ঢাকা : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘নির্বাচনী ট্রেন’ প্রস্তুত। নির্বাচন কমিশনও সবুজ পতাকা তোলার প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে, কিন্তু বিএনপি এখনও বলছে প্রতিরোধের কথা। নির্বাচনের আগে রাজনীতির মাঠের এ উত্তেজনা প্রশমনে নিঃশর্ত সংলাপের আহ্বানে যুক্তরাষ্ট্রের দূতিয়ালি এখনও স্পষ্ট কোনো ফল আনতে পারেনি।
আওয়ামী লীগ বলে রেখেছে আলোচনা যদি বিনা শর্তে হয়, তারা রাজি হতেও পারে। কিন্তু বিএনপি নেতারা সংলাপের কোনো যৌক্তিকতা দেখছেন না।
পরস্পরবিরোধী দুই রাজনৈতিক দলের এমন অবস্থানের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিস্তারিত দিনক্ষণ ঘোষণার জন্য মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) দিনভর ব্যস্ততা গেছে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের। যদিও তফসিল কবে হবে, সে কথাটি কমিশনের মুখপাত্র সুনির্দিষ্ট করে বলতে চাননি।
ভেতরের খবর হল, সব ঠিক থাকলে বুধবারই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে পারেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। আর তা না হলে অপেক্ষা করতে হবে বৃহস্পতিবারের জন্য। ফলে সবার নজর এখন নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটির দিকে।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) সকাল থেকে শুরু হচ্ছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর পঞ্চম দফার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ। সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে তাদের এই কর্মসূচি।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলো ‘সতর্কতামূলক প্রতিরোধ কর্মসূচি’ দিয়ে রেখেছে।
রাজনৈতিক মতানৈক্যের এ ডামাডোলের মধ্যেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে ইসি।
কমিশনের মুখপাত্র মো. জাহাংগীর আলম মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, প্রথা অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিটিভি ও বেতারে ভাষণের মাধ্যমে জাতির উদ্দেশ্যে ভোটের তফসিল ঘোষণা করবেন। কখন কীভাবে সেই ঘোষণা হবে, সে বিষয়ে বুধবার সকাল ১০টায় ব্রিফিংয়ে জানানো হবে।
অবরোধ ও তফসিল ঠেকাতে নানা কর্মসূচির মধ্যে নিরাপত্তার কোনো ‘হুমকি’ দেখছে না কমিশন। জাহাংগীর আলম বলেছেন, “আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ। তারাই দেখবে। কমিশন ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছে।”
# পাঁচ সদস্যের ইসিতে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গী চার নির্বাচন কমিশনার হলেন আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমান।
# ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেওয়া এ ইসির অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হচ্ছে।
# ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, এর আগে ৯০ দিনের মধ্যে ভোট হতে হবে।
# গত ১ নভেম্বর নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে। ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা আছে। ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির শুরুতেই ভোট আয়োজনের প্রস্তুতির কথা এর আগে বিভিন্ন সময়ে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে রাজনীতিতে ফিরে এসেছে সহিংসতা।
ইসি যখন নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করতে যাচ্ছে, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন তখন দুই শিবিরে বিভক্ত। এক অংশ নির্বাচনে, অন্য অংশ রাজপথের আন্দোলনে। সামনে কী হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে জনমনে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। দশ বছর আগের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্মৃতি ফিরে ফিরে আসছে।
২০১৪ সালে সেই নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে নির্বাচনে জিতে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।
এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও ভোটের ফলে ভরাডুবির পর ‘আগের রাতে’ ভোট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ তোলে। সংসদের মেয়াদের শেষ দিকে এসে তাদের নির্বাচিত এমপিরা সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন।
এবার ২০১৪ সালের মত একই দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে রাজনীতিতে ফিরে এসেছে সহিংসতা। তাতে ডজনখানেক মানুষের প্রাণ গেছে। যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার ঘটনায় জনমনে বাড়ছে শঙ্কা।
তবে পরিস্থিত যেমনই হোক, সাংবিধানিক দায়িত্বের মধ্যে থেকে নির্ধারিত সময়ে ভোট আয়োজনের কোনো বিকল্প যে নির্বাচন কমিশনের সামনে নেই, সে কথা স্পষ্ট করেই বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতি বলেছেন সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা যে কোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে। আমরা বলেছি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশন বদ্ধপরিকর।
‘নির্বাচনী ট্রেন’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোট নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে পুরোদমে। বিভিন্ন কমিটি গঠন করে এগিয়ে নিচ্ছে কাজ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনী ট্রেন এখন প্রস্তুত।
আওয়ামী লীগ সেই ট্রেনের যাত্রী হয়ে ইতোমধ্যে দেশব্যাপী নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছেন। নির্বাচনে বাধা দেওয়ার যে কোনো চেষ্টা প্রতিহত করতে দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সর্তক পাহারায় থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন।
নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটি করেছে। একাধিক বৈঠকে করে খসড়াও প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামী নির্বাচনে দলের স্লোগান ঠিক হয়েছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’।
দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে সদস্য সচিব করে ইতোমধ্যে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। নির্বাচনে বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের জন্য গঠন করা হয়েছে ১৪টি উপ কমিটি।
নির্বাচনী মাঠ গোছানোর পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের সামনে তুলে ধরতে দলের কেন্দ্র থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে আরেকবার দেশ পরিচালনার সুযোগ দেওয়ার কথা বলছেন তারা।
আগামী সংসদ নির্বাচনে যারা প্রার্থী হতে আগ্রহী, আওয়ামী লীগের এমন সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচারে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। ধানমন্ডিতে দলের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ভিড় বেড়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনের জন্য শতভাগ প্রস্তুত। নির্বাচন করার জন্য যা যা প্রয়োজন আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, কালকে নির্বাচন হলেও আমরা করতে পারব।
এ মাসের মধ্যেই মনোনয়ন দেওয়ার কাজ শেষ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ইশতেহার হলেই আমরা মনোনয়নের কাজ শুরু করব। এ মাসের মধ্যেই মনোনয়নের কাজ শেষ হবে।
বিএনপির ৪৮ ঘণ্টা অবরোধে সারা দেশে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তফসিল ঘোষণা নিয়েও প্রস্তুতি রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আগামীকাল তফসিল ঘোষণা হলে তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্পটে এবং সারাদেশের জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে আনন্দ মিছিল করবে আমাদের নেতাকর্মীরা।
নজর এখন ইসির দিকে
প্রতিরোধের ডাক : বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো রাজপথেই ‘একতরফা নির্বাচন প্রতিরোধ’ করার কথা বলছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা কারাগারে, অনেকে আত্মগোপনে আছেন। তেমনই একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ক্ষমতার পরিবর্তন আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে চাই। কিন্তু সেই পরিবেশ তো সরকারকেই করতে হবে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের কারাগারে বন্দি করে আপনি বলবেন নির্বাচনে আসতে, যেটা কারও পক্ষে সম্ভব?
ধরপাকড়ের মধ্যে ভার্চুয়াল ব্রিফিং করে বিএনপির কর্মসূচি নিয়মিত জানিয়ে আসছেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেছেন, সরকার এক তরফা নির্বাচন করলে এটা সর্বশক্তি দিয়ে জনগণ প্রতিরোধ করবে। তারা যদি মনে করে থাকে যে, ২০১৪ অথবা ২০১৮ সালের মতে এবারও একা একা নির্বাচন করবে, সেটা এবার হতে দেওয়া হবে না।
আমরা এখনও বলতে চাই, তফসিল নাটক বন্ধ করুন, পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা দিন, দলদাস নির্বাচন কমিশন বাতিল করুন।
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা জনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ক্ষমতার মসনদকে পোক্ত করতে সরকার জনগণের দাবিকে যেভাবে উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে, এর পরিণতি শুভ হবে না। সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশে সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে।
বিএনপি ও সমমনা জোটের বাইরে সিপিবি, বাম গণতান্ত্রিক জোট, বাংলাদেশ জাসদ, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ এবং জামায়াতে ইসলামীও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জানান, ‘জনদাবি উপেক্ষা করে’ নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করলে তা তারা মেনে নেবেন না।
নির্বাচন কমিশন জনগণের দাবি উপেক্ষা করে যদি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে, তার প্রতিবাদে সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করব। পরের দিনই আমরা হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করব। আমি নেতাকর্মীদের বলতে চাই, এই কর্মসূচি সফল করার জন্য সবাই ভূমিকা পালন করবেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তফসিল ঘোষণার দিন ঢাকায় নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিলের কর্মসূচি দিয়ে রেখেছে আগেই।
দলের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, সমঝোতা ছাড়া একতরফা তফসিল দিলে পরিস্থিতি আরও সংঘাতময় হবে। আমরা সেটা চাই না। তবে যদি জনগণের দাবিকে উপেক্ষা করে সেই পথে যায়, তার পরিণত কঠিন হবে বলে আমি মনে করি।
সংলাপের আলাপ : অনিশ্চিত এমন পরিস্থিতির মধ্যে শর্তহীন সংলাপের আহ্বান নিয়ে তৎপর হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন।
বিষয়টিকে ‘ইতিবাচকভাবে’ দেখার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আমাদের বন্ধু দেশ যদি আমাদের কোনো সাজেশন দেয়, উই টেইক ইট সিরিয়াসলি। আমরা সেটা পর্যালোচনা করি। যদি মনে করা যায় যে এটা দেশের মঙ্গলের জন্য উই একসেপ্ট ইট।
তবে সেখানেও কিন্তু আছে। মোমেনের ভাষায়, আমাদের সংলাপ-টংলাপে আপত্তি নাই, কিন্তু কার সঙ্গে করব সেটা নিয়ে আমাদের নিশ্চয় প্রশ্ন আছে।
সংলাপের বিষয়ে দলের ভাবনা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, কাল-পরশুর মধ্যে তফসিল ঘোষণা হবে, এই সময়ে শর্তহীনভাবে যদি কেউ সংলাপের ঘোষণা দেয় যে তারা নির্বাচনে যাবে, যে নির্বাচন অধিকতর স্বচ্ছ্ব, সুষ্ঠু করার বিষয়ে কথা বলবে, সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন সবাইকে নিয়ে বসতে পারে।
আর বিএনপি তো সংলাপ করার জন্য আমাদেরকে কোনো চিঠি বা আহ্বান করেনি। শর্তহীনভাবে প্রস্তাব না দেওয়া পর্যন্ত সংলাপের বিষয়ে আমরা কীভাবে বলব।
বিএনপির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডনাল্ড লুর চিঠির বিষয়ে তারা তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে এখনও কোনো বার্তা তারা পাননি।
আত্মগোপনে থাকা দলের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, সরকার তো একতরফা নির্বাচনের মধ্যেই আছে, তারা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে আগের অবস্থানেই আছে। সেক্ষেত্রে সংলাপে বসে কী হবে। আর আমাদের মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা জেলে। কীভাবে সংলাপ হবে? এটা সম্ভব নয়।
আরেকজন বিএনপি নেতা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যে চিঠি দিয়েছে, এটা তো ভালো উদ্যোগ। কিন্তু সরকার ও ইসির ভূমিকা কী দেখছেন? তারা একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা নিয়েই ব্যস্ত। ফয়সালা আমাদের রাজপথেই করতে হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এর আগে একাধিকবার বলেছেন, রাজনৈতিক মতানৈক্য নিরসনের কাজ নির্বাচন কমিশনের নয়, বরং দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পথ খুঁজতে হবে।
নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাংগীর আলম স্পষ্ট করেই বলেছেন, ডনাল্ড লুর চিঠি নিয়ে আপাতত ইসির কোনো মাথাব্যথা নেই। তফসিল ঘোষণার ওপর এর কোনো প্রভাবও পড়বে না।
সংলাপের চিঠির বিষয়ে কমিশন অবহিত নয়। কমিশনের কাছে কিছুই আসেনি। কমিশন তার নিজস্ব গতিতে সাংবিধানিক দায়বদ্ধতার আলোকে যেভাবে রোডম্যাপ হয়েছিল, সেভাবে অগ্রসর হচ্ছে।
পুলিশও প্রস্তুত : জাতীয় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের তৎপরতাও সেভাবেই সাজানো হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াতের অবরোধের মধ্যে তফসিল ঘিরে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা।
নির্বাচন কমিশন কার্যালয় ঢাকার শেরেবাংলা নগর এলাকায়। শেরেবাংলা নগর থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া জানান, মঙ্গলবার থেকেই ওই এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন তারা।
ঢাকার প্রায় আড়াই কোটি মানুষের নিরাপত্তার জন্য ৩২ হাজারের কিছু বেশি পুলিশ রয়েছে। হরতাল-অবরোধের দিনগুলোতে গড়ে প্রতিদিন আট হাজার করে পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, সব কিছুই আমাদের বিবেচনায় আছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের হুমকি নেই।
এমটিআই