ঢাকা : বিএনপিসহ বিরোধীদের বর্জন ও প্রতিরোধের চেষ্টার কারণে শান্তিপূর্ণ ভোট আয়োজনে ‘সংকট’ থাকলেও তা মোকাবেলা করে সফলভাবে নির্বাচন আয়োজন করতে পারবেন বলে মনে করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
ভোটের আগের দিন শনিবার (৬ জানুয়ারি) নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ‘আপেক্ষিক’ বলেও বর্ণনা করেছেন তিনি।
সিইসি বলেন, এটা অনস্বীকার্য্য যে, নির্বাচনের যেহেতু একটা বিরোধিতা রয়েছে, কোনো একটি পক্ষ তারা নির্বাচন বর্জন করছেন এবং প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে বর্জনের কার্যত প্রতিহত করার চেষ্টা করছেন। সেদিক থেকে নির্বাচনটাকে শান্তিপূর্ণভাবে উঠিয়ে আনার ক্ষেত্রে কিছুটা সঙ্কট দেখা দিতে পারে। এই বাস্তবতাটা আমরা অস্বীকার করছি না।
তবে, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা যে সমস্ত প্রস্তুতি নিয়েছি, আমরা সেগুলোকে মোকাবেলা করে আশা রাখি প্রতিরোধ থাকা সত্ত্বেও, বিরোধিতা থাকা স্বত্ত্বেও জনগণের অংশগ্রহণে ও ভোটরদের আগমনে উঠে আসবে।
বিএনপিসহ বিরোধীদের ভোটে না আনতে পারা এবং ইভিএম ও সিসিটিভি চেয়েও না পাওয়ার ব্যর্থতার মধ্যে কমিশন নির্বাচনকে কতটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে, সেই প্রশ্ন সিইসিকে করা হয়।
উত্তরে তিনি বলেন, ভবিতব্য বলতে পারবে কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। সর্বাত্মক চেষ্টা হচ্ছে এবং নির্বাচনের জন্য যে বিষয়গুলো আয়োজন করতে হয়, সেটা আয়োজন করা হয়েছে।
ভোটারদের অংশগ্রহণ ও বিশ্বাসযোগ্যতা মূল্যায়নের জন্য ফলাফল ঘোষণার শেষ পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে বলেন হাবিবুল আউয়াল।
নির্বাচনটা ‘সিলেকশনে’ পরিণত হয়েছে বলে উঠে আসা বক্তব্যের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, শুধু সিলেকশন নয়, অনেকে আরও অসংখ্য অভিধায় অভিষিক্ত করে অনেকে বক্তব্য দিচ্ছেন। যারা বক্তব্যগুলো দিচ্ছেন, তারা তাদের নিজস্ব বোধগম্যতা থেকে, নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই বিশেষণগুলো প্রয়োগ করছেন।
রাজনৈতিক কোনো বিতর্কে জড়িত বা সম্পৃক্ত না হয়ে আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন নিজের দায়িত্ব পালন করছে মন্তব্য করে সিইসি বলেন, আমরা আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট করে জানিয়েছি যে, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচনটা আয়োজন করা, রাজনৈতিক কোনো বিতর্কে জড়িত হওয়া বা সম্পৃক্ত হওয়া আমাদের কাজ নয়। আমরা হচ্ছিও না।
আমরা নির্বাচনটাকে নির্বাচনের মত করে আয়োজন করতে যাচ্ছি। কাজেই যে বিতর্ক বলা বলছেন, সেই বিতর্কটা রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে থাকবে। এর হয়ত সুরাহা রাজনীতিবিদরা একসময় করবেন। আমাদেরকে অনুগ্রহ করে সহযোগিতা করবেন নির্বাচনটা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আয়োজন করতে।
নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে কি না, সেই প্রশ্নে সিইসি বলেন, কেউ বলবেন, চমৎকার গ্রহণযোগ্য, কেউ বলবেন, একেবারে গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু আমরা চেষ্টা করব, আমরা আমাদের লক্ষ্য থেকে চেষ্টা করব, নির্বাচনটাকে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য করে তুলতে।
সেজন্য আজকে এখানে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা এসেছেন, মিডিয়ার প্রতিনিধিরা আসছেন। দৃশ্যমানতার মধ্য দিয়ে স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা তারা করবেন, যাতে জনগণ নির্বাচন প্রক্রিয়াটা স্বচ্ছতাটা দেখতে পান। এর মধ্য দিয়ে আমরা বিশ্বাস বিশ্বাসযোগ্যতা ফুটে উঠবে। আমরা আশাবাদী এটা দেশে এবং বিদেশে বিশ্বাসযোগ্য হবে।
এক সাংবাদিক সিইসির কাছে জানতে চান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানতে চেয়েছে এই নির্বাচনের পর বিরোধী দল কে হবে? এমন পরিস্থিতিতে কমিশন বিব্রত কি-না?
উত্তরে হাবিবুল আউয়াল বলেন, উরোপীয় ইউনিয়ন বা কেউ হয়ত প্রশ্ন করেছিল, আমাদের আসন্ন নির্বাচনে বিরোধীদল কে হবে? এই প্রশ্নে আমার সরাসরি উত্তর হচ্ছে, এটা মোটেই আমাদের জন্য বিবেচ্য বিষয় নয়। এটা রাজনৈতিক ইস্যু। সংসদ কীভাবে গঠিত হবে, সংসদের ট্রেজারি বেঞ্চ কে হবে, বিরোধীদল কে হবে…।
সেখানে নির্বাচন কমিশনের কিছু বলার এখতিয়ার নাই। আমরাও সেটাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না যে, সংসদ কীভাবে গঠিত হবে। নির্বাচন হলে তারাই সংসদে সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা এজন্য মোটেই বিব্রত নই।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন হচ্ছে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা বডি। আমি বলতে চাই, আমরা বিশ্বাস করি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক এবং স্বচ্ছ নির্বাচন। স্থানীয়ভাবেই কেবল নয়, আমরা আন্তর্জাতিকভাবে পর্যবেক্ষণ হোক সেটা চাই।
মার্কিন ভিসানীতির কথা তুলে ধরে জাপানি এক সাংবাদিকের প্রশ্নে হাবিবুল আউয়াল বলেন, এটা কমিশনের দায়িত্ব নয়, কে অংশ নেবে। কমিশন সবাইকে আহ্বান জানাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য। নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য।
তারা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) অবাধ, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বিশ্বাস করে। যারা এক্ষেত্রে বাধা তাদের ওপর এই নীতি প্রয়োগ করবেন। আমরা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করছি না। আমরা জানি না কারা আগুন দিচ্ছে, মানুষকে হত্যা করছে। আমরা আমাদের জায়গায় থেকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের চেষ্টা করছি।
‘বিএনপির কথাই বিশ্বাস করেছিলাম’
ভোট বর্জনের আহ্বানে শান্তিপূর্ণ উপায়ে কর্মসূচি পালনের যে দাবি বিএনপি নেতারা করে আসছেন, তাতে বিশ্বাস রাখলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন না পাওয়ার কথা বলেছেন সিইসি হাবিবুল আউয়াল।
চলন্ত ট্রেন ও ভোটকেন্দ্রে আগুন দেওয়ার ঘটনা তুলে ধরে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, কে আগুন লাগিয়েছে আমি জানি না, কারা করছে জানি না। কেউ কেউ অনুমান করতে পারে বা অনুমানের পক্ষে কিছু যুক্তি থাকতে পারে।
দেশের হরতাল চলছে, দেশে অবরোধ চলছে, এর মধ্যেও যখন ওই ঘটনাগুলো ঘটছে, অনেকে কাকতালীয়ভাবে ওর সাথে ওকে সম্পৃক্ত করতে পারেন। সেটি সত্য হতে পারে, সত্য নাও হতে পারে।
তিনি বলেন, সংকটটার কথা আগেও বলেছি, একটি বড় রাজনৈতিক দল তারা নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। পরিশেষে তারা একটি প্রতিশ্রুতি জাতিকে দিয়েছে যে, তারা শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রচার করবে। অর্থাৎ কোনো সহিংস পন্থায় নির্বাচনকে প্রতিহত করবে না।
সেটা আমরা বিশ্বাস করেছিলাম। একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল তাদের শীর্ষ পর্যায় থেকে যখন এ ধরনের ঘোষণা দিয়ে থাকে, সেটাকে বিশ্বাস করাই উচিত।
আমরা মনে করেছি যে, কোনো সংকট হবে না। নির্বাচন কেন্দ্রে যেতে মানুষকে নিরুৎসাহিত করা হবে। কিন্তু নির্বাচন কেন্দ্রে যেতে মানুষকে বাধাগ্রস্ত করা হবে, বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হবে, এমনটি হয়ত হবে না।
সিইসি বলেন, এটি এমনও হতে পারে, আগুন দেওয়ার মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হতে পারে। কিন্তু এটি নিঃসন্দেহে অপরাধ। যে কোনো অগ্নিকাণ্ড বড় ধরনের অপরাধ।
এমটিআই