ঢাকা: জনগণকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনতে গত বছরের ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করে সরকার। শুরুতে সর্বজনীন পেনশনে যে হারে মানুষের সাড়া পাওয়া গিয়েছিল, পরবর্তীসময়ে সেই হার কিছুটা কমেছে। প্রথম মাসেই যেখানে ১২ হাজারের বেশি মানুষ নিবন্ধন সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধ করে, ৬ মাস পর সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজারের নিচে। এমন পরিস্থিতিতে ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে নিবন্ধন ও প্রচারণা চালাতে মাঠ প্রশাসনে চিঠি পাঠিয়েছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষে সংযুক্ত অর্থ বিভাগের উপসচিব মাহমুদুল হক বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের এই চিঠি পাঠান।
চিঠিতে বলা হয়, পেনশন কার্যক্রমকে সফল করতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা এবং নিবন্ধন ও মাসিক কিস্তি জমা প্রদানে জনগণকে সহযোগীতা করা প্রয়োজন। যাতে করে তারা সরকারের এ মহৎ উদ্যেগ সম্পর্কে জানতে পারে এবং সহজে অংশগ্রহণ করতে পারে। এ কার্যক্রমে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার সমূহকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে জনগণ সহজেই সেবাটি গ্রহণ করে তাদের ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।
এ লক্ষ্যে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার সমূহকে জনগণকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণে উদ্ধুদ্ধ করণে নিন্মোক্ত কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারে। এগুলো হলো, সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত ব্যানার, ফেস্টুন ও অন্যান্য প্রচারণ উপকরণ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে প্রদর্শন ও বিতরণ, জনসাধারণকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম সম্পর্কে অবহিতকরণ, পেনশন স্কিমে নিবন্ধন সেবা প্রদান ও ক্ষেত্র বিশেষে অনলাইনে অর্থ পরিশোধে সহায়তাকরণ এবং জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সময় সময় প্রদত্ত নির্দেশনা বাস্তবায়ন।
খোজ নিয়ে জানাগেছে, গত গত জানুয়ারি পর্যন্ত চার স্কিমের মধ্যে প্রগতিতে ৭ হাজার ৬৮২ জন ১৪ কোটি ৪৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা, সুরক্ষায় ৭ হাজার ৭৬৮ জন ৯ কোটি ৪৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, প্রবাসে ৫১৭ জন ২ কোটি ১৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং সমতায় ২ হাজার ৭৭৭ জন ৮৮ লাখ ৮৪ হাজার টাকা চাঁদা জমা দিয়েছেন। চার স্কিম মিলে ১৮ হাজার ৭৪৩ জন প্রায় ২৭ কোটি ২ লাখ টাকা জমা দিয়েছে।
সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির উদ্বোধনের দিনই প্রথম কিস্তির টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছিল ১ হাজার ৭০০ জন। আর প্রথম মাসে টাকা জমাদানকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল প্রায় ১৩ হাজার। তবে পরের মাসেই তা কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৮৩১ জনে। চাঁদা দিয়ে পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আসতে পারেন ১৮ বছরের বেশি বয়সী যে কেউ। দেশের অন্তত ১০ কোটি মানুষ এ পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আসবেন– এমন প্রত্যাশা সরকারের রয়েছে। দেশের বিপুল সংখ্যক নাগরিক পেনশন কর্মসূচিতে যোগ দেবে– সরকারের এমন প্রত্যাশা থাকলেও প্রথম ৬ মাসে মানুষের সাড়া খুব একটা আশানুরূপ নয়।
সবার জন্য চালু করা পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে ইউপেনশন ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা পাসপোর্ট নম্বর, একটি সচল মুঠোফোন নম্বর, ব্যাংক হিসাব নম্বর, নমিনির এনআইডি ইত্যাদি তথ্য লাগে। চাঁদা দিয়ে পেনশন-ব্যবস্থার আওতায় আসতে পারেন ১৮ বছরের বেশি বয়সী যে কেউ। দেশের অন্তত ১০ কোটি মানুষ পেনশনব্যবস্থার আওতায় আসবেন, এমন প্রত্যাশা সরকারের রয়েছে। বিশাল একটি জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তাকাঠামোর আওতায় আনা এবং নিম্ন আয় ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত সমাজের ৮৫ শতাংশ মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই পেনশন স্কিম চালু করা হয় বলে কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই বলে আসছে।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, শুরুর দিকে শুধু সোনালী ব্যাংক ছিল পেনশন স্কিমে নিবন্ধনের সহায়তাকারী। পরে অগ্রণী ব্যাংককেও এ তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে দি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) হয়েছে। এদিকে সংরক্ষিত এলাকা সচিবালয় থেকে বেরিয়ে পেনশন কর্তৃপক্ষ নতুন অফিস নিয়েছে রাজধানীর কাকরাইলে।
এমএস
আপনার মতামত লিখুন :