• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ভোটের লড়াইয়ে ৩৮২ স্বতন্ত্র প্রার্থী


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ২০, ২০২৩, ১০:৫৪ এএম
ভোটের লড়াইয়ে ৩৮২ স্বতন্ত্র প্রার্থী

ঢাকা : বিএনপির বর্জনের মধ্যে আগামী ৭ জানুয়ারি যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ৩৮২ জন।

এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী সংখ্যা প্রায় সমান; প্রতীক বরাদ্দে লাঙ্গল পেয়েছেন ২৬৫ জন, আর ক্ষমতাসীনদের ২৬৩ জন পেয়েছেন নৌকা।

এর বাইরে আওয়ামী লীগের প্রতীক ব্যবহার করছেন শরিকদলের ৬ প্রার্থী। আর প্রতীক বরাদ্দের পর আওয়ামী লীগের তিন জন আদালতের নির্দেশে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।

জাতীয় পার্টিরও কয়েকজনের পক্ষে আদালতের আদেশ এসেছে জানিয়ে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমরা ২৮৭ জনকে চূড়ান্ত করেছিলাম। কিন্তু অনেকে একাধিক আসনে ছিল, আবার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় কিছুটা ঝামেলার কারণে রিটার্নিং অফিসারের কাছে পৌঁছাতে বিলম্ব হয়েছে।

এতে বাদ পড়ে গেছে অনেকে। শেষ পর্যন্ত প্রতীকসহ প্রার্থী ২৬৫ জন। কয়েকজনের আদালতের আদেশ পক্ষে এসেছে। পরে যুক্ত হতে পারে।

নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর ২৭টি দলের ১৫১৩ জন ও স্বতন্ত্র ৩৮২ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন। এই ১৮৯৫ জন প্রার্থী প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন।

আদালতের আদেশে আরও কিছু প্রার্থী যুক্ত হতে পারেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থী, ১০-১৫ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী আদালতে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার তথ্য গণমাধ্যমে এসেছে। রিটার্নিং অফিসারের কাছে এ সংক্রান্ত কাগজপত্র পৌঁছালে তারাও যুক্ত হবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সংখ্যায়।

ইসি জানিয়েছে, টিকে যাওয়া ২৭টি দলের প্রার্থীদের বাইরে গণতন্ত্রী পার্টির (কবুতর) তরফে ১২ জন এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (হারিকেন) নামে দুইজনের মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। তবে বাছাইয়ে সেসব আবেদন বাতিল হয়ে যায়।

বাংলাদেশ মুসলিম লীগ মহাসচিব আবুল আলহাজ্ব কাজী আবুল খায়ের বলেন, আমরা মনোনয়নপত্র জমা দিইনি। আমিই মনোনয়নপত্র স্বাক্ষরকারী অনুমোদিত ব্যক্তি। গণমাধ্যমে দুটি মনোনয়নপত্র জমার তথ্য আসার পরই বিষয়টি ইসিকে জানিয়েছি।

আর অনুমোদিত কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের মধ্যে গণতন্ত্রী পার্টির দুই পক্ষের সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। দলটির মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত হিসেবে নিজেদের নামে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আলাদা চিঠি দিয়েছিলেন।

ভোটের লড়াইয়ে ৩৮২ স্বতন্ত্র প্রার্থী : দলটির ‘অনুমোদিত কোনো কমিটি বিদ্যমান না থাকায়’ গণতন্ত্রী পার্টির সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করার কথা জানিয়েছে ইসি।

প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় পার হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর বলেন, ২৭টি দলের প্রার্থী ভোটে অংশ নিয়েছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী ২২৫ আসনে : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় হওয়া ঠেকাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিকল্প (ডামি) প্রার্থী রাখার নির্দেশনা আসার পর স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার হিড়িক পড়ে।

সেই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের তালিকায় দলটির নতুন-পুরনো মুখ যেমন আছে, তেমনই বর্তমান সংসদ সদস্যরাও আছেন, যারা এবার নৌকার টিকেট পাননি। আবার রাজনৈতিক দলের বাইরেও অনেকে মনোনয়নপত্র জমা দেন।

সবমিলিয়ে অন্তত ২৬৫টি সংসদীয় আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেন ৭৪৭ জন। ইসির বাছাই, আপিল ও প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে এখন ৩৮২ জন প্রতীক নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে আছেন ২২৫ আসনে।

যে ৭৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই : পঞ্চগড় ২, ঠাকুরগাঁও ১, রংপুর ৪, কুড়িগ্রাম ১, বগুড়া ৫, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৩, রাজশাহী ২ ও ৩, সিরাজগঞ্জ ১, ২, ৩ ও ৪; পাবনা ২ ও ৫, মাগুরা ২, নড়াইল ২, বাগেরহাট ১, খুলনা ৫, বরগুনা ২, পটুয়াখালী ১ ও ২; ভোলা ১ ও ২; বরিশাল ১, ঝালকাঠি ২, টাঙ্গাইল ৮, জামালপুর ১ ও ৩; ময়মনসিংহ ৫ ও ১০; নেত্রকোণা ৪, কিশোরগঞ্জ ৪, মানিকগঞ্জ ৩, ঢাকা ১, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩ ও ১৫; নারায়ণগঞ্জ ৪ ও ৫;  গোপালগঞ্জ ৩, মাদারীপুর ১ ও ২; শরীয়তপুর ৩, সিলেট ১, ২ ও ৪; মৌলভীবাজার ৩ ও ৪; হবিগঞ্জ ৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৪ ও ৬; কুমিল্লা ১, ৩, ৭, ৯ ও ১০; চাঁদপুর ১, নোয়াখালী ৫ ও ৬; চট্টগ্রাম ৪, ৭, ৯ ও ১৩, কক্সবাজার ২, ৩ ও ৪ এবং খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান পার্বত্য আসনে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই।

দল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে তাকে বিদ্রোহী হিসেবে তকমা দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বহিষ্কারের মত বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার নজির আছে।

তবে এবার দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক দেখাতে চাইছে ক্ষমতাসীনরা। সে কারণে স্বতন্ত্রদের ‘বিদ্রোহী’ তকমা দেওয়া হয়নি যেমন, তেমনই তাদের বিরুদ্ধে দল যে কোনো ব্যবস্থা নেবে না তাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রোববার বলেছেন, দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চাপে রাখতে কোনো কমিটি বিলুপ্ত করা হলে বা কাউকে বহিষ্কার করা হয় তা কার্যকর হবে না।

ঢাকার অর্ধেক আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী : ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১০টিতে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই; বাকিগুলোয় আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টির সঙ্গে লড়বে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পাঁচজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ঢাকা ১৪ আসনে। ঢাকা ১৮ আসনে এ সংখ্যা ৪।  আর ঢাকা ৪, ঢাকা ৫, ঢাকা ১৯, ঢাকা ২০ আসন থেকে দুইজন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন।

একজন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন ঢাকা ২, ঢাকা ৩, ঢাকা ১৬ ও ঢাকা ১৭ আসনে।

এবারের ভোটে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হিড়িক পড়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলীম বলেন, দলগুলোয় আসন ভাগাভাগি নিয়ে এটা সমঝোতার নির্বাচন। সেই সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও তাদের দলের বিকল্প বা বিদ্রোহী প্রার্থী। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোটের কথা বলা হলেও বাস্তবের চিত্র অন্যরকম। ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ায় আগ্রহও কম থাকবে।

প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে স্বতন্ত্ররা কেমন ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন? আব্দুল আলীমের উত্তর, স্বতন্ত্র বা ডামি প্রার্থী রয়েছে অনেক জায়গায়, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে বরং তারা চুপ থাকবে কিংবা আরেকজনকে জেতাতে ছাড় দেবে। আবার কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতে আসবে। কিছু কিছু জায়গায় হয়ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে।

ভোটের লড়াইয়ে ৩৮২ স্বতন্ত্র প্রার্থী : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদের মতে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ‘বঞ্চিতরা’ স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় দলের মধ্যে বিরোধ বাড়বে, অসহিষ্ণুতা দেখা যাবে, দলীয় কোন্দল হবে- যা দলের জন্য ‘ভীষণ ক্ষতির’ কারণ হবে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম মনে করেন, বেশি বেশি ‘দলীয় স্বতন্ত্র’ প্রার্থী ভোটে বিশৃঙ্খলার কারণ হতে পারে।

প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্যে প্রার্থী বাড়লেও গোলযোগ-সংঘাত হলে ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসাটাই চ্যালেঞ্জ হবে। সেক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেখলেও ভোটের মাঠে কেমন পরিস্থিতি হয়, তা ভবিষ্যত বলবে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও আন্তরিক না থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।

মঙ্গলবার দুপুরে রংপুরের ছয় সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে তিনি বলেন, “এটা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর যারা প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন, তারা যদি আন্তরিক না হন, সচেতন না হন, তারা যদি তাদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা সংরক্ষণ করে সঠিক আচরণ না করেন- তাহলে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করাটা দুরূহ হয়ে পড়বে।”

২০১৮ সালের ভোটে যত প্রার্থী ছিল : একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ তখন পর্যন্ত নিবন্ধিত ৩৯টি দলই ভোটে ছিল।

এলডিপির প্রার্থী ছিল ৮ জন (ধানের শীষ ৪), জেপির ১১ জন (মহাজোট ২), সাম্যবাদী দলের ২ জন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ৮ জন (ধানের শীষ ৪), সিপিবির ৭৪ জন, আওয়ামী লীগের ২৬০ জন (নৌকা ২৭২), বিএনপির ২৫৭ জন (ধানের শীষ ২৮২), গণতন্ত্রী পার্টির ৬ জন, ন্যাপের ৯ জন, জাতীয় পার্টির ১৭৫ জন (মহাজোট ২৫), বিকল্পধারার ২৬ জন (নৌকা ৩), ওয়ার্কার্স পার্টির ৮ জন (নৌকা ৫), জাসদের ১১ জন (নৌকা ৩), জেএসডির ১৯ জন (ধানের শীষ ৪), জাকের পার্টির ৯০ জন, বাসদের ৪৪ জন, বিজেপির ৩ জন (ধানের শীষ ১), তরীকত ফেডারেশনের ১৭ জন (নৌকা ১), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের ২৪ জন, বাংলাদেশ মুসলীম লীগের ৪৮, এনপিপির ৭৯ জন, জমিয়াতে উলামায়ে ইসলামের ৮ জন (ধানের শীষ ৩), গণফোরামের ২৮ জন (ধানের শীষ ৭), গণফ্রন্টের ১৩ জন, পিডিপির ১৪ জন, বাংলাদেশ ন্যাপের ৩ জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির ১১ জন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের ১৮ জন, কল্যাণ পার্টির ২ জন (ধানের শীষ ১), ইসলামী ঐক্যজোটের ২৫ জন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ৫ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ২৯৮ জন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ২৫ জন, জাগপার ৪ জন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ২৮ জন, খেলাফত মজলিসের ১২ জন (ধানের শীষ ২), বিএমএলের একজন, মুক্তিজোটের ২ জন, বিএনএফের ৫৭ জন।

আর স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিল ১২৮ জন।

বিএনপির ভোট বর্জনের মধ্যে ২০১৪ সারের ৫ জানুয়ারির ভোটে ১২টি দল অংশ নিয়েছিল। সেবার মনোনয়ন জমার সময় ২০টি দল ভোটে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও নির্বাচনে থাকে ১২ দল।

আগের স্বতন্ত্রদের খতিয়ান : ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ হাজার ৮৯ প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র ছিলেন ১২০ জন। তারা ভোট পেয়েছিলেন ৫ দশমিক ২ শতাংশ। ভোটে অংশ নিয়েছিল ১৪টি দল।

১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় নির্বাচনে ২ হাজার ১২৩ জন প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র ছিলেন ৪২২ জন। তারা পেয়েছিলেন মোট ভোটের ১০ দশমিক ১০ শতাংশ। ভোটে অংশ নিয়েছিল ২৯টি দল।

১৯৮৬ সালে বিএনপির বর্জনের মধ্যে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ হাজার ১২৪ জন প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র ছিলেন ৪৫৩ জন। তবে সেই নির্বাচনে তারা খুব একটা ভোট টানতে পারেননি, প্রদত্ত ভোটের ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ পায় তারা। সেবার ২৮টি দল ভোটে অংশ নিয়েছিল।

১৯৮৮ সালে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের বর্জনের মধ্যে চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি ভোট পান। সেই নির্বাচনে মোট প্রার্থী ছিলেন ৯১৯ জন, যার মধ্যে স্বতন্ত্র ছিলেন ২১২ জন। তারা পান প্রদত্ত ভোটের ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। ভোটে অংশ নিয়েছিল ৮টি দল।

১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ২ হাজার ৭৮৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে স্বতন্ত্র ছিলেন ৪২৪ জন, তারা ভোট পান ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ভোটে অংশ নিয়েছিল ২৭৮৭টি দল।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের বর্জনের মধ্যে ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ১ হাজার ৪৫০ জন। সেই নির্বাচনের অনেক তথ্যই পাওয় যায় না। তবে স্বতন্ত্র পরিচয়ে প্রার্থীদের ১০টি আসনে জয়ে তথ্য আছে। সেবার ৪২টি দল ভোটে অংশ নিয়েছিল।

১৯৯৬ সালের জুনের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনে ২ হাজার ৫৭৪ জন প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র ছিলেন ২৮৪ জন। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সেই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে ভোট পড়ে ১ দশমিক ০৬ শতাংশ। ভোটে অংশ নিয়েছিল ২৯টি দল। ভোটে অংশ নিয়েছিল ৮১টি দল।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ভোট- দুটোই আবার বাড়ে। সেই বছর ১ হাজার ৯৩৮ জন প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র ছিল ৪৮৬ জন, তারা পান প্রদত্ত ভোটের ৪ দশমিক ০৬ শতাংশ। ভোটে অংশ নিয়েছিল ৫৫টি দল।

২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থিতায় কড়াকড়ি করে তৎকালীন ইসি। এসময় স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে ভোটারদের আগাম সমর্থনের প্রমাণ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ হয়। এতে কমে আসে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা। এ নির্বাচনে ১ হাজার ৫৬৭ প্রার্থীর মধ্যে ১৫১ জন ছিলেন স্বতন্ত্র, যারা পান প্রদত্ত ভোটের ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ, আসন পায় ৪টি। ভোটে অংশ নিয়েছিল ২৮টি দল।

আনুপাতিক হারে স্বতন্ত্র সবচেয়ে বেশি ছিল বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে।

সেই নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে একজন প্রার্থী ছিল বলে তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বাকি ১৪৭ আসনে প্রার্থী ছিলেন ৩৯০ জন, এর মধ্যে স্বতন্ত্র ছিলেন ১০৪ জন।

এ নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের ১৫ দশমিক ০৬ শতাংশই পান এই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তারা আসন জেতেন ১৬টি। তাদের সবাই ভোটে দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে। সেবার ১২টি দল ভোটে অংশ নিয়েছিল।

২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে চূড়ান্তভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ১২৮ জন। মোট প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ১ হাজার ৮৬১ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পান ৩ আসনে। তবে তাদেরও দলীয় পরিচয় ছিল। ভোটে অংশ নিয়েছিল ৩৯টি দল।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!