ঢাকা : বাংলাদেশি ২৩ নাবিকসহ পণ্যবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর কেটে গেছে দুই সপ্তাহ, এরই মধ্যে জাহাজের মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে দস্যুরা, নাবিকদের কথা বলতে দিচ্ছে পরিবারের সঙ্গেও।
জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, এখনো মুক্তিপণ না চাইলেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জলদুস্যদের সঙ্গে আলাপের ‘অগ্রগতি হচ্ছে’। ১৩ বছর আগে একই কোম্পানির জাহাজ এমভি জাহান মনিকে যেভাবে দস্যুদের কবল থেকে মুক্ত করা হয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই তারা এগোচ্ছেন।
নাবিকদের স্বজনরাও বলছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের দ্রুত অক্ষত অবস্থায় ফেরানোর ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছে মালিকপক্ষ। তবে কবে নাগাদ সেটা সম্ভব হবে, তা বলা কঠিন।
জাহাজের মালিক কোম্পানি এস আর শিপিংয়ের মূল প্রতিষ্ঠান কবির গ্রুপ যেহেতু আগেও এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিল, সেটি কাজে লাগিয়েই এবারের উদ্ধার কার্যক্রম সহজ হবে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মেরিনাররা।
জিম্মি জাহাজটি এখন সোমালিয়ার পান্টল্যান্ড প্রদেশের নুগাল অঞ্চলের জিফল উপকূলের দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙ্গর করে আছে। অদূরেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্সের (ইইউএনএভিএফওআর) আটলান্টা অপারেশনের একটি যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েন করা আছে। পান্টল্যান্ড পুলিশ ও ইইউ নেভির জাহাজের পাহারায় দস্যুরা চাপে থাকায় জাহাজসহ নাবিকদের মুক্তি ত্বরান্বিত হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে কবির গ্রুপের মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা মিজানুল ইসলাম বলেন, জলদস্যুদের সঙ্গে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে নাবিকদের অক্ষতভাবে ফিরিয়ে আনার জন্য।
কবির গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ভায়া হয়ে (তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে) দস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগের পর দফায় দফায় আলোচনা চলেছে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের আলাপে অগ্রগতিও আছে। জাহান মনি মুক্তির অভিজ্ঞতার আলোকে বিভিন্ন কাজ এগিয়ে রাখা আছে।
নাগাদ মুক্তি নাবিকদের মিলতে পারে- এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে মিজানুল ইসলাম বলেন, মালিকপক্ষ জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারে সকল প্রকার চেষ্টা অব্যাহত আছে।
১৩ বছর আগে একই মালিকের জাহাজ এমভি জাহান মনি সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। জিম্মি হন ২৫ নাবিকসহ ২৬জন। সেবার মুক্তিপণ নিয়ে দর কষাকষি ও জলদস্যুদের সঙ্গে ‘সমঝোতা’ শেষে অর্থের বিনিময়েই তাদের মুক্ত করা হয়, সেজন্য সময় লাগে ১০০ দিন।
সেই অভিজ্ঞতার আলোকে দ্রুততম সময়ে আবদুল্লাহর নাবিকদের মুক্ত করার আশা দেখছেন মালিকপক্ষ। বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক সংস্থা এবং বীমা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপও এগিয়েও রেখেছেন তারা।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সভাপতি, অভিজ্ঞ মেরিনার ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, দস্যুরা ইতোমধ্যে যোগাযোগ করেছে। আবদুল্লাহর মালিকের অতীতে জাহান মনিকে মুক্ত করার অভিজ্ঞতা আছে। সে আলোকে এবারে জিম্মি মুক্তির বিষয়টি অনেক সহজ হবে।
তিনি বলেন, যেসময় জাহান মনি জিম্মি হয়েছিল তখন জলদস্যুদের পরিস্থিতি ছিল একরকম, এখন ভিন্ন। ২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে তাদের কব্জায় ছিল ৩৫৮টি জাহাজ। তখন তারা অনেক বিজি ছিল। সে কারণে জিম্মি উদ্ধারে মুক্তিপণ নিয়ে নেগোসিয়েশন হতে অনেক সময় লেগেছিল।
এখন দস্যুরা নানামুখী ‘চাপে রয়েছে’ জানিয়ে আনাম চৌধুরী বলেন, তারা যা পাবে তাই তাদের লাভ। তাদের হাতে এখন ছোট-বড় মিলিয়ে তিন-চারটি জাহাজ রয়েছে। তবে বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষ করেই নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে আবদুল্লাহর মুক্তি মিলবে।
সেটি কবে নাগাদ হতে পারে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টা একদিনে শেষ হবার নয়। এর জন্য সময় লাগবে। মুক্তিপণ নিয়ে ফয়সালা হবার পর সুরাহা হবে। এখনো পর্যন্ত মুক্তিপণের টাকা চেয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। তবে জাহান মনি মুক্তির ক্ষেত্রে যে সময় লেগেছিল, তার চেয়ে কম সময়ে মুক্তি মিলতে পারে।
জিম্মি নাবিকদের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে মালিকপক্ষ। শনিবার নাবিকদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ইফতার আয়োজন করেন কবির গ্রুপের কর্মকর্তারা। নাবিকদের দ্রুত ফেরাতে স্বজনদের আশ্বস্ত করেন তারা।
এমভি আব্দুল্লাহর চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খানের ছোট ভাই আসিফ খান বলেন, “তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে। আমার ভাইসহ অন্য নাবিকদের দ্রুত সুস্থভাবে ফিরিয়ে আনাটাই আমাদের প্রত্যাশা।
মালিকপক্ষ আমাদের আশা দিয়েছে। দস্যুদের তরফ থেকে রেসপন্সের ভিত্তিতে কাজ এগোবে। সকলেই প্রত্যাশা করে রোজার ঈদের আগে তাদের স্বজন ফিরবে। কিন্তু এর জন্য সময় লাগতে পারে এবং ধৈর্য্য ধরতে হবে। আমরা দ্রুত সমাধানের আশায় আছি।
এমটিআই