্ধ্বতন সূত্র জানিয়েছে, আগামী রবিবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সোম অথবা মঙ্গলবার কমিশন সভার বৈঠক আহবান করা হতে পারে। ঐ বৈঠকে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিয়োগ চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা আছে। একই সঙ্গে সংসদ ভোটের তপসিল ঘোষণার সময়সূচি জানিয়ে দেওয়া হতে পারে। ৬ জানুয়ারিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে কমিশন। যদিও কমিশনের কারো কারো ৪ জানুয়ারি ভোটের পক্ষে মত রয়েছে। তপসিল ঘোষণার অংশ হিসেবে আসনভিত্তিক ভোটার তালিকার প্রিন্ট কার্যক্রমও প্রায় শেষ। ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের সংখ্যাও চূড়ান্ত হয়ে গেছে। প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসারের খসড়া তালিকা স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটদানের সুযোগ দিতে উৎসাহিত করবে ইসি।
শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশনা: জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। নির্বাচন সামনে রেখে বুধবার নির্বাচন ভবনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সচিব ও দপ্তরের প্রধানদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ইসির এক বৈঠকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে ভোটে কার কী দায়িত্ব তা নির্ধারণ করে দিয়ে সেটিকে যথাযথ পালনের নির্দেশনা দেয় ইসি। জবাবে ইসিকে সহায়তায় পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছেন বলে আশ্বাস দেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে ইসির সভাকক্ষে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) নির্বাহী পরিচালক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের (সমন্বয় ও সংস্কার) সচিব এবং বিভিন্ন বিভাগের প্রধানসহ ২৯ জন কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন।
পোস্টাল ব্যালটে ভোট হবে কি? আইনের আলোকে পোস্টাল ব্যালটে শুধু এবার নয়, সব সময় ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল। এবারও ভোট দিতে পারবেন। এই ব্যাপারে আইনের বাধ্যবাধকতাও রয়েছে, কমিশন এই বার্তাটি সংশ্লিষ্টদের দিয়েছে। বিদেশে যে বাংলাদেশি মিশনগুলো রয়েছে তার মাধ্যমে নোটিশ আকারে যেন দেওয়া হয়, এজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। প্রবাসে বাংলাদেশি যারা দেশের ভোটার তালিকাভুক্ত নাগরিক রয়েছে, তারা যদি ভোট দিতে উত্সাহিত হন, কী পদ্ধতিতে ভোট দেবেন সে বার্তাটা যেন জানিয়ে দেওয়া হয়।
ঋণখেলাপি প্রসঙ্গে ইসি সচিব বলেন, আইন যে সংশোধন হয়েছে নমিনেশন জমা দেওয়ার সর্বশেষ যে তারিখ আছে ঐ দিনের আগের দিন পর্যন্ত যারা ঋণখেলাপি তারা টাকাপয়সা জমা দেবেন। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় তারা যাতে রিটার্নিং অফিসারের কাছে হালনাগাদ তথ্য জমা দিতে পারেন।
প্রধান বিচারপতির সহায়তা চেয়েছেন সিইসি
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে অধস্তন আদালতের কয়েকশ বিচারক চেয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। গতকাল বুধবার সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করে তিনি এই প্রস্তাব দেন। সিইসিকে প্রধান বিচারপতি বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আপনাদের সুপ্রিম কোর্টে প্রস্তাব পাঠাতে হবে। সেই প্রস্তাব মন্ত্রণালয় থেকে সুপ্রিম কোর্টে আসলে তার ওপর আমরা মতামত দিয়ে সেখানে পাঠিয়ে দেব। তখন সিইসি বলেন, আমরা আমাদের সচিবালয় থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক চেয়ে একটি প্রস্তাব শিগগিরই আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করব।
প্রধান বিচারপতির খাস কামরায় অনুষ্ঠিত এই সাক্ষাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও নির্বাচন কমিশনের চার কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, বেগম রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এমএস