ঢাকা : বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে রাজনৈতিক দলের বাইরেও সোচ্চার আছেন বিশ্বের অনেক প্রভাশালী দেশ ও সংগঠন। বিশেষ করে বাংলাদেশের পরিস্থিতি কড়া নজরদারিতে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এরই অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ও ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসও বেশ আলোচনায় আছেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে।
শনিবার (১৮ নভেম্বর) রাতে ‘সংলাপও হোক, ভোট হোক’ এমন শিরোনামে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে টকশোর আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেন বিশিষ্ট কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি। সেখানে সমসাময়িক নানা ইস্যু নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন একসময়ে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হওয়া এ সাবেক সংসদ সদস্য।
টকশোর একপর্যায়ে উপস্থাপকের পক্ষ থেকে রনির নিকট জানতে চাওয়া, আপনি বলেছেন ডোনাল্ড লুর চিঠি বিএনপির বিজয়, আ.লীগের জন্য চরম অস্বস্তি, এটি কীভাবে?
জবাবে রনি বলেন, এটি তো ডোনাল্ড লুর চিঠিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের জন্য আর কোনো সময় ছিল না। ঠিক তফশিল ঘোষণার পূর্বে আওয়ামী লীগসহ তিন দলকে সংলাপের জন্য চিঠি দিলেন ডোনাল্ড লু।
একটা কথা মনে রাখতে হবে, ডোনাল্ড লু এশিয়া সাবকন্টেটে অত্যন্ত প্রভাবশালী। বাংলাদেশে তার চিঠি অনাগত দিনে কতটা ক্ষতি হবে এটা কোনো বিষয় না। মূল বিষয় হচ্ছে— পাকিস্তানের ইমরান খানের পতনের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ডোনাল্ড লুকে নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যাপক চর্চা।
আমরা জানি কিন্তু মোটামুটি লু সম্পর্কে জানি। বিশেষ করে ক্ষমতার পটপরিবর্তনে বা পালাপরিবর্তনে যে ধরনের কলকাঠি নাড়তে হয় অথবা যা ম্যাকানিজম করতে ডোনাল্ড লুর সেই দক্ষতা আছে। শুধু তাই নয়, সেটি কিন্তু প্রমাণিত। এমনকি বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন।
পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক মৌলিক বিষয়ে ভিন্নতা থাকলেও এটিও মনে রাখতে হবে ইউরোপে কিন্তু যথেষ্ট প্রভাবশালী ছিলেন ইমরান খান। তার মতো মানুষকে চোখের পলকে ক্ষমতাচ্যুত করেছেন। যিনি পাকিস্তানের রাজনীতির ইতিহাসে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল এবং তাকে কিং বলা হতো।
তিনি আরও বলেন, ইমরান খান নিজেই বলেছেন ডোনাল্ড লুর কারণেই তাকে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছে। সেই ডোনাল্ড লুই যখন বাংলাদেশে এসেছেন এবং তার চিঠি যখন দেশে এসেছে; সঙ্গত কারণে আমাদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে।
সেই ভয়ের অংশ হচ্ছে, যে একেবারেই শেষ পর্যায়ে চিঠি দিয়েছে ডোনাল্ড লু। চাইলে চিঠিটি কিন্তু মাস খানেক আগেও দিতে পারতেন অথবা ১৫ দিন আগেও দিতে পারতেন। তাহলে আওয়ামী লীগ বিকল্প চিন্তা করতে পারত। কিন্তু সে সুযোগ আওয়ামী লীগকে ডোনাল্ড দেইনি।
চিঠি পাওয়ার পর ওবায়দুল কাদের যা বললেন, এতেই প্রমাণিত হলো— বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক প্রকাশ্যে সাংঘর্ষিক হয়ে গেছে।
এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি প্রতিপক্ষ নয়, একেবারেই নয়। এখন প্রথমত আওয়ামী লীগকে তার দলের বিদ্রোহী গ্রুপের সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সরাসরি প্রতিযোগিতা ও মোকাবিলা করে টিকে থাকতে হবে।
সত্যি কথা বলতে, ডোনাল্ড লুর চিঠিতে আওয়ামী লীগকে বিপদের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এতে বিএনপি একটা সেফ এক্সিট পেয়ে গেছে।
এমটিআই