• ঢাকা
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

জিম্মি এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে হঠাৎ অস্ত্রের মহড়া কেন?


চট্টগ্রাম প্রতিনিধি এপ্রিল ১১, ২০২৪, ১০:০২ পিএম
জিম্মি এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে হঠাৎ অস্ত্রের মহড়া কেন?

চট্টগ্রাম : সোমালিয়ান জলদস্যুদের সঙ্গে জাহাজ মালিক কর্তৃপক্ষের দর কষাকষি শেষ। জিম্মি নাবিকদের মুক্তির বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। নাবিকদের দিনে কেবিনে থাকতেও দেয়া হচ্ছে। নাবিকদের সাথে দস্যুদের ভালো বোঝাপড়াও রয়েছে। ঈদের নামাজ আদায়ের সুযোগ দেয়ার পাশাপাশি ও বিরিয়ানি-সেমাই খাওয়ার সুযোগ দিয়ে ভালো সম্পর্কের প্রমাণও দিয়েছে। কিন্তু তারপরও জাহাজে অস্ত্রের মহড়া কেন? ভারী এসব অস্ত্রের মহড়ায় পুরো জাহাজ কেঁপে উঠছে। এতে স্বজনদের মধ্যে নতুন করে শঙ্কার জন্ম দিয়েছে।

অস্ত্রের মহড়ার শঙ্কার কথা স্বীকার করে জিম্মি নাবিক আইনুল হকের মা লুৎফে আরা বেগম আজ বৃহস্পতিবার ঈদের দিন সকালে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ভারী অস্ত্রের মহড়ায় পুরো জাহাজ কেঁপে উঠে। দস্যুরা যদিও জিম্মিদের সাথে ভালো ব্যবহার করছে। কিন্তু এভাবে অস্ত্রের মহড়ায় না জানি কোনো অঘটন ঘটে।

তিনি বলেন, প্রায়ই এমন অস্ত্রের মহড়া চালায় দস্যুরা। হয়তো দ্রুত মুক্তিপণের টাকা দেয়ার জন্য ভয় ভীতি দেখাতে এমন মহড়া চালাতে পারে।

একই শঙ্কার কথা জানান জিম্মি নাবিক নুরুদ্দিনের মা ইসলাম খাতুন। তিনি বলেন,‘ শুনতেছিলাম ঈদের আগে তাদের মুক্তি দেয়া হবে। কিন্তু ছেলে মুক্তির বিষয়ে এখন আর কিছু বলছে না। তবে অস্ত্রের গুলাগুলিতে ভয় লাগছে। ছেলে না আসা পর্যন্ত তাই স্বস্তি পাচ্ছি না।’

এর আগে নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ বলেছিলেন, দস্যুদের সাথে দর কষাকষি প্রায় শেষ পর্যায়ে। ঈদের আগে যেহেতু মুক্তিপণের টাকা (ডলার) পৌছে দেয়ার পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়নি তাই ঈদের পর এ বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যাবে। একই সাথে কোন প্রক্রিয়ায় ডলার বুঝে নেবে, নাবিকরা কীভাবে ফেরত আসবে আবার জাহাজও কীভাবে মুক্তি পাবে এসব বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার বাকি রয়েছে।

কিন্তু তারপরও অস্ত্রের মহড়া কেন? সোমালিয়ান জলদস্যুরা যখন জাহাজটি উপকূলের কাছাকাছি নিয়ে যায় তখন ভারতীয় নৌবাহিনী অপারেশন চালাতে চেয়েছিল, একই সময়ে অনুমতি চেয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের রয়েল নেভিও। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার ও জাহাজ মালিক কোম্পানি কেএসআরএম অনুমতি না দেয়ায় উদ্ধার অভিযান চালানো যায়নি। জাহাজ মালিক কোম্পানি চেয়েছিল রক্তপাতহীন উদ্ধার অভিযান। আর এতে মুক্তিপণ দিয়ে সমঝোতা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ ছিল না।

এর আগে একই কোম্পানির জাহাজ এমভি জাহান মনি ২০১০ সালে জিম্মি হলে সেবারও মুক্তিপণ দিয়ে ২৫ নাবিক ও জাহাজের ক্যাপ্টেনের স্ত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছিল। এবারো জাহাজটি মুক্তিপণ দিয়েই মুক্তি করে নিয়ে আসবে। তবে জাহাজের সাথে জড়িত মেরিটাইম সেক্টরের একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, এসব মহড়া হলো মুক্তিপণের টাকা দ্রুত পৌঁছে দেয়ার জন্য। এছাড়া এই মহড়ার মাধ্যমে জাহাজের নাবিকরা কিছুটা ভয় পাবে এবং তা স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেয়ার কৌশল।

এর আগে জাহাজ মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরআমের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেছিলেন, জাহাজ জিম্মি করে টাকা আদায় করা দস্যুদের পেশা। কৌশল হিসেবে তারা কখনো ভালো ব্যবহার করে থাকে আবার কখনো ভয়—ভীতিও দেখাবে।

উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে প্রায় ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগর থেকে এমভি আবদুল্লাহর সেকেন্ড অফিসার মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রথম অস্ত্র ঠেকিয়েছিল সোমালিয়ান জলদস্যুরা। সেদিন দুপুর ৩টা ১২ মিনিটে অস্ত্র ঠেকানোর পর জাহাজের ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশিদ সিটাডেলে আশ্রয় নেওয়া সব নাবিকদের ব্রিজে আসার নির্দেশনা দেন। সেকেন্ড অফিসার ও ডিউটি ইঞ্জিনিয়ার সিটাডেলে আশ্রয় নেয়নি। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে দুবাই যাচ্ছিল। জাহাজটি ছিনতাইয়ের পর সোমালিয়ার উত্তর—পূর্ব উপকূলের গ্যরাকাদে নোঙ্গর করে। এখনো একই এলাকায় অবস্থান করছে। জাহাজ থেকে নাবিকদের উদ্ধারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ব্রিটিশ রয়েল নেভি এবং ভারতীয় নৌ বাহিনী অভিযান চালানোর অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেও জাহাজ মালিক ও বাংলাদেশ সরকার অভিযানের অনুমোদন দেয়নি। রক্তপাতহীন জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতেই মালিক পক্ষের কাছ থেকে অভিযানের অনুমোদন দেয়া হয়নি। এখনো আন্তর্জাতিক বাহিনী এমভি আবদুল্লাহকে নজরদারিতে রেখেচে।

২০১০ সালে একই মালিক গ্রুপের এমভি জাহান মনিকে জিম্মি করেছিল একই গ্রুপের জলদস্যুরা। সেবারও মুক্তিপণ দিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়। সোমালিয়ান জলদস্যুরা ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৮টি জাহাজ জিম্মি করেছিল। এর আগে ২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে জিম্মি করেছিল ৩৫৮টি জাহাজ।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!