ঢাকা: সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপি-জামায়াতের ৪র্থ দফার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি শুরুর আগের রাতে ১০ ঘণ্টায় ১২ যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব আগুন কারা দিয়েছে তা জানা যায়নি।
রোববার (১২ নভেম্বর) সকালে ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া বিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
তাতে জানানো হয়েছে, শনিবার রাত ৮টা থেকে ১২ নভেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত (অবরোধ শুরুর আগের রাত) সারাদেশে ১২টি যানবাহনে আগুন দিয়েছে। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে সংবাদ দেওয়া হয় ফায়ার সার্ভিসকে।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, ঢাকা সিটিতে ৯টি, ঢাকা বিভাগে (গাজীপুর) ২টি, বরিশাল বিভাগ (বরিশাল সদর) ১টি ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১০টি বাস, ১টি পিকআপ ও মালবাহী একটি ট্রাকে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ অগ্নিকাণ্ড নির্বাপণে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর ১৯টি ইউনিট ও ১৯৩ জন জনবল কাজ করে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাশেদ বিন খালিদ জানান, শনিবার রাত ৮টা ২০ মিনিটে রাজধানীর আরামবাগ পুলিশ বক্সের পাশে লাল-সবুজ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এর ১০ মিনিটের ব্যবধানে গাবতলীতে রাত সাড়ে ৮টায় গাবতলী লিংক নামে আরেকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। বাসটি গাবতলী পুলিশ ফাঁড়ির বিপরীত পাশে পার্কিং অবস্থায় ছিল। তাতে কোনো যাত্রী ছিল না। উভয় ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে আগুন নেভান। এ ছাড়া রাত ৯টার দিকে গুলিস্তানে সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটের সামনে সময় নিয়ন্ত্রণ পরিবহনের আরেকটি বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় রাত সোয়া ৯টার দিকে আগুন দেওয়া হয় অনাবিল পরিবহনের আরেকটি বাসে। এতে আবদুল জব্বার (৪০) নামে এক যাত্রী দগ্ধ হন। তিনি পেশায় রিকশাচালক।
রাত ১১টা ৩৮ মিনিটে মিরপুরে কাফরুল থানার বিপরীতে প্রজাপতি পরিবহনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। রাত সাড়ে ১০টায় আগারগাঁওয়ের তালতলায় শিকড় পরিবহন বাসে ও ১২টায় রূপনগর থানার সামনে একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। ১০টা ৪৫ মিনিটে পঙ্গু হাসপাতালের সামনে দুর্বৃত্তরা বৈশাখী পরিবহনের একটি বাস আগুনে পুড়িয়ে দেয় এবং সূত্রাপুর এলাকায় মালঞ্চ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে জিএমপির সদর থানার ধীরাশ্রম দাক্ষিণখান এলাকায় চট্টগ্রামগামী মালবাহী একটি ট্রাকে ও রাত সোয়া ৯টার দিকে বাসন থানার যোগীতলার মোড়ে একটি পিকআপে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এছাড়া বরিশাল বিভাগীয় পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে মা এন্টারপ্রাইজের একটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
এর আগে শনিবার সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে ফার্মগেটে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে। কে বা কারা ফার্মগেটের বাবুল টাওয়ারের সামনের সড়কে ককটেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। তবে আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
অন্যদিকে শনিবার (১১ নভেম্বর) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কালী ও শ্যামা পূজার ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানাদি অবরোধ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছে বিএনপি।
দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক বিবৃতিতে বলেন, ১২ নভেম্বর (রোববার) সকাল ৬টা থেকে ১৪ নভেম্বর (মঙ্গলবার) সকাল ৬টা পর্যন্ত বিএনপি এবং সমমনা দলগুলোর ডাকা ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচিতে গণমাধ্যম ও সংবাদপত্র বহনকারী গাড়ি কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে। এছাড়াও জরুরি সেবায় নিয়োজিত অ্যাম্বুলেন্স চলাচল, অক্সিজেন সিলিন্ডার বহনকারী গাড়ি অবরোধ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে।
শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা চতুর্থ ধাপের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধেও ঢাকাসহ সারাদেশে বাস-মিনিবাস চলাচল অব্যাহত থাকবে বলে জানায় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিএনপি-জামায়াতের অবরোধের ২ দিন ঢাকাসহ সারা দেশে বাস-মিনিবাস চলাচল অব্যাহত থাকবে। সকল রুটে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য সমিতি/কোম্পানিভুক্ত মালিকদের অনুরোধ জানানো হলো।
গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পরদিন দেশব্যাপী হরতাল ডাকে বিএনপি। এরপর দুই সপ্তাহে তিন দফায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোট। প্রথম দফায় ৩১ অক্টোবর থেকে টানা তিন দিন, দ্বিতীয় দফায় ৫ নভেম্বর থেকে ৪৮ ঘণ্টা এবং সর্বশেষ ৮ নভেম্বর থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়।
এই হরতাল ও তিন দফা অবরোধ কর্মসূচিতে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় বাস-ট্রাকে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ভাঙচুরও করা হয়েছে অনেক যানবাহন। এই নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দিতে এরই মধ্যে পুলিশ ও র্যাব পৃথকভাবে পুরস্কার ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া নাশকতার অভিযোগে মামলা ও দেশজুড়ে গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ জানিয়েছে, নাশকতা ঠেকাতে তারা সর্বোচ্চ সতর্ক এবং কঠোর অবস্থানে রয়েছে। নাশকতায় জড়িত কাউকেই ছাড়া হবে না।
এমএস