ঢাকা : আগামী দু-একদিনের মধ্যেই বাড়ছে মন্ত্রিসভার আকার। শনিবারের (২ মার্চ) মধ্যেই বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে সূত্রে জানা গেছে। তবে কতজন নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রিসভায় স্থান পাচ্ছেন সেটি এখনো জানা যায়নি।
এদিকে নতুন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদের দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়ে প্রাথমিক প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ১১ জানুয়ারি শপথ নেয় নতুন মন্ত্রিসভা। এতে অভিজ্ঞ ও নতুন মুখ নিয়ে ৩৭ জন সদস্য জায়গা পান। মন্ত্রিসভার আকার আরও বাড়ার বিষয়ে শুরু থেকেই আলোচনায় রয়েছে। শোনা যাচ্ছিল, সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যদের নির্বাচিত হওয়ার পর মন্ত্রিসভার সদস্য বাড়বে।
এরই মধ্যে সংরক্ষিত আসনে ৫০ জন নারী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যরা শপথ নেন। শপথ নেওয়ার দিনই মন্ত্রিসভার নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নিয়োগের আলোচনা জোরালো হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান মন্ত্রিসভার দুয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রীর দপ্তর পরিবর্তন হতে পারে। এছাড়া সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যদের মধ্যে থেকেও তিন-চারজন আসতে পারেন।
জানা গেছে, সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত একজনকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। ওই নারী সদস্য এবার দ্বিতীয় দফায় সংরক্ষিত আসনে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়েও একজন প্রতিমন্ত্রী দেওয়া হতে পারে। এর আগের মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট কোটায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ছিলেন শামসুল আলম। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়েও একজন প্রতিমন্ত্রী কিংবা উপমন্ত্রী দেওয়া হতে পারে। এছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একজন প্রতিমন্ত্রী কিংবা উপমন্ত্রী দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও একজন প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর পাশাপাশি একজন পূর্ণ মন্ত্রী দেওয়া হয়েছে বরাবরই।
এখন পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক একাই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। এই মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রী কিংবা বিভাগ ভাগ করে আরেকজন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগের বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বিকালে সচিবালয়ে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শপথ কবে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমার কাছে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য নেই।
শোনা যাচ্ছে কাল বা শনিবার হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আপনারা কি শুনেছেন সেটা তো আমি বলতে পারবো না। আমার কাছে কোনো খবর নেই।
আগামীকাল কি আপনি অফিস করবেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, দেখন আমি এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। জেলা প্রশাসক সম্মেলন নিয়ে প্রস্তুতির বিষয় রয়েছে। আমার আসতে হতেও পারে। আজকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিল। আমি যেতে পারিনি। কাল হয়ত যেতে পারি। সেখানে কোনো অবজারভেশনে থাকলে তাহলে তাদের সঙ্গে আমি বসতেও পারি। তবে এটা আমি শিউর না।
এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের জানাবেন কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখন পর্যন্ত আমার কাছে তথ্য নেই, আমি জানি না। আমি জানার পর আপনাদের জানাতে আমার কোনো বাধা নেই।
রাষ্ট্রপতি শনিবার বিদেশে যাচ্ছেন তার আগে কি শপথ হচ্ছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখনও জানি না। তাহলে আপনাদের কি জানাব! আমি জানলে পরেই তো আপনাদের জানাতে পারব।
উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। বিএনপিবিহীন এ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায় আওয়ামী লীগ। ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২৩টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১টি আসন। বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে জয় পেয়েছে। এর বাইরে সংসদে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ৬২ জন।
এরপরে ১০ জানুয়ারি শপথ নেন নতুন নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। শপথ শেষে অনুষ্ঠিত সংসদীয় দলের সভায় শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচিত করা হয়। ওইদিনই সন্ধ্যার পর বঙ্গভবনে যান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের সিদ্ধান্ত দেন। একই সঙ্গে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনে সম্মতি দেন রাষ্ট্রপতি। এরপর ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেন।
গত ১১ জানুয়ারি গঠিত হয় নতুন মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রীসহ নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য ৩৭ জন। নতুন মন্ত্রিসভায় ২৫ জন মন্ত্রী এবং ১১ জন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। কোনো উপমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। যদিও আগের মন্ত্রিসভায় তিনজন উপমন্ত্রী ছিলেন।
এমএস