ঢাকা : উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে করার জন্য 'সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে' জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ভোটে প্রভাব বিস্তার রোধে 'সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে'।
তিনি বলেছেন, ভোট ঘিরে কোনো ধরনের অনিয়ম যেন না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেবেন তারা।
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের আগের দিন মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে আসেন সিইসি।
তিনি বলেন, মন্ত্রী-এমপিদের নিবৃত্ত করা হয়েছে, প্রভাব বিস্তারের কারণে কিছু কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনের দিন কেউ যেন ভোটকেন্দ্রে অনুপ্রবেশ করতে না পারে এবং সেখানে যেন অনিয়ম না সে বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে।
ভোটের দিনে নির্বাচন কমিশের ভূমিকা নিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ভোটের দিন আমরা সতর্ক থাকব, কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটর করব। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দেশের ৪৯৫ উপজেলার চারধাপের নির্বাচন শুরু এবার। প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলার তফসিল ঘোষণার পর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা, নির্বাচন স্থগিত ও ধাপ পরিবর্তনের কারণে কিছু উপজেলা বাদ পড়ে। সব মিলিয়ে বুধবার ভোট হবে ১৪০ উপজেলায়।
এর মধ্যে ২২টি উপজেলায় ইভিএমে এবং বাকিগুলোতে প্রচলিত ব্যালট পেপারে ভোটের আয়োজন হয়েছে।
সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। এ পর্বে ভোটার আছেন মোট ৩ কোটি ১৪ লাখ ৬৮ হাজার ১০২ জন।
প্রথম ধাপের ভোটের আগের দিন নির্বাচনী এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে নেমেছে ৪১৮ প্লাটুন বিজিবি। ইতোমধ্যে ভোটের সব ধরনের আয়োজন 'শেষ হয়েছে' বলে সিইসি জানান।
তিনি বলেন, এ নির্বাচনের জন্য যা যা করণীয় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। যাতে নির্বাচনটা অবাধ, নিরপেক্ষ হয়। আইন শৃঙ্খলা সঠিকভাবে তদারকিতে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন ভবনে পরিস্থিতি মনিটর করা হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে বিভাগ, জেলা পর্যায়ে কমিশন মতবিনিময় সভা করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ও টহলের সুবিধার কথা বিবেচানয় নিয়ে ধাপে ধাপে ভোটের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ১৭ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন আর পার্বত্য এলাকায় সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে অন্তত ২১ জন আইন শৃঙ্খলা সদস্য নিয়োজিত থাকবেন বলে জানান সিইসি।
নির্বাচনে সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্টরা নিয়মকানুন প্রতিপালন করলে নির্বাচনটা সহজ হবে; তারা যদি বিশৃঙ্খলা তৈরি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা দুরূহ হবে। এবার কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং প্রার্থীসহ সবার সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। নির্বাচনটাকে স্বচ্ছ করার চেষ্টা করছি।
ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ের নানা ধরনের অভিযোগ খতিয়ে দেখে 'ব্যবস্থা নেওয়ার' কথা জানান সিইসি।
তিনি বলেন, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত করে কারো কারো প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। নির্বাচন যাতে প্রভাবিত না হয় সেজন্যে ইসির তরফ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হাবিবুল আউয়াল বলেন, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী অনেককে নিবৃত্ত করতে পেরেছি। হয়ত বা অনেকে এলাকায় আছেন। সরকারের তরফ থেকে যতদূর দেখেছি, দলীয়ভাবে হোক বা সরকারের পক্ষ থেকে হোক, যাতে নির্বাচনটা অবাধ, নিরপেক্ষ হয়, কেউ যেন প্রভাব বিস্তার না করেন, সে বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তটা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলায় দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের সুযোগ থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভোটকে আরো অংশগ্রহণমূলক দেখানোর কৌশলে এবার দলীয় মনোনয়ন বা প্রতীক দেয়নি। ফলে আওয়ামী লীগের যারা প্রার্থী হয়েছেন, তারা লড়ছেন স্বতন্ত্র হিসেবে।
সিইসি বলেন, এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। প্রভাব বিস্তার প্রতিরোধে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। দেখা যাক, কতটুকু হয়। প্রভাব বিস্তারের কারণে কিছু কিছু অ্যাকশন নিয়েছি। বিভিন্ন ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করা হয়, এজন্যে একজনকে ডাকিয়ে এনে বক্তব্য নিয়েছি, প্রার্থিতা বাতিল করেছি।
সিইসি বলেন, প্রতিদিনই মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারদের সঙ্গে কথা হচ্ছে।
এটা নিশ্চিত করতে হবে নির্বাচনটা যেন অবাধ, নিরপেক্ষ হয়। বিশেষ করে নির্বাচনের দিন কেউ যেন ভোটকেন্দ্রে অনুপ্রবেশ করতে না পারে এবং সেখানে যেন অনিয়ম না হয়-সে বার্তাটি রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের দেওয়া হয়েছে।
ইসি বেকায়দায় নেই, সতর্ক থাকব : মন্ত্রী এমপিদের প্রভাব, তাদের আত্মীয় স্বজনের প্রার্থিতা এবং আচরণবিধি লঙ্ঘনের নানা অভিযোগের মধ্যে নির্বাচন কমিশন 'কোনোভাবে বেকায়দায় নেই' বলে দাবি করেন সিইসি।
বিজিবি নেমেছে ভোটের মাঠে : তিনি বলেন, বেকায়দায় থাকার তো প্রশ্নই উঠে না। আমরা কোনো বেকায়দায় নেই। এটা একটা ভালো দিক- রাজনৈতিক সদিচ্ছা যখন বিকশিত হয়েছে, স্পষ্ট হয়েছে, সেটা নির্বাচনকে অবাধ নিরপেক্ষ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। তারপরও কোনো সংসদ সদস্য প্রভাব বিস্তার করছে কি না, যদি করে থাকেন অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করি। ভোটের দিন আমরা সতর্ক থাকব, কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করব।
শেষ পর্যন্ত প্রভাব বিস্তারের বিষয়টি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে না বলেও আশা করছেন কাজী হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেছেন, স্থানীয় নির্বাচনে উৎসাহ, উদ্দীপনা ও উত্তেজনা বেশি থাকে, সে কারণে কমিশনও সতর্ক রয়েছে।
স্থানীয় নির্বাচনে এবার দলীয়ভাবে অংশগ্রহণ না থাকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিইসি বলেন, "এটা কোনোভাবে নিয়ম রক্ষার ভোট নয়। নির্বাচনটা করতে হবে।
কে কোন দল করেন আমরা জানি না। নির্বাচন আয়োজন করা আমাদের কাজ। কে দাঁড়াল, কে দাঁড়াল না, আমাদের কাছে সাবাই প্রার্থী। আমরা দেখছি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। কেউ এল কি, কেউ এল না- তাও নয়। প্রতিটি উপজেলায় অন্তত চারজন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখতে যাচ্ছি না, প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। অবাধ হচ্ছে কিনা তা দেখব।
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম, অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ, ফরহাদ আহাম্মদ খান, জনসংযোগ পরিচালক শরিফুল আলমসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
এমটিআই